প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আয়কর বিরবণী প্রকাশ

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্ক:

পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারির সূত্র ধরে শুরু হওয়া বিক্ষোভের মুখে নিজের আয়কর বিবরণী প্রকাশ করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। রোববার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র ক্যামেরনই প্রথম নিজের আয়কর বিবরণী প্রকাশ করলেন।

পিতার অফশোর কোম্পানী থেকে লাভবান হয়েছেন, এমন স্বীকারোক্তির পর পিতার সম্পদের সুবিধাভোগী হিসেবে ক্যামেরনের পদত্যাগের দাবি ওঠে। শনিবার মধ্য লন্ডন থেকে ট্রাফালগার স্কয়ার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে ক্যামেরন বিরোধী বিক্ষোভ। পিতার সঙ্গে ক্যামেরনের আর্থিক সম্পর্কের বিস্তারিত প্রকাশ করার দাবি তোলেন পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় সদস্যরা।

এসব দাবির মুখে নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিয়ে রোববার নিজের আয়কর বিবরণীর বিস্তারিত প্রকাশ করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।  অবশ্য বিবরণী প্রকাশ করার আগেই ক্যামেরন দাবি করেছিলেন, নিজের আর্থিক বিষয়গুলো নিয়ে ওঠা অভিযোগের জবাব তিনি ভালোভাবেই দিতে পারবেন।

রোববার প্রকাশিত বিবরণীতে দেখা গেছে, ক্যামেরন তার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে ৩ লাখ পাউন্ড ছাড়াও মায়ের কাছ থেকে উপহার হিসেবে আরো ২ লাখ পাউন্ড পেয়েছেন। সমালোচকরা প্রশ্ন তুলছেন- মায়ের কাছ থেকে পাওয়া উপহারও কি অফশোর কোম্পানির তহবিলের অংশ কি-না।

তিন পৃষ্ঠার আয়কর বিবরণী থেকে জানা যায়, ক্যামেরন ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মোট ১১ লাখ পাউন্ড আয় করেছেন। আয়কর দিয়েছেন ৪ লাখ পাউন্ড। এর মধ্যে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ক্যামেরনের দুই লাখ ৩০৭ পাউন্ড আয়ের উপর ৭৫ হাজার ৮৯৮ পাউন্ড কর দিয়েছেন।

তার আয়ের মধ্যে আছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া বেতনের এক লাখ ৪০ হাজার ৫২২ ডলার, নিজ দল টোরি পার্টি থেকে ভাতা হিসেবে পাওয়া নয় হাজার ৮৩৪ পাউন্ড, লন্ডনের তার পারিবারিক বাড়ির অংশের ভাড়া বাবদ ৪৬ হাজার ৮৯৯ পাউন্ড এবং ব্যাংকে জমানো অর্থের সুদ তিন হাজার ৫২ পাউন্ড।

শনিবার ক্যামেরন স্বীকার করেছেন তিনি ভাল কোন সপ্তাহ পার করছেন না। কারণ তিনি মনে করছেন পরিস্থিতি আরো ভালভাবেই সামাল দেয়া উচিত ছিল। যদিও প্রথমে তিনি বলেছিলেন, এটি একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। ক্যামেরন এখন বলছেন, আমি জানি শেখার অনেক কিছু আছে। আমি এসব থেকে শিখবো। তবে আপনারা ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট অথবা নামহীন উপদেষ্টাদের দায়ী না করে আমাকে অপবাদ দিন।

কর ফাঁকি দেয়ার লক্ষে বিশ্বের অনেকেই অফশোর কোম্পানিগুলোতে তাদের অর্থ মজুদ করেন। পানামা ভিত্তিক ল ফার্ম মোসাক ফনসেকা এসব ফার্মকে সহায়তা করেছে। বিশ্বের উল্লেখযোগ্য অনেকের মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন থেকে শুরু করে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীও রয়েছেন। পুতিন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করলেও আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড গানলাকসন ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন।

মোস্যাক ফনসেকার ফাঁস হওয়া নথিগুলোতে অফশোর করস্বর্গগুলোতে আইনি প্রতিষ্ঠানটির দুই লাখেরও বেশি কোম্পানি তৈরির বিস্তারিত তথ্য আছে।  এসব কোম্পানির কয়েকটি মালিক হিসেবে ক্যামেরনের প্রয়াত পিতার নাম প্রকাশ পেলেও ক্যামেরনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ওঠেনি।

কিন্তু বৃহস্পতিবার ক্যামেরন জানান, তার পিতার অফশোর ট্রাস্টে তার কিছু শেয়ার ছিল এবং সেগুলো থেকে তিনি লাভবান হয়েছিলেন। চূড়ান্তভাবে একথা স্বীকারের পর বিক্ষোভকারীরা তার পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে।

ক্যামেরন অবশ্য দাবি করেন, কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য নয়, বরং ডলার-নিয়ন্ত্রিত বাজারে ওই শেয়ারগুলো বিনিয়োগ করেছিলেন তারা এবং নিজের বিনিয়োগ থেকে আসা আয়ের উপর প্রযোজ্য সব আয়কর পরিশোধ করেছেন বলে তিনি দাবি করেছেন। এমনকি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ২০১০ সালের জানুয়ারিতেই ওই শেয়ারগুলো বিক্রি করে দেন তিনি।


Spread the love

Leave a Reply