নিজেদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে জি-সেভেন জোটের নেতাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জ
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ জার্মানির বাভারিয়ায় জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনের আলোচনায় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের প্রসঙ্গই যে প্রাধান্য পাবে, তাতে সন্দেহ নেই।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা এবং জাপানের নেতারা এই সম্মেলনে বেশ কঠিন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন।
তারা এই যুদ্ধের মুখে ঐক্যবদ্ধ এবং সংকল্পে অটুট আছেন- এমনটাই দেখাতে চাইবেন। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আসলে পশ্চিমা জোটের মধ্যে অনেক টানাপোড়েন এবং অবসাদ দেখা যাচ্ছে।
কারও কারও মুখে, বিশেষ করে ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালিতে এমন প্রশ্ন শোনা যাচ্ছে- যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ হলেই ভালো হয় কি না, যদি এর মূল্য হিসেবে ইউক্রেনের অনেক সীমানা রাশিয়ার কাছে ছেড়েও দিতে হয়।
ইউরোপজুড়ে এক জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, অনেক ভোটার চান রাশিয়াকে শাস্তি দেয়ার চাইতে সাধারণ মানুষের জীবন-যাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায় যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেটাকেই বরং অগ্রাধিকার দেয়া হোক।
আবার অন্য অনেকের পরামর্শ হচ্ছে, রাশিয়ার সঙ্গে ভবিষ্যতে সম্পর্ক কিছুটা মেরামত করা হোক।
তবে যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড এবং তিনটি বাল্টিক দেশ এসব যুক্তির তীব্র বিরোধিতা করছে। তারা বলছে, রাশিয়ার সঙ্গে যে শান্তি চুক্তি ইউক্রেনের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, সেটা বরং ভবিষ্যতে আরও রুশ আগ্রাসনের বিপদ তৈরি করবে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সোমবার জি-সেভেনের এই শীর্ষ সম্মেলনে এক ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে বক্তৃতা দেবেন।
জি-সেভেনের নেতারা ইউক্রেন নিয়ে এরকম ঘোলাটে এক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজবেন এই সম্মেলনে। তারা হয়তো রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র এবং নিষেধাজ্ঞার প্রতিশ্রুতি দেবেন।
তারা রাশিয়ার কাছে এরকম একটা সংকেত পাঠানোর চেষ্টা করবেন যে, ইউক্রেনকে অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাওয়ার মতো কৌশলগত ধৈর্য তাদের আছে। নিজ নিজ দেশে রাজনৈতিক চাপ এবং মূদ্রাস্ফীতি নিয়ে যতই উদ্বেগ তৈরি হোক।
কিন্তু জি-সেভেনের নেতাদের সমস্যা হচ্ছে, তারা প্রত্যেকেই ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে আছেন, বিশেষ করে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য।
জ্বালানি এবং খাদ্যের দাম যেভাবে হু হু করে বাড়ছে, তাতে বিশ্বজুড়ে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে, বাড়ছে ক্ষুধার সমস্যা। অনেক দেশ এজন্যে পশ্চিমা দেশগুলোকে দায়ী করছে।
রাশিয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলোর যে উদ্বেগ, বিশ্বের দক্ষিণ গোলার্ধের অনেক দেশই তার সঙ্গে একমত নয়। তারা এটিকে একটি ইউরোপীয় যুদ্ধ হিসেবে দেখে এবং ভ্লাদিমির পুতিনকে একজন ঔপনিবেশিক আগ্রাসনকারী হিসেবে দেখানোর ব্যাপারটি তাদের অতটা নাড়া দেয় না।
বরং বিশ্বে যে এখন গ্যাস, তেলের দাম বাড়ছে, গম থেকে শুরু করে সারের সংকট দেখা দিয়েছে, সেজন্যে তারা যুদ্ধের পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞাকেও দায়ী করে।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে এই যে একটা ভিন্ন ধরনের বয়ান, সেটা কিভাবে ঠেকানো যায়, জি-সেভেন দেশগুলো এই সম্মেলনে তার একটা উপায় খোঁজার চেষ্টা করবে।
তারা দেখানোর চেষ্টা করবে যে, উন্নয়ন সাহায্য, জলবায়ু তহবিল বা ঋণের কিস্তি সহজিকরণের মাধ্যমেও তারা বিশ্বের দেশগুলোকে সাহায্যের চেষ্টা করছে।
জার্মানি এজন্যেই ভারত, ইন্দোনেশিয়া, সেনেগাল, আর্জেন্টিনা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার নেতাদের এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
কাজেই একদিকে এই পশ্চিমা নেতাদের দেখাতে হবে যে, তারা ইউক্রেনকে সাহায্য করতে সংকল্পবদ্ধ, অন্যদিকে বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকটের যে ধাক্কা, সেটা সামলাতেও তারা প্রস্তুত।
একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা তারা যে দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েছেন, সেটা ব্যাখ্যা করছিলেন এভাবে: “কিভাবে আমরা পুতিনের শাসন ব্যবস্থাকে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণার মধ্যে ফেলতে পারি, অন্যদিকে একই সঙ্গে কিভাবে আমরা বাকী বিশ্বের ওপর এর পাল্টা প্রভাব ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে পারি।”