পাকিস্তানকে হারিয়ে সেমিতে নিউজিল্যান্ড, অবসরের ঘোষণা আফ্রিদির
বাংলা সংলাপ ডেস্ক:
নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে ২২ রানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে নিউজিল্যান্ড। প্রথম দুই ম্যাচে ভারত ও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শেষ চারের পথে অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছিল ব্ল্যাক ক্যাপসরা। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ ‘টু’তে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। সমান ম্যাচে দুই পয়েন্ট নিয়ে এখনও রান রেটে এগিয়ে দুই নম্বরে রয়েছে পাকিস্তান। দুই ম্যাচে দুই পয়েন্ট করে নিয়ে পরের দুটি স্থানে আছে যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত।
মঙ্গলবার মোহালির বিন্দ্রা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার মার্টিন গাপটিলের ৮০ ও রস টেলরের ৩৬ রানের ইনিংসে ভর করে স্কোরবোর্ডে ১৮০ রান জমা করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ১৮১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান করতে সক্ষম হয় পাকিস্তান।
পাকিস্তানের দুই ওপেনার সারজিল খান ও আহমেদ শেহজাদ অবশ্য শুরুটা দারুণভাবেই করেছিলেন। তারা প্রথম ৩৩ বলে যোগ করেন ৬৫ রান। এর মধ্যে ৪৫ রানই এসেছিল সারজিলের ব্যাট থেকে। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে সারজিল আউট হওয়ার পরেই পথ হারায় পাকিস্তান। রান সংগ্রহের গতি কমে যায় অনেকখানি। ৮ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর ছিল ৭৯/১। পরের পাঁচ ওভারে পাকিস্তান সংগ্রহ করেছে মাত্র ২৫ রান। হারিয়েছে দুটি উইকেট। ১৩তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৩০ রান করেছেন শেহজাদ।
শেহজাদ আউট হওয়ার পর চাপের মুখে ব্যাট করতে নেমে আশা জাগিয়েছিলেন অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি। কিন্তু তিনিও খুব বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি উইকেটে। ১৬তম ওভারের প্রথম বলে আউট হয়েছেন ৯ বলে ১৯ রান করে।
আফ্রিদি আউট হওয়ার পরেই প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় পাকিস্তানের হার। শেষপর্যায়ে উমর আকমলের ২৪ ও শোয়েব মালিকের ১৫ রানের ইনিংস দুটি পাকিস্তানের হারের ব্যবধানই শুধু কমাতে পেরেছে। শেষদিকে, শোয়েব মালিকের ১৫ ও সরফরাজ আহমেদের ১১ রানের ইনিংস জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। শেষ পাঁচ ওভারে একটি বাউন্ডারিও হাঁকাতে পারেননি পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে দারুণ বোলিং করে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মিচেল সান্টনার ও অ্যাডাম মিল্ন। বাকি উইকেটটি নিয়েছেন টিম শোধি।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক উইলিয়ামসন। ওপেনিং জুটিতে পাওয়ার প্লে’র ছয় ওভারে ৫৫ রান তোলেন গাপটিল ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। অষ্টম ওভারের মাথায় উইলিয়ামসনকে (১৭) ফিরিয়ে কিউইদের প্রথম উইকেটের পতন ঘটান মোহাম্মদ ইরফান।
পরের ওভারেই কলিন মুনরোকে (৭) শারজিল খানের ক্যাচে পরিণত করেন শহীদ আফ্রিদি। তবে অপর প্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রাখেন গাপটিল। ১৫তম ওভারের মাথায় মোহাম্মদ সামির বলে বোল্ড হওয়ার আগে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৪৮ বলে ৮০ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। তাতে ছিল ১০টি চার ও ৩টি ছক্কার মার।
লুক রনকিকে (১১) সঙ্গে নিয়ে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৩২ রান যোগ করেন রস টেইলর। ২৩ বলে ৩৬ রান করে অপরাজিত থাকেন টেইলর। তার আগে ১৪ বলে ২১ রান করে আউট হন কোরি অ্যান্ডারসন। নির্ধারিত ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৮০ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করায় ব্ল্যাক ক্যাপসরা। পাকিস্তানের হয়ে দু’টি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ সামি ও শহীদ আফ্রিদি।
৪৮ বলে ৮০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ম্যান অব দ্য ম্যান পুরস্কার জেতেন নিউজিল্যান্ডের ওপেনার মার্টিন গাপটিল।
সুপার টেনের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল পাকিস্তান। তবে, নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে হারে আফ্রিদির দল। আর তৃতীয় ম্যাচেও হারের ধারা বজায় রাখে পাকিস্তান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেনের চতুর্থ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে হবে আফ্রিদি বাহিনীকে। তবে, টুর্নামেন্টে টিকে থাকার সম্ভাবনাও অনেকটাই শেষ হয়ে গেছে পাকিস্তানের।
তৃতীয় ম্যাচ শেষে আফ্রিদি জানান, সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিই হচ্ছে আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও আমরা পূর্বের ভুলগুলো করেছি। এটা দলের জন্য মোটেও ভালো হয়নি। আমি আমার ক্যারিয়ারের একেবারেই শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। অজিদের বিপক্ষে ম্যাচটির অপেক্ষায় রয়েছি।
অবসর প্রসঙ্গে আরও আফ্রিদি বলেন, আমি চেয়েছিলাম ২০১৬ সালের বিশ্বকাপ খেলতে। আমি সেটা পেরেছি বলে খুশি। পাকিস্তানের মতো দলের হয়ে এই পর্যায় পর্যন্ত ক্রিকেট খেলা সত্যিই দারুণ গর্বের বিষয়।