পাকিস্তানকে গুড়িয়ে দিয়ে আবারো স্বপ্নের ফাইনালে বাংলাদেশ
রোমাঞ্চকর, অবিশ্বাস্য, গৌরবময়- কোনো বিশেষণেই যেন বিশেষায়িত করা যাচ্ছেনা এশিয়াকাপের বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচটি। ২০১২ সালের ফাইনালে এই পাকিস্তানের কাছেই মাত্র ২ রানে হেরে খুব কাছে গিয়েও হাত থেকে ফস্কে গিয়েছিল এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা। এবার সেই পাকিস্তানকে গুড়িয়ে দিয়েই আবারো এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ। আবারো চ্যাম্পিয়ন হবার স্বপ্নে বিভোর ১৬ কোটি ক্রিকেট পাগল জনতা। তাইতো বুধবার মিরপুরে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারানোর পর মিছিলের নগরীতে পরিনত হয় ঢাকা।
ফাইনালে আগামী ৬ মার্চ মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারতের মুখোমুখি হবে মাশরাফিবাহিনী। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে বিদায় ঘন্টা বাজল পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার। লিগ পদ্ধতির বাকি ম্যাচগুলো এখন নিতান্তই নিয়মরক্ষার।
বুধবার মিরপুরে টসে জিতে আফ্রিদি বল তুলে দিলেন মাশরাফির হাতে। কি ভুলটাই না করলেন বাঁচা-মরার ম্যাচে! তিন পেসার তাসকিন, আল-আমিন ও মাশরাফি এবং দুই স্পিনার সাকিব ও আরাফাত সানী যে ব্যাটসম্যানদের এতটা নাকানিচুবানি খাওয়াবে তা কল্পনাও করতে পারেননি আফ্রিদি!
প্রথম ১০ ওভারে পাকিস্তান মাত্র ৩৪ রান তোলে। বিনিময়ে হানায় চার ব্যাটসম্যান। যা তাদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের প্রথম ১০ ওভারে সর্বনিম্ন রান। প্রথম ১০ ওভারের পাশাপাশি পাওয়ার প্লেতেও সর্বনিম্ন রান তোলে পাকিস্তান (৩ উইকেটে ২০)।
সবমিলিয়ে শুরুতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে। পঞ্চম উইকেটে দৃশ্যপটের পরিবর্তন। শোয়েব মালিক ও শারফরাজ আহমেদ যোগ করেন ৭০ রান। তাতেই প্রতিরোধ। ইনিংসের ১৪-১৬তম ওভারে ৪৯ রান নিয়ে মিরপুরের প্রায় ২৫ হাজার দর্শককে শান্ত করে দেন মালিক-শরফরাজ।
শেষ দিকে আবারও তাদের গগণবিদারী চিৎকার। উপলক্ষ্যটা তৈরী করে দেয় বোলাররা। সচরাচর টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যানরা ঝড় তুলে বোলারদের কড়া শাসন করেন। তবে বাংলাদেশের জয়ের দিনে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা নতজানু। ৭ উইকেটে ১২৯ রানে থামে পাকিস্তানের ইনিংস।
ওভার প্রতি তাদের রান ৬.৪৫। যা টি-টোয়েন্টিতে একেবারেই বেমানান। সর্বোচ্চ ৫৮ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন শারফরাজ আহমেদ। ৪২ বলে ৫ চার ও ২ ছ্ক্কায় ইনিংসটি সাজান উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ৪১ রান আসে শোয়েব মালিকের ব্যাট থেকে।
মুস্তাফিজবিহীন বাংলাদেশের সেরা বোলার আল-আমিন হোসেন। ২৫ রানে নেন ৩ উইকেট। দুটি উইকেট নেন মুস্তাফিজের পরিবর্তে দলে আসা আরাফাত সানী। একটি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ ও মাশরাফি বিন মুর্তজা।
জবাবে জয়ের জন্য ১৩০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ওপেনিং জুটিতে শুরুটা ভাল করার আভাস দিয়েও শেষ পর্যন্ত তা করে দেখাতে পারেননি সৌম্য ও তামিম। কেননা দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ ইরফানের তৃতীয় বলে তামিম এলবি’র ফাঁদে পড়লে পুরো মিরপুর স্টেডিয়ামে নামে নিস্তব্ধতা।
দ্বিতীয় উইকেটে সাব্বির-সৌম্য যেভাবে খেলছিলেন তাতে মনেই হচ্ছিলনা তারা পাকিস্তানের মত কোন দলের বিপক্ষে খেলছেন। কিন্তু তাদের সেই অবিছিন্ন জুটিটি খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি শহীদ আফ্রিদি। নবম ওভারে আফ্রিদির প্রথম বলটি স্ট্যাম্প ছেড়ে এগিয়ে এসে খেলতে চাইলে তা প্রথমে তার প্যাডে লেগে পড়ে স্ট্যাম্পে চুমু খেলে ব্যক্তিগত ১৪ রানে ক্রিজ ছাড়া হন সাব্বির।
সাব্বিরের ফিরে যাবার পর তৃতীয় উইকেটে মুশফিক-সৌম্য জুটির খেলা দেখে মনে হচ্ছিল তারা দুজনই দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে পারবেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মোহাম্মদ আমিরের ইয়র্কার লেংথের বলটি সৌম্যর মাঝখানের স্ট্যাম্পে চিড় ধরালে ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি অর্ধশতক বঞ্চিত হন সৌম্য। আর বাংলাদেশও কিছুটা চাপে পড়ে।
সৌম্যর ফিরে যাবার পর তার পথ অনুসরণ করলেন মুশফিকও। ১৫ তম ওভারে শোয়েব মালিকের দ্বিতীয় বলটি রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ব্যক্তিগত ১২ রানে নিজের ইনিংসের ফুলস্টপ টানেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিক। এরপর টাইগারদের উপর আবার আমির আঘাত আর তাতেই ক্রিজ ছাড়া সাকিব আল হাসান। ১৮তম ওভারে আমিরের দ্বিতীয় বলে ব্যক্তিগত ৮ রানে বোল্ড আউট হয়ে দলকে জয়ের শঙ্কায় ফেলে দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন সাকিব।
তবে ক্রিজে এসেই পরপর দুই বলে মাশরাফির জোড়া চার সব শঙ্কা উড়িয়ে দেয়। ষষ্ঠ উইকেটে মাশরাফি-রিয়াদের ২৩ রানের দায়িত্বপূর্ণ ইনিংসে জয়ের বন্দরে নোঙ্গর ফেলে বাংলাদেশ। মাশরাফি খেলেছেন ১২ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ খেলেছেন ব্যক্তিগত অপরাজিত ২২ রানের ইনিংস।
বলহাতে পাকিস্তানের হয়ে মোহাম্মদ আমির ৩টি এবং মোহাম্মদ ইরফান, শহীদ আফ্রিদি ও শোয়েব মালিক নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।