সৌদি আরব অপরিশোধিত তেল উত্তোলন কমাচ্ছে, বিশ্ববাজারে বাড়ছে দাম

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ানোর জন্য বিশ্বের তেল-উৎপাদনকারী দেশগুলো নিজেদের উৎপাদন কমিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে।

সৌদি আরব জানিয়েছে, জুলাই মাসে দৈনিক এক মিলিয়ন মানে ১০ লক্ষ ব্যারেল পরিমাণ তেলের উৎপাদন কমাবে দেশটি।

ওপেক প্লাস, অর্থাৎ বিশ্বের খনিজ তেল রপ্তানিকারক দেশসমূহ এবং তাদের মিত্রদের সংগঠন, বলছে ২০২৪ সাল থেকে দিনে তেল উত্তোলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৫ লাখ ব্যারেলের মত কমানো হবে।

বিশ্বের অপরিশোধিত তেলের প্রায় ৪০ শতাংশ ওপেক প্লাসভূক্ত দেশসমূহ উৎপাদন করে থাকে। এ কারণে তাদের সিদ্ধান্ত তেলের দামের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

ইতোমধ্যে সোমবার এশিয়ার বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম দুই দশমিক চার চার শতাংশ বেড়ে ব্যারেল প্রতি প্রায় ৭৭ ডলারে ঠেকেছে।

এদিকে, গত মাসে যুক্তরাজ্যে ডিজেলের গড় দাম লিটার প্রতি রেকর্ড ১২ পয়সা কমেছে।

জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে রোববার রাশিয়ার নেতৃত্বে তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো সাত ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠক করে।

রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক জানান, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ওপেক প্লাস মোট উৎপাদন কমিয়েছে। এর ফলে তেলের দৈনিক উৎপাদন ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেলে পৌঁছায়।

ওপেক প্লাস ইতিমধ্যেই দৈনিক দুই মিলিয়ন ব্যারেল তেলের উৎপাদন কমানোর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে, যা বিশ্ব ব্যাপী তেলের মোট চাহিদার প্রায় দুই শতাংশ।

“আলোচনার ফলে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো গেছে,” মি. নোভাক বলেন।

‘একটি সৌদি ললিপপ’

এপ্রিল মাসে, ওপেক প্লাস আকস্মিকভাবে দৈনিক ১৬ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানোর বিষয়ে সম্মত হয়, যা কার্যকর হয় মে মাসে।

এই পদক্ষেপের কারণে অল্প সময়ের জন্য দাম বাড়লেও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হয়নি।

রোববার, সৌদি জ্বালানি মন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন সালমান বলেছেন যে, প্রয়োজনে জুলাই মাসের পরও দশ লাখ ব্যারেল কম তেল উত্তোলনের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

তিনি একে ‘একটি সৌদি ললিপপ’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এর ফলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।

মধ্যপ্রাচ্যের ব্যবসা বিষয়ক সংবাদদাতা সামির হাশমির বিশ্লেষণ

দুই দিনের ওপেক প্লাস সভা শুরু হওয়ার আগে, প্রত্যাশা ছিল যে তেল উত্তোলন কমলে তার ফলে পরিশোধিত তেলের উৎপাদনও কমবে, যার ফলে দাম কিছুটা বাড়বে।

ধারণা করা হয়েছিল যে, বেশিরভাগ সদস্যই এই ধারণার বিরুদ্ধে। কারণ তেল উত্তোলনে কোন ধরণের কাটছাঁট হলে তেলের রাজস্ব আয়ে তার প্রভাব পড়তে পারে, যা সরাসরি তাদের অর্থনীতির ওপর ছাপ ফেলবে।

সৌদি আরবের প্রতিদিন এক মিলিয়ন ব্যারেল তেল স্বেচ্ছায় কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তটি অপ্রত্যাশিত ছিল, তবে এটি আশ্চর্য হওয়ার মতো নয়।

তেল রপ্তানিকারক দেশসমূহের জোটের নেতৃত্বে থাকা এবং বৃহত্তম রপ্তানিকারক হিসাবে, সৌদি আরব একমাত্র দেশ যে উৎপাদন কমাতে সক্ষম হয়েছে।

রিয়াদের দৃষ্টিকোণ থেকে, অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৮০ ডলারের উপরে থাকা জরুরী। সৌদি কর্মকর্তারা তেলের দাম বাড়াতে চান যাতে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলোতে বিলিয়ন ডলার ব্যয় অব্যহত রাখা যায়।

মোহাম্মদ বিন সালমান দীর্ঘদিন যাবত দেশটির অর্থনীতিকে তেল নির্ভরতার বাইরে নেয়ার চেষ্টা করছেন।

সৌদি আরবের এই পদক্ষেপ সামনের মাসগুলোয় জ্বালানি চাহিদার অনিশ্চিত পরিস্থিতির শঙ্কা তৈরি করে। বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে মন্দার আশঙ্কা অপরিশোধিত তেলের দামের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের মধ্যে তেল উৎপাদনকারীরা তেলের দর পতন এবং বাজারের অস্থিরতা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।

পশ্চিমারা অভিযোগ করছে ওপেক জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিশ্বে জ্বালানির দাম উর্ধ্বমুখী করে কার্যত বিশ্ব অর্থনীতিকে দুর্বল করছে।

সেই সাথে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দেশটির সাথে সম্পর্ক রাখার জন্যও ওপেককে দায়ী করা হয়।

জবাবে, ওপেক বলেছে যে গত এক দশকে পশ্চিমা দেশগুলোর মুদ্রানীতির কারণে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে এবং তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোকে তাদের এই প্রধান রপ্তানি পণ্যের মূল্য ধরে রাখতে বাধ্য করেছে।


Spread the love

Leave a Reply