‘কৃত্রিম শুক্রাণু’ তৈরি করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা, পুরুষ ছাড়াই জন্ম নেবে সন্তান!
কৃত্রিম উপায়ে শুক্রাণু তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন একদল চীনা বিজ্ঞানী। এমনকি এরইমধ্যে এই কৃত্রিম শুকাণুর সাহায্যেই সম্প্রতি জন্ম নিয়েছে ইঁদুর। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ইঁদুরের কৃত্রিম শুক্রাণু তৈরির এই সফলতা ভবিষ্যতে মানুষের ক্ষেত্রেও সফল হতে পারে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, আরো বেশি গবেষণায় এমনটা হতে পারে যে, পুরুষের শুক্রাণুও ল্যাবরেটরিতে একসময় তৈরি হবে। ল্যাবরেটরিতে উৎপন্ন শুক্রাণুর সঙ্গে মহিলাদের ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়েই সৃষ্টি করা যাবে সন্তান। ফলে একজন নারী চাইলেই কোন পুরুষের অংশগ্রহণ ছাড়াই সন্তান জন্মদান করতে পারবেন। আপাতদৃষ্টিতে খবরটি পড়ে একজন পুরুষের মন খারাপ হতেই পারে। তবে এই গবেষণার প্রকৃত সফলতা হতে পারে বন্ধ্যাত্ব সমস্যার সমাধান।
গবেষকদলের প্রতিনিধি ড. জিয়াহাও শা বলছেন, তাদের আবিষ্কার যদি মানুষের ক্ষেত্রে নিরাপদ হয় এবং সফল প্রয়োগ করানো সম্ভব হয়, তাহলে বিশ্বজুড়ে যে বন্ধ্যাত্ব সমস্যা আছে তার সুরাহা সম্ভব হবে।
গবেষকদলের আশা, পুরুষদের শুক্রাণুজনিত অক্ষমতার কারণে বন্ধ্যাত্বদূরীকরণ সম্ভব হবে তাদের গবেষণায়। এবং মহিলারা পুরুষের শরীরে সৃষ্টি শুক্রাণু ছাড়াই গর্ভধারণ ও সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হবেন। ল্যাবরেটরিতে সৃষ্টি কৃত্রিম শুক্রাণুর সাহায্যেই। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে সেল স্টেম সেল নামক জার্নালে।
যে পদ্ধতিতে গবেষণাটি চালান বিজ্ঞানীরা, তার নাম স্টেম সেল টেকনিক। যদিও পদ্ধতিটি পুরোনো। তবে এই পদ্ধতিতে নতুন সংযোজন বিজ্ঞানীদের গবেষণাকে সফল রূপ দিয়েছে। এই গবেষক দলের নেতৃত্বে রয়েছেন নানজিং মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির চিকিৎসক ড. জিয়াহাও শা।
যেভাবে তৈরি হল শুক্রাণু
চিকিৎসকরা প্রথমে ইঁদুরের ভ্রুণ থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করেন। সেটিকে বিশেষ কিছু রাসায়নিক মিশ্রণে রাখা হয়। মিশ্রণে রাখার পর স্টেম সেলটি ভেঙে গিয়ে জার্ম সেলে রূপান্তরিত হয়। বিজ্ঞানীদের মতে এটিই শুক্রাণু তৈরির প্রথম ধাপ। পরে সংগৃহীত টেস্টিকিউলার সেলের মধ্যে রাখা হয় ওই জার্ম সেলটিকে। ল্যাবরেটরিতেই টেস্টিসের সমতুল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য ওই টেস্টিকিউলার সেলের মধ্যে মেশানো হয় টেস্টোস্টেরন হরমোনও। এই পদ্ধতিতেতেই তৈরি হয় কৃত্রিম শুক্রাণু। তবে বিজ্ঞানীরা একে পুরোপুরি শুক্রাণু অবশ্য বলছেন না। পরিবর্তে নাম দিচ্ছেন ‘স্পার্মাটিডস’। যার মস্তকের অংশ শুক্রাণুর (স্পার্মের)মতো হলেও লেজের অংশটি থাকে না। এবং স্পার্মাটিডস সাঁতার কেটে এগিয়ে যেতেও অক্ষম।
এই স্পার্মাটিডসকেই ইঁদুরের ডিম্বাণুর মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। মানুষের কৃত্রিম গর্ভধারণের পদ্ধতি IVF-র (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজ়েশন) মতো করে। এক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটিকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ICSI (ইনট্রাসাইটোপ্লাজ়মিক স্পার্ম ইনজেকশন)। পরে ল্যাবরেটরিতেই স্মার্টাটিডস ও ইঁদুরের ডিম্মাণুর মিলনে কৃত্রিমভাবে তৈরি হয় ইঁদুরের নতুন ভ্রুণ। পরে এটি স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে থাকে।
এর আগেও অবশ্য ২০১১ সালে স্টেম সেল টেকনিকের প্রয়োগ হয়েছিল জাপানে। তবে তখন ইঁদুরের ভ্রুণের স্টেম সেল থেকে জার্ম সেল তৈরি করা গেলেও সেটিকে বিজ্ঞানীরা পুরুষ ইঁদুরের টেস্টিকলের মধ্যেই ইনজেক্ট করেন। তখন সফল হওয়া যায়নি। বর্তমান পদ্ধতিতে অবশ্য ICSI -এর মাধ্যমে ল্যাবরেটরিতেই স্মার্টাটিডস তৈরি করে তার সঙ্গে ইঁদুরের ডিম্বাণুর মিলন ঘটানো হয়।