যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য শেষ মুহূর্তে স্থগিত হলো চাঁদে নাসার নতুন মিশন
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা চাঁদে তাদের বহু প্রতীক্ষিত আর্টেমিস ওয়ান রকেটের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপন শেষ মুহুর্তে স্থগিত করেছে।
পঞ্চাশ বছরের বিরতির পর নাসা আবার চাঁদে মানুষ পাঠানোর জন্য এই উচ্চাভিলাষী কর্মসূচি নিয়েছিল।
নাসা এখন বলছে, তাদের আর্টেমিস রকেটের একটি ইঞ্জিনে কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছিল, যা যথাসময়ে মেরামত করা যায়নি।
সেপ্টেম্বরের দুই তারিখে এটির সম্ভাব্য উৎক্ষেপনের পরবর্তী দিন ঠিক করা হয়েছে।
নাসার আর্টেমিস মিশন মানুষের মহাকাশ অভিযানে এক নতুন যুগের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছিল।
নাসা দীর্ঘদিন ধরে আজকের দিনটির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু এই এসএলএস বা স্পেস লঞ্চিং সিস্টেমের ট্যাঙ্কে একটি ফাটল পাওয়া গিয়েছিল।
ফলে যে সময়ে লঞ্চ হওয়ার কথা ছিল, তাতে দেরী হয়।
এসএলএসের ইন্টার ট্যাংক হচ্ছে রকেটের একটি অংশ যা তরল হাইড্রোজেন এবং তরল অক্সিজেন ট্যাঙ্কগুলিকে সংযুক্ত করে।
এছাড়া এসএলএস-এর যে চারটি বিশাল RS-25 ইঞ্জিন রয়েছে তার একটিতেও একটি সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
রকেট ছোঁড়ার যে সময়টি ঠিক করা হয়েছিল সেই কাউন্ট ডাউনের আগে নাসার ইঞ্জিনিয়াররা সেটা মেরামতের প্রাণান্তকর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তা সফল হয়নি।
এরপরই নাসার রকেট লঞ্চ বিষয়ক পরিচালক চার্লি ব্ল্যাকওয়েল-টম্পসন ইঞ্জিনের সমস্যার কারণ দেখিয়ে আর্টেমিস-ওয়ানের পরিকল্পিত লঞ্চটি বাতিল করেন।
তবে এই মুহূর্তে নাসার সামনে দুটি বিকল্প তারিখ রয়েছে: ২রা সেপ্টেম্বর এবং ৫ই সেপ্টেম্বর৷
এই লঞ্চ উইন্ডোগুলি মূলত রকেটের ফ্লাইট টার্মিনেশন সিস্টেম (এফটিএস) দ্বারা পরিচালিত।
এই এফটিএস রয়েছে একটি ব্যাটারি যা ২০ দিন ধরে চলে।
গত ১৮ই আগস্ট এসএলএস-এর ইনস্টলেশনের সাথে সাথে এই এফটিএস কাজ করতে শুরু করে।
সোমবার যেহেতু রকেট লঞ্চিংটি বাতিল করতে হয়েছে, তাই এখন এই এফটিএস সরিয়ে ফেলতে হবে এবং একে নতুন করে চালু করতে হবে।
আজ সোমবার স্থানীয় সময় সকাল আটটা তেত্রিশ (বাংলাদেশ সময় সোমবার সন্ধ্যে ৬টা তেত্রিশ) মিনিটে রকেটটি উৎক্ষেপণের সময় নির্ধারিত ছিল।
এসএলএস নাসার তৈরি এপর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী মহাকাশ যান।
চাঁদে মানবজাতির অবতরণের পঞ্চাশ বছর পর আবার মানুষকে চন্দ্রপৃষ্ঠে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার এই প্রকল্পটির নাম আর্টেমিস।
এই রকেট একটি ক্যাপসুল বহন করবে। এই ক্যাপসুলের নাম ওরাইয়ন। এই ওরাইয়ন চাঁদের চারপাশে পরিভ্রমণ করবে।
তবে এই যাত্রায় কোন মানুষ থাকবে না। যদি সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চলে পরবর্তী মিশনগুলোতে মহাকাশচারীরা যোগ দেবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে এই এসএলএসটি উৎক্ষেপণ করার কথা ছিল।
চাঁদে মানুষ প্রথমবারের মতো পা রাখে ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো-১১ রকেটে চড়ে।
ওই ঘটনার অর্ধ শতাব্দী পরের এই উৎক্ষেপণ নাসার জন্য একটি বড় ঘটনা হতে যাচ্ছিল।
নাসা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা তাদের নতুন প্রযুক্তি ‘আর্টেমিস প্রোগ্রাম’ নিয়ে ফিরে আসছে যার প্রযুক্তি আধুনিক যুগকে সমৃদ্ধশালী করবে।
এই চন্দ্রাভিযানকে নাসা মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার একটা প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে।
তারা আশা করছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বা তার পরপরই তারা মহাকাশচারীদের মঙ্গল গ্রহে পাঠাবে।
“আপনি জানেন এখন পর্যন্ত বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ অন্য আরেকটি গ্রহে কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছে সেই দৃশ্য দেখেননি। তাই অনেক অর্থেই এটা তাদের জন্য প্রথমবারের মত চাঁদের বুকে ভ্রমণ হবে,” বলেছেন কেথ কাউয়িং। তিনি দ্যা নাসা ওয়াচ নামে ওয়েবসাইটের সম্পাদক যেটা নাসার খবর প্রকাশ করে।
তিনি বিবিসিকে বলেন, “আমরা ভিন্নভাবে করি, সবকিছুই তাৎক্ষণিক। কিন্তু এবার সবকিছুই হবে হাই ডেফিনেশন … এবং তাতে থাকবে শব্দ। কিন্তু দিন শেষে দেখা যাবে মানুষ ভিন্ন একটা গ্রহে হেঁটে বেড়াচ্ছে। আশা করছি এবার হয়ত এটা একটা বৈশ্বিক প্রচেষ্টা হবে। এটা এমন হবে না যে দুই দেশ নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছে।”
এসএলএস এবং ওরাইয়ন তৈরি করা হয়েছে এক দশক ধরে।
এই পর্যায়ে পৌঁছুতে প্রতিটির খরচ পড়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার।
ওরাইয়নকে এর আগে ২০১৪ সালে মাত্র একবারের জন্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কাছাকাছি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
কিন্তু তখন আগে থেকে তৈরি থাকা একটা বাণিজ্যিক রকেট ব্যবহার করা হয়েছিল।