রাজা তৃতীয় চার্লসের ঐতিহাসিক অভিষেক অনুষ্ঠান শুরু
বাংলা সংলাপ রিপোর্টঃ রাজা চার্লস এবং কুইন কনসোর্ট ক্যামিলা বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে শোভাযাত্রা করে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে এসে পৌঁছার পর সেখানে অভিষেক অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।
লন্ডন সময় সকাল এগারোটায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধান, ধর্মীয় নেতা এবং কমনওয়েলথের নেতারা ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে এসে তাদের আসন গ্রহণ করেছেন।
লন্ডনে আজ সকালে বৃষ্টি পড়ছে, তবে তাতে করে রাজার অভিষেক অনুষ্ঠানকে মানুষের উৎসাহে কোন ঘাটতি পড়েনি। রাজা চার্লস এবং কুইন কনসোর্ট ক্যামিলাকে নিয়ে শোভাযাত্রা যখন বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে যাচ্ছিল, তখন হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাদের এক নজর দেখার জন্য।
এদিকে রাজতন্ত্র বিরোধী একটি গোষ্ঠী, রিপাবলিক আজ লন্ডনে বিক্ষোভ করেছে। পুলিশ ট্রাফালগার স্কোয়ারের কাছে এই গ্রুপের আধা ডজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবির আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর রাজা চার্লস আরেকটি শোভাযাত্রা সহযোগে বাকিংহাম প্রাসাদে ফিরে যাবেন।
বিশ্বের প্রায় ১০০টি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের উপস্থিতি ঘিরে সেন্ট্রাল লন্ডনে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অভিষেক অনুষ্ঠান প্রায় দুই ঘন্টা ধরে চলবে, যা সামনা সামনি বসে দেখছেন দুই হাজার তিনশ বিশেষ অতিথি। যার মধ্যে আছেন প্রিন্স হ্যারি, ডিউক অফ সাসেক্স, যিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুক্রবার একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে এসে পৌঁছেছেন।
প্রিন্স হ্যারির আত্মজীবনী প্রকাশিত হবার পরে এই প্রথম তাকে জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছে তার ভাই প্রিন্স উইলিয়ামের সাথে, যিনি প্রিন্স অব ওয়েলস।
ধারণা করা হচ্ছে, অভিষেক অনুষ্ঠান শেষ হবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রিন্স হ্যারি আমেরিকায় তার স্ত্রীর কাছে ফেরত যাবেন।
সত্তর বছর সিংহাসনে থাকা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তার ছেলে চার্লস রাজা হন। যুক্তরাজ্য ছাড়াও তিনি আরো ১৪টি দেশে তাকে রাজা হিসেবে মান্য করা হয়।
চার্লস যুক্তরাজ্য ও আরো ১৪টি রাষ্ট্রের রাজত্ব পান গত সেপ্টেম্বরে, যখন তার মা এলিজাবেথ সিংহাসনে বসার ৭০ বছর পর মারা যান।
অভিষেক অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য কয়েক মাস ধরে ব্যাপক পরিকল্পনা করা হয়। ১০৬৬ সাল থেকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে অভিষেক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
অভিষেকের আগের দিনও রাজাকে বেশ নির্ভার মনে হয়েছে। কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে প্রিন্স এবং প্রিন্সেস অব ওয়েলসকে নিয়ে মলে ঘুরে বেড়ান তিনি।
উনসত্তর বয়সী বারবারা এবং তার বান্ধবী পলিনা একটা ‘করোনেশন স্ট্রিট’ লেখা ব্যানার নিয়ে দর্শক সারিতে অবস্থান নিয়েছেন।
“আমরা আসলে ক্যাম্প করতে চাইনি, কিন্তু এত মানুষ এখানে, মনে হল যদি আগে থেকে ক্যাম্প না করি তাহলে আমরা সামনের দিকে যেতেই পারবো না,” বলেন মিজ বারবারা।
উইল্টশায়ারের বাসিন্দা কেইটি গর্ডন শুক্রবার তার দুই মেয়েকে নিয়ে মুখে রঙ করছিলেন। তিনি মনে করছেন, নতুন রাজা এবং রানি ‘দারুণ’ হতে যাচ্ছেন।
রাস্তা দিয়ে যারাই যাচ্ছিলেন তাদের মুখে রং লাগিয়ে দিচ্ছিলেন তারা। এ কাজের জন্য তারা কোন অর্থ নিচ্ছেন না।
” আমরা মুখে লাগানোর রং কিনেছি এবং ভাবলাম যে কেন আমরা অন্যদের মুখ রং দিয়ে এঁকে দেব না।”
শুক্রবার সন্ধ্যা হতেই শতশত তাবুর দেখা মিলতে থাকে অভিষেকের পথ ঘিরে। তারা সবাই হাজির হয়েছেন এই ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী হবার আশায়।
অভিষেক অনুষ্ঠানের মূল দায়িত্ব পালন করবেন ক্যান্টারবারির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি। অতিথি তালিকায় মার্কিন ফাস্ট লেডি জিল বাইডেন থেকে শুরু করে আছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ ও উপস্থাপক জুটি অ্যান্ট এবং ডেক।
ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেন্সকির স্ত্রী ওলেনা জেলেন্সকি শুক্রবার বাকিংহাম প্যালেসে অভিষেক পূর্ব অনুষ্ঠানে প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনের সাথে দেখা করেন।
এসময় চার্লসকে ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডির সঙ্গে খোশপল্প করতে দেখা যায়। একই সাথে তিনি ক্রাউন প্রিন্সেস অব ডেনমার্ক ম্যারির সাথে হাত মেলান ও তার গালে চুমু খান।
বিতর্ক তৈরী হয়েছে, যারা বাড়িতে থাকবে তাদেরও সেখান থেকে রাজার প্রতি আনুগত্য স্বীকারে শপথ নিতে হবে কি না। চার্চ অফ ইংল্যান্ড এটি পরিষ্কার করে বলেছে যে ব্যাপারটি ঐচ্ছিক।
রাজা চার্লস যখন অ্যাবেতে পৌঁছানোর পর অভিষেক অনুষ্ঠানে যে প্রার্থনা হবে সেখানে মূল বার্তা থাকবে – “আমি সেবা পেতে নয় বরং দিতে এসেছি।”
অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বিশেষ মূহুর্ত হল যখন রাজার মাথায় সেন্ট এডওয়ার্ডস মুকুট পরানো হবে, সেই মূহুর্তে অ্যাবের ঘন্টা বাজবে এবং পাশে থাকা হর্স গার্ড প্যারেড থেকে গান স্যালুট দেয়া হবে।
রাজার সাথে সাথে মুকুট পরানো হবে কুইন কনসর্ট ক্যামিলাকেও, এই জুটির দীর্ঘ ও কিছুটা জটিল সম্পর্কের পর অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এখন ‘কুইন ক্যামিলা’ হিসেবে সম্বোধন পাবেন।
অনুষ্ঠানটি যতোটা সম্ভব বৈচিত্র্যপূর্ণ করা হচ্ছে এবং আগের যে কোন অভিষেক অনুষ্ঠানের তুলনায় এবার সবচেয়ে বেশি ধর্মীয় বিশ্বাসের উপস্থিতি থাকছে। ইহুদী, মুসলিম, বৌদ্ধ এবং শিখ প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
বাইবেল থেকে পাঠ করবেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, যার ধর্ম হিন্দু। সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে ওয়েলস, স্কটিশ ও আইরিশ ভাষায়।
হাজার বছর ধরে চলা এই অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রথমবার কোন নারী বিশপ অংশ নেবেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে ব্রিটিশ সময় আনুমানিক দুপুর একটায়, এরপর রাজা চার্লস ও রানি ক্যামিলা স্বর্ণ খচিত ঘোড়ার গাড়ির করে বাকিংহাম প্যালেসে ফেরত যাবেন। প্রায় ১ মাইল পথ (১.৬ কিমি) পাড়ি দেয়ার সময় থাকবে ৪ হাজার সৈন্য এবং ১৯টি ব্যান্ডদল।
তারা যখন প্রাসাদে পৌঁছাবেন, তখন ঐতিহ্য মেনে ব্যালকনিতে রাজা ও রানির সাথে আর কারা থাকবেন সেটা এখনো জানা যায়নি। তবে তারা যখন ব্যালকনিতে দাঁড়াবেন, সে সময় আকাশে বিমানের একটা বিশেষ প্রদর্শনী থাকবে।
কিন্তু মেঘ ও বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় আবহাওয়া নিয়ে শঙ্কা থাকছে।