‘যুদ্ধ এবার রাশিয়ার দিকে যাচ্ছে’ – মস্কোতে ড্রোন হামলার পর জেলেনস্কি
ডেস্ক রিপোর্টঃ মস্কোতে এক ড্রোন হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, যুদ্ধ এখন তাদের দিকে ফেরত যাচ্ছে।
দুই দেশের চলমান এই যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়ার সীমানার ভেতরে আক্রমণ হওয়াকে ‘স্বাভাবিক, অবশ্যম্ভাবী ও সম্পূর্ণ ন্যায্য’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন মি. জেলেনস্কি।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে রবিবার তিনটি ইউক্রেনিয়ান ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। এর মধ্যে দু’টি ড্রোন অফিস ভবনের ভেতরে পড়েছে।
এ ঘটনার জের ধরে শহরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত ভ্নুকভো বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ড্রোন হামলার পর রবিবার পশ্চিম ইউক্রেনের ইভানো-ফ্রাংকিভস্ক শহর থেকে এক বার্তায় মি. জেলেনস্কি বলেন যে ইউক্রেন শক্তিশালী হচ্ছে।
“তথাকথিত ‘বিশেষ সেনা অভিযানের আজ ৫২২তম দিন। রুশ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ভেবেছিল যে এই অভিযান সপ্তাহ দুয়েকের বেশি চলবে না।”
“ধীরে ধীরে যুদ্ধ রাশিয়ার মাটিতে ফিরে যাচ্ছে। আর এটিই স্বাভাবিক, অবশ্যম্ভাবী এবং সম্পূর্ণ ন্যায্য”, বলেন মি. জেলেনস্কি।
এর আগে রাশিয়ায় হামলা হলে কিয়েভকে সেগুলোর দায় নিতে দেখা যায় নি। এবার অনেকটা স্বভাববিরুদ্ধভাবেই এই হামলার কৃতিত্ব নিতে দেখা যাচ্ছে ইউক্রেনকে।
এই ধরণের ড্রোন হামলাকে রুশ জনসাধারণের কাছে বার্তা পাঠানোর একটি সুযোগ হিসেবেও দেখতে পারেন মি. জেলেনস্কি। রাশিয়ার জনগণের একটা বড় অংশ মনে করে যে ইউক্রেনে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।
এই ড্রোন হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে মস্কোর কর্তৃপক্ষ।
শহরের মেয়র সার্গেই সোবইয়ানিন জানান যে দু’টি অফিস ভবনের সামনের দিক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবি থেকে দেখা যায় যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু জানালা ভেঙ্গে গেছে। ভবনের দেয়ালের কিছু অংশ ভেঙ্গে পড়ে থাকতেও দেখা যায়।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের কাছে হামলার সময়ের পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলছিলেন, “আমরা একটা বিস্ফোরণের শব্দ শুনি, সেটি ছিল অনেকটা ঢেউয়ের মত। সবাই আমরা একসাথে লাফ দিয়ে উঠি।”
“তারপর সেখানে প্রচুর ধোঁয়া দেখতে পাই। প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। উপর থেকে শুধু আগুন দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল।”
ঘটনার পরপর ভ্নুকোভো বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। ওই বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল, এমন বিমানগুলোকে অন্য বিমানবন্দরের দিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ৫০০ কিলোমিটারের (৩১০ মাইল) মধ্যে অবস্থান মস্কো শহরের। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়া সেনা অভিযান শুরু করার পর থেকে মস্কোতে হামলা হওয়ার মত ঘটনা খুব কমই ঘটেছে।
তবে গত কয়েকমাসে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে তারা মস্কোতে একাধিক ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল মে মাসে ক্রেমলিনে ড্রোন হামলার অভিযোগ। মস্কো শহরের কেন্দ্রে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে লক্ষ্য করে দু’টি ড্রোন হামলা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ তোলে রুশ কর্তৃপক্ষ।
ইউক্রেন অবশ্য প্রেসিডেন্ট পুতিনকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাবি করেছেন যে ক্রাইমিয়াতেও ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা টাস রুশ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করেছে যে ক্রাইমিয়ায় হামলা চালানো ১৬টি ড্রোন ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে ও ৯টি ড্রোন অকেজো করে দেয়া হয়েছে।
ওদিকে, ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ বলেছে যে ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বে সুমি শহরে রাশিয়ার মিসাইল হামলায় একজন মারা গেছে ও পাঁচজন আহত হয়েছেন।
এছাড়া শনিবার দক্ষিণের ঝাপোরিশা শহরে হামলায় আরো দুইজন মারা গেছে বলে দাবি করছে ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ।
এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিচ্ছেন না।
সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে আফ্রিকান নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, আফ্রিকান এবং চীনা নেতাদের উদ্যোগ শান্তি প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।
তবে মি. পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনের বাহিনী যতক্ষণ পর্যন্ত আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ততক্ষণ কোন যুদ্ধবিরতি নয়।
প্রেসিডেন্ট পুতিন এই কথা বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মস্কোতে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে।
শান্তি উদ্যোগের ব্যাপারে এর আগে ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয়েই বলেছিল কোন পূর্বশর্ত মেনে তারা আলোচনার টেবিলে যাবে না।
কিয়েভ বলেছে, তারা তাদের দেশের কোন অংশই রাশিয়াকে ছেড়ে দেবে না।
তবে মস্কো বলেছে, সীমানা নিয়ে নতুন বাস্তবতা ইউক্রেনকে মেনে নিতে হবে।
গত বছর ইউক্রেনে হামলা করার পর রাশিয়া এখন দেশটির দক্ষিণ এবং পূর্বাঞ্চল দখল করে রেখেছে।