সরকারকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল শুরু
বাংলা সংলাপ ডেস্ক:
সরকারকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধন করলেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এসময় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে উদ্বোধনী বক্তব্যে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। এসময় ‘কাটছে আঁধার আসছে আলো’ শীর্ষক শিরোনামে ২০ পৃষ্ঠার ছাপানো পুস্তিকা থেকে এক ঘণ্টা ১২ মিনিট বক্তব্য রাখেন তিনি।
এর আগে বেলা পৌনে এগারটায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন খালেদা জিয়া। এ সময় দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পতাকা উত্তোলনের সময় জাতীয় সংগীত এবং পরে দলীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
সরকারকে আলোচনার আহ্বান জানিয় খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সংলাপ চাচ্ছি না। এ দেশের মালিক জনগণ, তাদের জন্য সংলাপ চাচ্ছি। দেশের মানুষের জন্য কিছু দিতেই সংলাপের আহ্বান জানচ্ছি। সার্বিকভাবে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংলাপ চাচ্ছি। সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার পথ করে নিতে হবে। গণতন্ত্র রক্ষায় সব দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে ক্ষমতায় থাকা এবং না থাকা এখন বেহেস্ত ও দোজখের মতো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা ক্ষমতায় থাকে তারা সুবিধা ভোগ করে আর যারা ক্ষমতার বাইরে আছে, তারা শুধু নির্যাতনই পায়। সকলকে আশ্বাস দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আগামীতে বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে কাউকেই অহেতুক হেনস্তার শিকার হতে হবে না। তারা কারও প্রতি অবিচার করবেন না। দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অন্ধকারের পর্দা দুলে উঠেছে। অচিরেই আলো আসবে। ভবিষ্যৎ আমাদেরই, ইনশাল্লাহ।
ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী পদে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা ও দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ করার পরিকল্পনার কথাও জানান খালেদা জিয়া। এছাড়া ক্ষমতায় গেলে তার সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে ‘ভিশন ২০৩০’ শিরোনামের একটি খসড়া তুলে ধরেছেন তিনি। এতে ওই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় ভিশন’২০৩০ এর খসড়া পরিকল্পনা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অচিরেই তা চূড়ান্ত করে সেটি জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হবে। সুখী, সমৃদ্ধ, আধুনিক ও আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এ ভিশন’২০৩০ এর লক্ষ্য বলেও জানান খালেদা জিয়া।
তিনি আরো বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছেন। ইতিবাচক রাজনীতির ধারা প্রবর্তন করেছিলেন। মহান স্বাধীনতার মূল্যবোধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। কেবল অতীত নিয়ে পড়ে না থেকে ভবিষ্যৎমুখী উন্নয়নমূলক রাজনীতির ধারাও এদেশে তৈরি করেছিলেন জিয়াউর রহমান। জিয়ার সেই আদর্শ আমাদের পথ, এটাই আমাদের নীতি।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব এখন বদলে গেছে। যে যার মতো করে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মেধা ও দক্ষতা থাকা সত্বেও আমাদের দেশ এখনও পিছিয়ে রয়েছে। দেশে নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা নেই এখন। জাতি হিসেবে আমাদের বর্তমান এখন সংকটে আর ভবিষ্যৎ অন্ধকার-অনিশ্চিতে। আমরা ঐক্য-শৃঙ্খলা এ সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবে পিছিয়ে যাচ্ছি। যা হচ্ছে কেবলই যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে। এ পরিস্থিতিতে জাতিকে দেখাতে হবে নতুন দিক-নির্দেশনা। এই কাউন্সিল সেই পথ দেখাবে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি প্রধান।
খালেদা জিয়া বলেন, বিরোধী দলে থাকতেও বিএনপি দেশকে এগিয়ে নেওয়ার রাজনীতি করে এসেছে। গঠনমূলক সমালোচনা ও পরামর্শ দিয়ে এসেছে। কিন্তু কখনো ক্ষমতাসীন দলের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে, আমাদেরও শান্তিপূর্ণভাবে রাজনীতি করতে দেওয়া হয়নি। আমাদের নির্যাতনের মধ্যে রাখা হয়েছে। এ রকম অবস্থায় দেশ কখনো চলতে পারে না। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে না আসতে পারলে দেশ ঘোর অন্ধকারে চলে যাবে। এখনও বিএনপিই পারে শুধু ইতিবাচক ধারার রাজনীতির মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে। অন্ধকার থেকে দেশকে মুক্তি দিতে, আলোতে নিতে।
অনুষ্ঠানে তিন হাজার কাউন্সিলরের সঙ্গে ৪৫ হাজার প্রতিনিধি ও ১৬ হাজার অতিথির বসার ব্যবস্থা করে বিএনপি। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট, পাকিস্তান, ভারত, রাশিয়া, কুয়েতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দেন। তাদের কয়েকজন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে রয়েছেন, প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক শফিক রেহমান, মাহফুজউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, ইসমাইল জবিউল্লাহ, কবি আল মুজাহিদী, সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা রুহুল আমিন গাজী, এম এ আজিজ, এম আবদুল্লাহ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ প্রমুখ।
বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি ২০দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে ছিলেন-কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিম, জামায়াতের তাসনীম আলম, আবদুল হালিম, আন্দালিব রহমান পার্থ, শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ।