বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশে বাংলাদেশের যেসব ক্রিকেটারের বড় ভূমিকা
ডেস্ক রিপোর্টঃ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জয় পেল বাংলাদেশ।
এটি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট সিরিজে দ্বিতীয় হোয়াইটওয়াশ জয়। প্রায় দশ বছর আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এই ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ।
আজ ঢাকার মিরপুরে ১৬ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
শুরুতে ব্যাট করে বাংলাদেশ তুলেছিল ১৫৮ রান, জবাবে ইংল্যান্ড ১৪২ রান তুলতে সক্ষম হয় পুরো ২০ ওভার ব্যাট করে।
যেভাবে বাংলাদেশ জয় পেল
সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে শুরু থেকেই বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক ধরনের ব্যাট করে।
রনি তালুকদার ও লিটন দাস পাওয়ার প্লেত ৪৬ রান তোলে।
রনি আউট হয়ে গেলেও লিটন খেলা চালিয়ে যান এক পাশ ধরে রেখে।
লিটন দাস এই সিরিজে এই ম্যাচের আগে তেমন রান পাননি, আজ তুলেছেন নিজের ক্যারিয়ার সেরা টি-টোয়েন্টি স্কোর।
৭৩ রানে আউট হন লিটন দাস।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের নিয়মিত দর্শক শেখ মিনহাজ হোসেনের মতে, লিটনের শট দেখে একটা ‘ওয়াও’ বের হয় যা অনেকের ব্যাটিং দেখেই হয় না।
তিনি বলেন, “স্যাম কারেনের বলে লিটন একটা গ্লান্স করেছেন। পয়েন্ট আর গালির মাঝখান দিয়ে বল বের করে দিয়েছেন, বল ব্যাটে চুমু দিয়ে সাথে সাথে চার হয়েছে! কোন জোর ছাড়া বলটাকে স্রেফ বের করে দেয়া। এতো আরামে সেটা করেছেন যেন মাখনে আলতো করে ছুড়ি চালিয়ে একদম সমান দুই ভাগ করা।”
লিটন দাস আজ ৫৭ বলে দশটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
ক্রিকেট সাংবাদিক আফনান পিয়ালের মতে, “লিটন দাস বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেই কমফোর্ট জোন। লিটনের একেকটা শট দেখলে চোখে প্রশান্তির ঢেউ খেলে! যেন সারাদিন ধরে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।”
তৃতীয় ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন লিটন কুমার দাস
আগের ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটিং দেখে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ও ধারাভাষ্যকার নাসের হুসেইন বলেছিলেন , ‘ধীরে ধীরে বাংলাদেশের তারকা হয়ে উঠছেন শান্ত।’
আজও শান্ত ৩৬ বলে ৪৭ রানের একটি ইনিংস খেলেন তিনি।
তিন ম্যাচে ১৪৪ রান তুলে শান্ত এই সিরিজের সেরা রান সংগ্রাহক হয়েছেন। তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রেমিয়ার লিগেরও সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছেন।
শান্ত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেরও সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছেন।
তবে আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের ফিনিশিং ব্যাটিং ভালো হয়নি, শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র ২৭ রান তোলেন সাকিব, শান্তরা।
একসময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের স্কোর ১৭০-১৮০ এর মতো হবে, কিন্তু দুই উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রানে থামে বাংলাদেশ।
ম্যাচ ঘুরিয়েছেন মুস্তাফিজ
ইংল্যান্ড শুরুতেই অভিষিক্ত তানভীর ইসলামের বলে উইকেট হারালেও জস বাটলার ও ডাউইড মালান ৯৫ রানের জুটি গড়েন।
১৩তম ওভারে মুস্তাফিজ মালানের উইকেট নিয়ে নেন, এরপরের বলেই জস বাটলার রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান।
চার ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়েছেন মুস্তাফিজ।
মূলত তিনিই ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের হাত খুলে ব্যাট করতে দেননি।
তাসকিন আহমেদ ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডারে বেন ডাকেট ও মইন আলীর উইকেট নিয়ে নেন।
ইএসপিএন ক্রিকইনফোর ধারাভাষ্যে ম্যাক্স মোহাম্মদ বাংলাদেশের পেস বোলারদের পারফরম্যান্সের ক্রেডিট দেন ফাস্ট বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডকে। তিনি লিখেছেন, ডোনাল্ড দারুণভাবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং ছেলেরা তার অধীনে কাজ করে খুশি।
ম্যাচ শেষে সাকিব আল হাসান ও জস বাটলার দুজনই মুস্তাফিজুর রহমানের করা এক ওভারের প্রশংসা করেন।
মূলত ওই ওভারেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ইংল্যান্ড।
মালান ৪৭ বলে ৫৩ রান তোলেন।
বাটলারকে রান আউট করেন আগের ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।
সাকিব আল হাসান ১৯তম ওভারে বল হাতে নেন। তখন ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল দুই ওভারে ৩১ রান। সাকিব স্যাম কারানের উইকেট নেন এবং মাত্র চারটি রান দেন সেই ওভারে।
এতেই ইংল্যান্ডের হোয়াইটওয়াশ প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়।
এটি ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসের তৃতীয় হোয়াইটওয়াশ পরাজয়।
বাংলাদেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের এই হারে কেউ কেউ উইকেট নিয়ে সমালোচনা করলেও ম্যাচ শেষে জস বাটলার বলেন, উইকেটে বল ভালোভাবে ব্যাটে এসেছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটা বড় সময় সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, মুশফিকুর রহিমদের মতো ক্রিকেটারদের ওপর একটা নির্ভরতা ছিল, তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই জয়ে তুলনামূলক সিনিয়র ক্রিকেটার মধ্যে ছিলেন কেবল অধিনায়ক সাকিব।
তার নেতৃত্বে তরুণ ক্রিকেটাররা অবদান রেখেছেন এই জয়ে।