টাইগারদের লঙ্কা বধ : ফাইনালের পথে এক পা
ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কা আর কঠিন কোনো প্রতিপক্ষ নয় বাংলাদেশের জন্য। তবে টি২০ ফরম্যাটে এ কথা বলা অতটা সহজ ছিলোনা। কারণ চারবারের মুখোমুখি লড়াইয়ে প্রতিবারই হতাশায় ডুবতে হয়েছে সাকিব-মুশফিকদের। তবে তরুন তুর্কী সাব্বিরের অগ্নিঝড়া ব্যাটিংয়ে অবশেষে পঞ্চম সাক্ষাতে লংকানদের ২৩ রানে হারিয়েছে মাশরাফি মতুর্জার দল। এর আগে চার সাক্ষাতেই বাংলাদেশকে বেশ বড় ব্যবধানে হারায় শ্রীলংকা।
এশিয়া কাপে রোববার নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করে ৭ উইকেটে ১৪৭ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ১২৪ রান করতে সমর্থ হয় ম্যাথুসের দল।
এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় জয়। এই জয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে এক পা দিয়ে রাখল টাইগাররা! ভারত যদি পরের দুটি ম্যাচ জিতে আর আমিরাত যদি সবগুলো ম্যাচ হেরে যায় এবং শ্রীলংকা যদি পাকিস্তানকে হারায় সেক্ষেত্রে ভালো রান রেট থাকলে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠবে টাইগাররা। তবে বাংলাদেশ যেভাবে খেলছে তাতে পাকিস্তানকে হারিয়ে সরাসরি ফাইনালে খেললে খুব বেশি বিস্ময়ের হবে না সেটা!
ম্যাচের শুরুটা মোটেও ভালো ছিলোনা টাইগারদের। দ্বিতীয় বলেই আউট হন মোহাম্মদ মিথুন। বাংলাদেশের স্কোরে তখনও কোনো রান হয়নি। দ্বিতীয় ওভারে আরেকটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কুলাসেকারার বলে ম্যাথুসকে ক্যাচ দেন সৌম্য সরকার।
এরপর ভালোই খেলছিলেন সাব্বির-মুশফিক জুটি। মুশফিক চুপচাপ থাকলেও অন্য প্রান্তে ঝড় তোলেন সাব্বির রহমান। তৃতীয় ওভারে কুলাসেকারাকে দিয়ে শুরু করেন এই হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান। সেই ওভারে ১৮ রান নিয়ে পাল্টা জবাব দেন সাব্বির। পরের ওভারেই রান নিতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়ে রান আউট হন মুশফিকুর রহমান।
মুশফিকের বিদায়ে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন সাব্বির। পেরেরার পরে ওভারে তিন চারসহ নেন ১৩ রান। ১৩তম ওভারে শেহান জয়সুরিয়াকে ছয় মেরে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করতে মাত্র ৩৮ বল খেলেন সাব্বির। অর্ধশতক করার পর আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেন সাব্বির। ওই ওভারে জয়সুরিয়াকে আরও দুটি চার মারেন সাব্বির। ১৬তম ওভারের শেষ বলে চিমারার বলে জয়সুরিয়ার হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় সাব্বিরের ইনিংস। আউট হওয়ার আগে ১০ চার ও তিন ছয়ে ৫৪ বলে ৮০ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
আগের দুই ম্যাচে রান না পাওয়া সাকিব এই ম্যাচে প্রথম থেকেই সাবধানী ইনিংস খেলেন। সাব্বির আউট হওয়ার পর দ্রুত রান নেয়ার তাগিদে বড় শট খেলতে গিয়ে ৩৪ বলে ৩২ রান করে আউট হন সাকিব। শেষের দিক মাহমুদুল্লাহর বলে ১১ বলে ২১ রানের কল্যাণে ৬ উইকেটে ১৪৭ রান তুলে বাংলাদেশ। শ্রীলংকার হয়ে দুশমন্ত চামিরা নেন ৩ উইকেট।
১৪৮ বড় লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে প্রথমেই উইকেট হারাতে পারত শ্রীলংকা। তাসকিনের বলে চান্দিমালের ব্যাট চুমু দেয়া বলটা তালুবন্দি করতে পারেননি স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকার। পরে অবশ্য ক্ষতিটা পুষিয়ে দিয়েছেন সৌম্যই। দলীয় ২০ রানে সাকিবের বলে উঁচিয়ে মারতে গিয়েছিলেন দিলশান। প্রায় কয়েক গজ দৌড়ে এসে অসাধারণ একটি ক্যাচ নেন সৌম্য।
তবে এরপর লংকান স্কোরবোর্ডে ৫৬ রান যোগ করেছেন দীনেশ চান্দিমাল ও শেহান জয়াসুরিয়া জুটি। দলীয় ৭৬ রানে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান চান্দিমাল। আউট হওয়ার আগে ৩৭ বলে ৩৭ রান করেন এই ব্যাটসম্যান। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন চান্দিমাল।
১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে থিসারা পেরেরাকে ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। পরের ওভারে জয়সুরিয়াকে স্টাম্পড করেন সাকিব। ২৬ রান করে আউট হন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এরপর মাত্র কয়েক বলের ব্যবধানে দলীয় ৯২ রানে মাশরাফির বলে সাব্বিরের তালুবন্দি হয়ে ফিরেন সিরিবর্ধনে।
লংকানরা সবচেয়ে বেশি যার উপর ভরসা করছিল সেই ম্যাথুস ফিরেন ১২ রান করে। দলীয় ১০২ রানে ষষ্ঠ উইকেট হিসেবে আউট হন এই ম্যাচের অধিনায়ক ম্যাথুস। এরপর কাপুগেদারা-সানাকারা চেষ্টা করলেও মুস্তাফিজ-অাল আমিনদের আঁটোসাঁটো বোলিংয়ে ২৩ রানে হারতে হয় শ্রীলংকাকে। বাংলাদেশের হয়ে আল আমিন তিনটি ও সাকিব দুটি উইকেট নেন। অনবদ্য ৮০ রানের সুবাদে প্রত্যাশিতভাবেই ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন সাব্বির রহমান।