উচ্চশিক্ষায় উৎসাহ প্রদানে ১.১ মিলিয়ন পাউন্ডের অনুদান প্রকল্প উদ্বোধন করলেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান

Spread the love

সাজু আহমদ :
টাওয়ার হামলেটে আবার ফিরে এলো বহুল প্রত্যাশিত এডুকেশন মেইনটেন্যান্স অ্যাওয়ার্ড (ইএমএ) এবং ইউনিভার্সিটি বার্সারি অ্যাওয়ার্ড।
লন্ডনের দরিদ্রতম বারার নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মৌলিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষায় উৎসাহিত করতে ১.১ মিলিয়ন পাউন্ডের অনুদান প্রকল্প উদ্বোধন করলেন. উল্লেখ্য টাওয়ার হামলেটে অর্ধেকের বেশি (৫১ ভাগ) বাচ্চারা দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে এবং লন্ডনের মধ্যে সর্বোচ্চ (৩৯ ভাগ) মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন।
 
টাওয়ার হ্যামলেটস বারার স্বল্প আয়ের পরিবারের ছেলেমেয়েরা যাতে সেকেন্ডারি স্কুল পর্যায়ের পরও লেখাপড়া চালিয়ে যায়, অর্থাৎ উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য এডুকেশন মেইনটেন্যান্স অ্যাওয়ার্ড (ইএমএ) এবং ইউনিভার্সিটি বার্সারি অ্যাওয়ার্ড নামের দু’টি আলোচিত স্কিমের আওতায় প্রতি বছর ১ দশমিক ১ মিলিয়ন পাউন্ডের আর্থিক অনুদান প্রদান করবে কাউন্সিল।
 
এই দু’টি অনুদান প্রকল্পের একটি ইএমএ স্কিমটি ২১ নভেম্বর সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান। এ উপলক্ষে বারার আইল অব গার্ডেন্স এর জর্জ গ্রীণস্ স্কুলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে মেয়র বলেন, “আমি শিক্ষা চালু রাখার ভাতা (ই এম এ) এবং ইউনিভার্সিটি বার্সারি অ্যাওয়ার্ড স্কিম ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত। এই দু’টি স্কীম তরুণদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য আর্থিক চ্যালেঞ্জগুলি কমাতে সাহায্য করবে।”
 
তিনি বলেন, “এই আর্থিক সহায়তা জীবনযাত্রার ব্যয়—সংকটের মধ্যেও তরুণদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে আত্মবিশ্বাস এবং উৎসাহ দিতে সহায়তা করবে।”
 
লন্ডনের অন্যতম অর্থনৈতিক রাজধানী ক্যানারি হোয়ার্ফ ও অভিজাত এলাকা লন্ডন সিটির কাছাকাছি অবস্থিত টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, “শিক্ষা আমার হৃদয়ের খুব কাছাকাছি এবং লাইফলং লার্নিং বা জীবনব্যাপি শিক্ষায় সহযোগিতা করা আমার প্রশাসনের অন্যতম একটি অগ্রাধিকার। তরুণদের তাদের পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছানোর জন্য সহযোগিতা করা এবং পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যত নেতা হওয়ার উপযোগী টুলস বা সরঞ্জাম তাদেরকে দেওয়া খুবই অত্যাবশকীয়।”
অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখেন জর্জ গ্রীণস্ স্কুলের প্রিন্সিপাল জন রাইডার। তিনি মেয়রের এডুকেশন মেইনটেন্যান্স এওয়ার্ড অনেক শিক্ষার্থীর জন্য ‘লাইফলাইন’ হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করেন এবং ২০১০ সালে বারার প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে লুৎফুর রহমান একই ধরনের যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তারই সুফলভোগী শিক্ষার্থীদের একজন মোহাম্মদ শাব্বির আহমদকে পরিচয় করিয়ে দেন।
 
এসময় শাব্বির আহমদ বলেন, “২০১০ সালে অর্থনৈতিক সংকটের চাপে পড়ে আমার অনেক সহপাঠিই মাঝপথে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে কাজে লেগে যায়। ঐ সময় আমাদের পারিবারের আর্থিক অবস্থাও ভালো ছিলো না। তখন ইএমএ—এর আর্থিক সহায়তা আমাকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে অনেক সাহায্য করে। আমি কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন করি এবং বারারই একটি স্কুলে এখন ম্যাথস এর টিচার হিসেবে কাজ করছি। মেয়রের ঐ সময়ের এই আর্থিক সহযোগিতা আমাকে লেখাপড়া চালিয়ে সাহায্য করেছিলো।
 
ইএমএ লঞ্চিং অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলের এডুকেশন এন্ড লাইফলং লার্নিং বিষয়ক কেবিনেট মেম্বার, ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর মাইয়ূম তালুকদার। তিনি বলেন, “আর্থিক পরিস্থিতি নির্বিশেষে প্রত্যেক তরুণের চমৎকার শিক্ষা লাভের সুযোগ পাওয়ার দাবিদার। এই মুহূর্তে যখন আমাদের অনেক পরিবার আর্থিক পরিস্থিতির সাথে সংগ্রাম করছে, তখন এই দুটি প্রকল্পের ঘোষণার মধ্য দিয়ে বারার তরুণদের সহযোগিতা করার জন্য টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলের প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন ঘটলো।”
 
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এই ইএমএ গ্র্যান্টের জন্য আবেদনকারী জর্জ গ্রীণ স্কুলের ২ জন শিক্ষার্থী জারা মিয়া ও ফারহিন আলম। তারা উভয়েই বলেছেন, “পার্টটাইম কাজে গিয়ে উপার্জন করে নিজেদের খরচ চালানোর চাপ বাড়ছে। ইএমএ এই চাপ থেকে অনেকটাই রক্ষা করবে। আমাদের অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসের পেছনে খরচ করার সুযোগ পাওয়া যাবে।
 
“মূদ্রাস্ফীতির কারণে সবকিছুর দাম বাড়ছে। অনেক শিশুর উপর এখন এই চাপ আসছে যে বাইরে গিয়ে কাজ করে পরিবারকে সহযোগিতা করা। কিন্তু লেখাপড়ার পাশাপাশি কিভাবে সম্ভব কাজ করা? লেখাপড়ার পাশাপাশি কিভাবে নিজের খরচ বহন করবে, কিভাবে পরিবারকেও সাহায্য করবে — এটা নিয়ে অনেক শিশুই এখন সংকটের মধ্যে আছে।”
বারার নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমানের এই উদ্যোগের ফলে প্রথম বছরে ১ হাজার ৬৫০ জন শিক্ষার্থী উপকৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
 
উল্লেখ্য, এক যুগ আগে ২০১০ সালে বাজেট কর্তনের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকার এডুকেশন মেইনটেন্যান্স এ্যালাউন্স বা ই এম এ স্কীমটি বাতিল করে দিলে, ঐ সময়ে টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান গোটা ইংল্যান্ডের মধ্যে সর্বপ্রথম স্বল্প আয়ের পরিবারের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় সহযোগিতা করতে এই স্কীমটি পূণঃস্থাপন করেছিলেন। প্রায় এক যুগ পর আবারও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল গোটা ইংল্যান্ডের মধ্যে একমাত্র স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী বারার তরুণদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে লেখাপড়ায় উৎসাহিত করতে সেই একই ধরনের তহবিল গঠন করে অন্যদের জন্য অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।
এই তহবিল দু’টি মেয়র লুৎফুর রহমানের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির একটি অংশ যা তরুণদের আরও বেশি সুযোগ পেতে সহায়তা করবে। বর্তমানে পারিবারিক বাজেটের উপর চাপ সৃষ্টিকারী জীবনযাত্রার ব্যয়—বৃদ্ধির সংকটের সময়ে এই আর্থিক সহায়তার গুরুত্ব অনেক বেশি।
 
মেয়রের শিক্ষা চালু রাখার ভাতা (ই এম এ বা এডুকেশন মেইনটেন্যান্স এলাউন্স) হল ২০২২/২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য যোগ্য শিক্ষার্থীদের তাদের পড়াশোনায় সহায়তা করতে এককালীন ৪০০ পাউন্ড আর্থিক সহায়তা প্রদান। ইএমএ—এর প্রথম বছরের জন্য ৫ লাখ পাউন্ডের একটি তহবিল প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, যা দিয়ে বারার ১ হাজার ২৫০ জন শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।
মেয়র এর ইউনিভার্সিটি বার্সারি অ্যাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বসবাসের খরচ মেটাতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করবে। এই বার্সারি বা অনুদান লাভের যোগ্য শিক্ষার্থীরা আবাসন, বই এবং শিক্ষা বা অন্য উপকরণ সহ তাদের স্নাতক অধ্যয়নের সাথে যুক্ত খরচের জন্য ১৫০০ পাউন্ডের অনুদান চেয়ে আবেদন করতে পারে। ৬ লাখ পাউন্ডের এই তহবিল প্রথম বছরে ৪০০ শিক্ষার্থীকে সহায়তা করবে।
উভয় স্কিমের জন্য অর্থ প্রদান সরাসরি তরুণদের কাছে দেয়া হবে এবং এই অর্থ সহায়তা পেতে কাউন্সিলের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
 
উভয় স্কিমের জন্য প্রথম রাউন্ডের আবেদন গ্রহণ ১ নভেম্বর ২০২২ থেকে শুরু হয়েছে, যা ১ জানুয়ারী ২০২৩ পর্যন্ত চলবে। আবেদনগুলি ই এম এ এবং ইউনিভার্সিটি বার্সারি স্কিমস ওয়েব পেজে (www.towerhamlets.gov.uk/lgnl/education_and_learning/school_finance_and_support/EMA-and-University-Bursary.aspx) আবেদন করতে হবে।

Spread the love

Leave a Reply