মুম্বাই শহরতলিতে এক নারীর দেহ টুকরো টুকরো করে লোপাটের চেষ্টা
ডেস্ক রিপোর্টঃ মুম্বাই-এর লাগোয়া মীরা রোড এলাকায় এক নারীকে হত্যা করে তার দেহ টুকরো টুকরো করে ফেলার যে ঘটনা সামনে এসেছে, তার মূল অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেকে এইডস রোগী বলে পুলিশের কাছে জানিয়েছেন।
সতর্কতা: এই প্রতিবেদনের কিছু বিবরণ কারো কারো কাছ অস্বস্তিকর লাগতে পারে।
পুলিশের ডেপুটি কমিশনার জয়ন্ত বাজবেলে বলছেন, মীরা রোড হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত মনোজ সানে দেহাংশগুলি প্রেশার কুকারে রান্না করে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিলেন।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে মি. বাজবেলে জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে নিহত এবং অভিযুক্তকে লিভ-ইন পার্টনার বলে মনে হলেও তারা জানতে পেরেছেন যে তাদের দুজনের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বয়সের ফারাকের কারণে তারা সেটা কাউকে জানান নি।
গত বছর দিল্লিতে শ্রদ্ধা ওয়ালকর নামে এক তরুণীকে তার লিভ-ইন পার্টনার একই ভাবে হত্যা করে দেহাংশগুলি টুকরো করে ছড়িয়ে দিয়েছিল। তবে মুম্বাইয়ের ঘটনায় যেভাবে দেহ লোপাটের চেষ্টা হয়েছে, তা আরও নৃশংস।
মূল অভিযুক্ত মি. সানে গত তিন বছর ধরে সরস্বতী বৈদ্য নামে এক ৩২ বছর বয়সী নারীর সঙ্গে বসবাস করতেন। মিজ বৈদ্য বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলেও জেরায় দাবি করেছেন মি. সানে এবং পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে, এই আশঙ্কায় তিনি দেহটি টুকরো করে লোপাট করার চেষ্টা করছিলেন বলে জেরায় জানিয়ছেন ওই ব্যক্তি।
তবে পুলিশ মিজ বৈদ্যকে হত্যা এবং প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগেই গ্রেপ্তার করে এখন জেরা করছে।
প্রেশার কুকারে দেহাংশ সিদ্ধ
ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মনোজ বাজবেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মীরা রোডের একটি আবাসিক ভবনের বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পান যে চারদিন ধরে পচা গন্ধ বের হচ্ছে একটি ফ্ল্যাট থেকে। ওই ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙ্গে ঢুকতেই পুলিশ কর্মীদেরও প্রায় বমি উঠে আসে।
“তল্লাশি চালিয়ে রান্নাঘরে একটা বাসনে দেহাংশ পাওয়া যায়, আবার প্রেশার কুকারেও দেহাংশ ছিল,” জানিয়েছেন মি. বাজবেলে।
পুলিশ বলছে, প্রতিবেশীদের বয়ান অনুযায়ী মূল অভিযুক্ত সম্ভবত বেশ কিছু দেহাংশ নানা জায়গায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ পথ-কুকুরদের দেহাংশ খাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন। কিন্তু এই তথ্যের এখনও কোনও প্রমাণ পায় নি পুলিশ।
ধৃত মি. সানেকে আদালতে পেশ করা হয়। তাকে আট দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
ডেপুটি কমিশনার জয়ন্ত বাজবেলে বিবিসিকে বলেছেন, “ এই আটদিনে আমরা খুনের মোটিভ সম্বন্ধে খোঁজখবর করব। এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে নিহত মিজ বৈদ্য ২০১৪ সাল থেকে মি. সানের সঙ্গে থাকছিলেন। এবং এই ফ্ল্যাটে বাস করছিলেন বছর তিনেক।
“মিজ বৈদ্য যে একটি অনাথ আশ্রমে থাকতেন আগে, সেটাও নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের ফ্ল্যাট থেকে একটা ইলেক্ট্রিক করাত পাওয়া গেছে,” জানিয়েছেন মি. বাজবেলে।
কীভাবে জানা গেল এই হত্যার ঘটনা?
ওই আবাসিক ভবনের বাসিন্দারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে সাত তলার চারটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাই গত চার দিন ধরে পচা গন্ধ পাচ্ছিলেন। প্রথমে তারা ভেবেছিলেন ইঁদুর মরে পচে গেছে। কিন্তু বাকি তিনটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা কোথাও মরা ইঁদুর খুঁজে পান নি। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল মি. সানের ফ্ল্যাট।
এক প্রতিবেশী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি গন্ধ বের হওয়ার কথা জানাতে মি. সানের ফ্ল্যাটের দরজায় টোকা মারেন। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল, কিন্তু তিনি শুনতে পান যে কেউ একটা কিছু স্প্রে করছে। এরপরেই মি. সানে দরজা খোলেন।
প্রতিবেশীকে তিনি বলেন যে সন্ধ্যার মধ্যে দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে। তারপরে তিনি বেরিয়ে যান।
বিবিসি মারাঠি বিভাগের সহকর্মীরা বলছেন, “ওই প্রতিবেশীদের কাছ থেকেই পুলিশ খবর পায়। পরে আবাসিক ভবনের বাসিন্দারা, ফ্ল্যাটের মালিক আর পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকে।“
কিছুক্ষণ পরে মনোজ সানেও ফিরে আসে, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
একই ধরনের ঘটনা ৩০ বছর আগেও
দিল্লির এক বিজ্ঞানী স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হওয়ার পরে তার দেহ টুকরো করে ট্রাঙ্কে ভরে নেন। তারপরে ট্রেনে চেপে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে হায়দরাবাদে যান। সেখানে একটি লেকের ধারে স্ত্রীর দেহাংশগুলি একে একে কবর দিচ্ছিলেন। সেই সময়ে একটি কুকুর খাবারের সন্ধানে সেখানে গিয়ে একটা মানুষে হাত টেনে বার করে।
গতবছর দিল্লিতে শ্রদ্ধা ওয়ালকারকেও হত্যা করার পরে একইভাবে দেহ টুকরো করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বন-জঙ্গলের মধ্যে।
তিনটি হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই একই প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছে।
বিবিসির সৌতিক বিশ্বাস বলছেন যে শ্রদ্ধা ওয়াকার বা মনোজ সানে – দুটোই সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের ক্রাইম সিরিজ ‘ডেক্সটার’ থেকে শিখে করা হয়ে থাকতে পারে।
ওই সিরিজের মূল চরিত্র এক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের। তিনি রক্ত পরীক্ষা করতেন গবেষণাগারে আর রাতে হয়ে ওঠেন এক সিরিয়াল হত্যাকারী।
অপরাধ মনোবিজ্ঞানী অনুজা কাপুর বলছিলেন, “এধরনের হত্যাকাণ্ডগুলো যদি চাঞ্চল্যকর করে লেখা হয়, তাহলে মানুষের মনে মাস-হিস্টিরিয়া তৈরি করতে পারে। আবার এগুলোর প্রচার অন্য কাউকে খুন করতে অনুপ্রাণিতও করতে পারে।“
কিন্তু দিল্লির সেই সুটকেস হত্যাকাণ্ডের তদন্তকারী অফিসার দীপেন্দ্র পাঠক বিবিসিকে বলেছেন, “একই ধরনের হত্যাকাণ্ড সামনে আসছে ঠিকই। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলে মানুষ সিনেমা বা উপন্যাস থেকে এধরনের অপরাধ করার অনুপ্রেরণা বেশি পায়, যতটা না পায় আগে ঘটে যাওয়া অপরাধগুলি থেকে।“