অবিশ্বাস্য রুট, অবিশ্বাস্য ইংল্যান্ড
বাংলা সংলাপ ডেস্ক:
আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিরাপদ স্কোর গড়েও জয় বঞ্চিত হয়ছিল ইংল্যান্ড। ক্রিস গেইল একাই ম্যাচটা ছিনিয়ে নেন ইংল্যান্ডের হাত থেকে। আর আজ ডি-কক, হাশিম আমলারা বোলারদের তুলোধুনো করে ২৩০ রানের লক্ষ্য দিলেন, চরম আশাবাদী লোকটিও সম্ভবত আশা করতে পারেননি ইংল্যান্ডের জয়।
তবে আজ হারলেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হতো রুট, মইন আলীদের। তাই এক অসাধ্য সাধন করলো ইংল্যান্ড। চরম নাটকীয়তার ম্যাচে রেকর্ড গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২ উইকেটের অসাধারন জয় তুলে নেয় তারা। আর তাতে গত ম্যাচের গেইলের ভূমিকা পালন করলেন জো রুট। গেইলের মতো তিনি সেঞ্চুরী করেননি ঠিক। তবে রুটের ৮৩ রানের মহত্ব কোন সেঞ্চুরীর চেয়ে বেশী বৈ কম নয়।
শুক্রবার ওয়াংখেড়া স্টেডিয়ামে টি২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবেচেয়ে বেশি রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার রেকর্ড গড়েছে ইংল্যান্ড। মাত্র দুই রাত আগে এই পিচেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৭ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন ক্রিস গেইল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচটা জিতে নিয়েছিল খুব সহজেই। তবে ওয়াংখেড়া যে এবারের বিশ্বকাপের জন্য বড় এক চমক নিয়ে বসেছিল তা আর সেদিন বুঝা যায়নি! তা বুঝা গেল শুক্রবার।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে রান বন্যা বইয়ে দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকানরা। খেলা মাঠে গড়ানোর পর থেকেই ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগানকে দক্ষিণ আফ্রিকানরা যেন বুঝিয়ে দিতে শুরু করেছিল যে তার সিদ্ধান্তটি ভুল। প্রথম ওভার থেকেই ইংলিশ বোলারদের বেদম পিটুনি দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। দুই ওপেনারের পাওয়ার হিটিংয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে ইংল্যান্ডের বোলার ও ফিল্ডাররা। একের পর এক বিগ হিটে পাওয়ার প্লেতে (প্রথম ৬ ওভারে) বিনা উইকেটে ৮৩ রান তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
ইংল্যান্ড প্রথম সাফল্যের দেখা পেয়েছে ইনিংসের ৭.১ ওভারে। ব্যক্তিগত ৫২ রান (২৪ বলে) করে মঈন আলীর বলে আউট হন দক্ষিণ অাফ্রিকার ওপেনার ডি কক। ততক্ষণে প্রোটিয়াদের স্কোরবোর্ডে লেখা হয়ে গেছে ৯৬ রান। এরপর দলীয় ১১৪, ১৩৩ ও ১৬৯ রানে আরও ৩ উইকেট হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু তাতে ইংলিশদের খুশি হওয়ার কিছু ছিল না। কেননা, দক্ষিণ আফ্রিকানরা তাদের মারমুখী ব্যাটিং অব্যাহতই রেখেছিলেন। শেষ অব্দি নির্ধারিত ২০ ওভারে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে ২২৯ রানের আকাশচুম্বী রান তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সর্বোচ্চ ৫৮ রান (৩১ বলে) এসেছে ওপেনার হাশিম আমলার ব্যাট থেকে।
এ ছাড়া ২৮ বলে ৫৪ রান করে জেপি ডুমিনি ও ১২ বলে ২৮ রান করে ডেভিড মিলার অপরাজিত ছিলেন। অবশ্য এবারই প্রথম নয়; টি২০ ক্রিকেটে এর আগেও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের কাছে এমন বেধড়ক মার খেতে হয়েছিল ইংলিশ বোলারদের। ২০০৯ সালের ১৫ নভেম্বর সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪১ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচটা ইংল্যান্ড হেরেছিল ৮৪ রানে। এবার কি ঘটে তাই ছিল দেখার বিষয়। ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা দেখিয়ে দিলেন ইতিহাসের ভিন্ন রূপও।
রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বল থেকেই মারমুখী হয়ে উঠেন দুই ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় ও অ্যালেক্স হেলস। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই পেসার রাবাদা ও ডেল স্টেইনকে পিটিয়ে মাত্র ২ ওভারেই ৪৪ রান তুলে ফেলেন তারা। তবে তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে হেলসকে আউট করে দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে স্বস্তি ফেরান পেসার কেইল অ্যাবোট। কিন্তু স্বস্তি আসলে অল্পতেই উবে গেছে তাদের। কারণ ৪.২ ওভারেই ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৭০ পেরিয়েছে ওই ১ উইকেট হারিয়েই। পরের বলেই অবশ্য রয়ের উইকেট তুলে নেন অ্যাবোট। এরপর ক্রিজে আসা জো রুট হয়ে উঠেন ইংল্যান্ডের জয়ের মূল নায়ক।
মাত্র ৪৪ বলে ৮৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন রুট। তিনি যখন আউট হয়েছেন ১৮.২ ওভারে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ২১৯ রান। জয়ের জন্য প্রয়োজন ১০ বলে ১১ রান। রাবাদার ওই ওভারে আরও ১০ রান তুলে ফেলে মঈন আলি ও ক্রিস জর্ডান জুটি। ফলে শেষ ওভারে ইংলিশদের প্রয়োজন ছিল মাত্র ১ রান। কিন্তু ওভারের প্রথম বলেই আউট জর্ডান। দ্বিতীয় বলে রান আউটের শিকার ডেভিড উইলি। তৃতীয় বলে কোনো রান নেই। ম্যাচে টানটান উত্তেজনা। ওই অবস্থায় চতুর্থ বলে সিঙ্গেল তুলে নেন মঈন আলী। ইংলিশরা দেখা পায় ঐতিহাসিক এক জয়ের।
টি২০ বিশ্বকাপে এটি সবেচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড হলেও আন্তর্জাতিক টি০ ম্যাচে এটি রান তাড়া করার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় রেকর্ড। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই ২৩১ রান তাড়া করে জয় চিনিয়ে নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।