ইমরান খান গ্রেফতার, দুর্নীতির মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড
ডেস্ক রিপোর্টঃ একটি দুর্নীতির মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার সময় তিনি যেসব উপহার পেয়েছিলেন, সেগুলো বিক্রি করে পাওয়া অর্থ সম্পর্কে ঘোষণা না দেয়ার কারণে ইসলামাবাদের একটি আদালত এই রায় দিয়েছে।
তাকে অতিসত্বর গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোরও আদেশ দেয়া হয়।
রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে ইমরান খানের আইনজীবী ইনতাযার হুসেইন জানিয়েছেন, এ রায়ের কিছু পরই ইমরান খানকে লাহোরের জামান পার্ক এলাকার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে পাঞ্জাব পুলিশ । মি. খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের এক টুইট বার্তা উদ্ধৃত করে ডন পত্রিকা জানায়, তাকে কোট লাখপাত কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এই রায় ঘোষণার সময় মি. খান আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর আইনজীবীরা জানিয়েছেন, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
আদালত ইমরান খানকে এক লাখ রুপি বা প্রায় ৪৫১ লার জরিমানারও আদেশ দিয়েছে।
তোশাখানা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল যে, রাষ্ট্রীয় পদে থাকার সময় পাওয়া উপহার বিক্রি করে তিনি যে লাভ করেছেন, সেই বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি।
বর্তমান ক্ষমতাসীনদলের আইনপ্রণেতারা গতবছর এই অভিযোগ তুলেছিলেন। যদিও মি. খান বরাবরই এসব অভিযোগ করে আসছেন।
‘নীরবে ঘরে বসে থাকবেন না’
সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ – যার নাম আগে ছিল টুইটার – একটি আগে-রেকর্ডকৃত বিবৃতিতে ইমরান খান বলেন, “আমার শুধু একটাই আবেদন, নীরবে ঘরে বসে থাকবেন না।”
মি. খান ২০১৮ সালে নির্বাচিত হবার পর চার বছরেরও কম সময় ক্ষমতায় ছিলেন। পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পর্ক খারাপ হবার পর গত বছর একটি সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হন।
সত্তর বছর বয়স্ক ইমরান খানের বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ে বিচারক হুমায়ুন দিলাওয়ার বলেন, মি. খানের অসততা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ হয়েছে।
অন্যদিকে ইমরান খানের আইনজীবী ব্যারিস্টার গোহর খান বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচারকে খুন করা হয়েছে, এবং তাদেরেক যথাযথভাবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের কোন সুযোগ দেয়া হয়নি।
আদালতের রায় ঘোষণার পর কোর্ট ভবনের বাইরে সরকারপক্ষের কয়েকজন আইনজীবী সহ কিছু লোক “ইমরান খান চোর” বলে শ্লোগান দিতে থাকেন।
অন্যদিকে পাকিস্তানের দৈনিক ডন জানিয়েছে, এর আগে ইমরান খানকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশের চেষ্টা ঠেকাতে তার সমর্থকদের সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর যেরকম সংঘর্ষ হয়েছিল – এবার অবশ্য সেরকম কোন বাধা দেবার দৃশ্য দেখা যায়নি।
ইমরান খানের দল পিটিআই-ও এক বার্তায় বলেছে, তাদের নেতা গ্রেফতারের সময় কোন বাধা দেননি।
সেনাবাহিনীর নির্বাচন ‘ভীতি’
একদিন আগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিবিসি হার্ডটক অনুষ্ঠানে বলেছেন, চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ‘প্রচণ্ড ভীত’ হয়ে পড়েছে।
মি. খান বলেন, পাকিস্তান ‘অঘোষিত সামরিক আইনে’ চলছে এবং অভিযোগ করেন যে ‘ফ্যাসিবাদীরা’ একে ‘অন্ধকার যুগের’ দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
২০১৮ সালে মি. খান নির্বাচিত হবার পর চার বছরেরও কম সময় ক্ষমতায় ছিলেন। সংসদীয় অনাস্থা ভোটে গত বছর তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই কেবল স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে।
“দুর্ভাগ্যবশত ফ্যাসিস্টরা দেশটা দখল করে নিয়েছে, একইসঙ্গে তারা নির্বাচনের ভয়ে ভীত। আমি ভুগছি কারণ তারা জানে যে নির্বাচনে আমরা জয়ী হব। আর এই কারণেই তারা গণতন্ত্রকে টুকরো টুকরো করে ফেলছে,” বলেন তিনি।
হার্ডটক উপস্থাপক স্টিফেন স্যাকার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পর্ক শীতল হওয়ার পর থেকেই কি রাজনীতিতে ‘সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ’ নিয়ে তার সমালোচনা শুরু হয়েছে?
অভিযোগ অস্বীকার করে মি. খান বলেন, “তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পাকিস্তানের একমাত্র দল যেটি সামরিক একনায়কদের দ্বারা তৈরি হয়নি”। আর এ কারণেই দলটি ভেঙে দিতে তারা তৎপর হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অনেক সমালোচকই মনে করেন, মি. খান ক্ষমতাসীন হবার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সমর্থন পেয়েছিলেন। তবে উভয় পক্ষই এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে দেশটির সেনাবাহিনী সবসময় সামনে থেকে কিংবা পর্দার আড়ার থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে করেছে।
গত কয়েক মাসে ইমরান খানের দল পিটিআই ছেড়েছে অনেকে এবং অনেকে আটক হয়েছে। তবে মি. খানের দাবি তার দল অক্ষত রয়েছে।
“রাষ্ট্রযন্ত্র প্রকাশ্যে আমাদের বিরুদ্ধে গেলেও, আমাদের ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করলেও, সরকার থেকে বেরিয়ে আসার পর উপ-নির্বাচনে কীভাবে আমরা ৩৭টির মধ্যে ৩০টিতে জয়লাভ করলাম?”
সেনাবাহিনীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনাকারীদের আশা ছিল তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর তার দল দুর্বল হয়ে যাবে। “সাধারণত কিছু সময়ের জন্য ক্ষমতার বাইরে থাকলে এটিই ঘটে। কিন্তু যা ঘটেছিল তারপর উল্টো দলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে,” বলেন মি. খান।
“তারা সব ধরনের চেষ্টা করেছে। নারী ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীসহ তারা দশ হাজার মানুষকে জেলে ঢুকিয়েছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহ, সন্ত্রাসবাদ এবং হত্যায় মদদ দেওয়াসহ প্রায় ২০০টি অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে।