ভূমিকম্প থেকে যেভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ সোমবার তুরস্ক এবং সিরিয়ায় আঘাত হানা ৭.৮-মাত্রার ভূমিকম্প সম্ভবত এই দশকের সবচেয়ে মারাত্মক হতে পারে, যেখানে দুটি দেশে এপর্যন্ত মোট পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে।
তুরস্ক একটি ভূমিকম্প-প্রবণ দেশ। ১৯৩৯ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে, পাঁচটি বড় বড় ভূমিকম্পের সাক্ষী ছিল এই দেশটি।
উনিশশো সাল থেকে তুরস্কে ৭৬টির মতো ভূমিকম্পে ৯০,০০০-এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এসব মৃত্যুর অর্ধেকই ঘটেছে ১৯৩৯ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে।
অন্যান্য বড় মারাত্মক ভূমিকম্পের মধ্যে সবচেয়ে বড়টি ঘটেছিল দু’হাজার একুশ সালে, হাইতিতে।
সেই ঘটনায় ২,২০০ জনেরও বেশি মৃত্যু হয়, এবং ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে ৪,৩০০ জনেরও বেশি লোক মারা যায়। ২০১৭ সালে আরেকটি ভূমিকম্পে ৪০০ জনেরও বেশি লোক মারা গিয়েছিল।
ভূমিকম্পের পূর্বাভাস
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোথায় কোথায় ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা জানা সম্ভব হলেও কখন সেটি ঘটতে পারে তা আমরা এখনও ধারণা করতে পারিনা। তাহলে ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী কি সম্ভব?
“দুঃখজনক হলেও তা সম্ভব না,” বলছেন লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ভূমিকম্পবিদ ড. স্টিফেন হিকস।
“তবে আমরা যা করতে পারি তা হল ভূমিকম্পের পূর্বাভাস। এর একটি সম্ভাব্যতা আমরা দিতে পারি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মতো [জায়গায়], এবং জাপানে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়ার পদ্ধতি কার্যকর রয়েছে।”
প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে ভূমিকম্প থেকে নিরাপদ থাকার জন্য আপনি কী করতে পারেন এবং কী করা আপনার উচিত হবে না?
তৈরি থাকুন
যদিও ভূমিকম্প কখন আঘাত হানবে তা ভবিষ্যদ্বাণী করা সহজ নয়, তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনাকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে, অর্থাৎ ভূমিকম্প ঘটলে কী করতে হবে সে সম্পর্কে আপনার একটা পরিকল্পনা থাকা উচিত।
“আপনি যদি [ভূমিকম্প-প্রবণ] কোন এলাকায় থাকেন, তাহলে আপনার বাড়িতে একটি জরুরি প্যাক তৈরি রাখা ভালো,” বলেছেন ড. হিকস, এতে অতিরিক্ত খাবার পানি, একটি টর্চ, প্রাথমিক চিকিৎসার একটি কিট এবং কিছু শুকনো খাবার থাকতে হবে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের মতে, কিটটিতে কিছু নগদ অর্থ এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত নথিপত্রের কপি, যেমন আপনার ওষুধের তালিকা, ইত্যাদি রাখতে হবে।
যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন, যদি বিল্ডিংটি নিরাপদ হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে মার্কিন সরকারের একটি বৈজ্ঞানিক সংস্থা। এর পরামর্শ হচ্ছে, আপনি যেখানে আছেন সেখানে থাকলে আপনার আহত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তাই ভূমিকম্প ঘটার সময় দৌড়ে বাইরে যাওয়া কিংবা অন্য ঘরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
“ড্রপ, কভার এবং হোল্ড অন” অর্থাৎ বসে পড়ুন, কিছু একটার তলায় ঢুকে পড়ুন এবং সেভাবেই থাকুন হচ্ছে নিরাপদ থাকার মূলমন্ত্র, বিশেষজ্ঞরা বলছেন। হাঁটু গেড়ে বসে পড়লে মাথার ওপর কোন কিছু পড়ে যাওয়া থেকে আপনাকে রক্ষা করবে এবং প্রয়োজনে ঘরের ভেতরে আপনি সামান্য নড়াচড়া করতে পারবেন। কাছাকাছি অন্য কোন আশ্রয় না থাকলে কোন টেবিল বা ডেস্কের নিচে ঢুকে পড়তে পারেন।
ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনি সেখানেই থাকতে পারেন।
প্রথম দিকে মনে করা হতো দরজার ফ্রেমের নিচে থাকলে তা নিরাপদ হবে। কিন্তু এখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনি যদি তুলনামূলকভাবে পুরানো বাড়িতে থাকেন তাহলে সবচেয়ে ভাল হবে টেবিলের নিচে আশ্রয় নেয়া।
জানালা এবং ভবনের সামনের অংশ প্রায়ই প্রথম ধসে পড়ে। তাই এসব বিপদজনক জায়গা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
পরিস্থিতি নিরাপদ হলে বাইরে যাবেন
ঝাঁকুনি একেবারে থেমে যাওয়ার পর সাধারণত খোলা জায়গায় বের হওয়া নিরাপদ। কারণ আপনি যে বিল্ডিংয়ে থাকেন সেটিও ধসে পড়তে পারে।
কিন্তু আপনি যখন বাইরে থাকেন তখন যদি ভূমিকম্প হয়?
“যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন,” বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বিল্ডিং, বৈদ্যুতিক তার, ম্যান-হোল, জ্বালানি এবং গ্যাসের লাইন থেকে দূরে সরে গেলে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে।
গাছ, টেলিফোনের খুঁটি এবং বিল্ডিং থেকে দূরে খোলা জায়গায় চলে যাওয়াই ভাল, বলছেন তারা।
বিপদ থেকে দূরে থাকুন
আর্থকোয়েক কান্ট্রি অ্যালায়েন্স সংস্থার মতে, টেলিভিশন, বাতি, কাঁচ এবং বইয়ের আলমারি পড়ে গিয়ে বা উড়ন্ত বস্তুর কারণে বেশিরভাগ আঘাত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। এসব আঘাত এড়ানোর একটি উপায় হল ভারী আসবাবপত্রগুলোকে স্ট্র্যাপ দিয়ে পেছনের দেয়ালের সাথে আটকে রাখা।
আরেকটি সম্ভাব্য ঝুঁকি হল ভূমিকম্পের পর ফেটে যাওয়া পাইপ থেকে গ্যাস বের হওয়া।
ড. হিকস ১৯০৬ সালে সান ফ্রান্সিসকোর ভূমিকম্পের উদাহরণ দিয়ে বলছেন, ঐ ঘটনায় তিন হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল।
“ভবনের ঝাঁকুনি কিংবা ভবন ধসে পড়ে নয়, অধিকাংশ প্রাণহানি ঘটেছিল গ্যাস পাইপলাইন বিস্ফোরণের ফলে,” তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, আশেপাশের দাহ্য পদার্থ থেকে দূরে থাকুন।
নিয়মিত মহড়া
ড. হিকস ভূমিকম্পের প্রস্তুতি হিসেবে নিয়মিত মহড়ার গুরুত্বের উপরও জোর দিচ্ছেন।
“কোন কোন দেশে ভূমিকম্পের মহড়ার প্রচলন রয়েছে, যেখানে সবাইকে কী করতে হবে তার প্র্যাকটিস করতে হয়। তবে তুরস্কের এই অংশে সম্ভবত তেমন কোনো প্রচলন ছিল না, কারণ দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ভূমিকম্প হয়নি।”