মার্কিন দূতাবাসে ‘আশ্রয় চেয়ে’ বাসায় ফিরলেন ড. ইউনূস ইস্যুতে আলোচিত ডিএজি এমরান
ডেস্ক রিপোর্টঃ বাংলাদেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে একটি খোলা চিঠির প্রতিবাদে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আলোচনায় আসা সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া শুক্রবার ঢাকায় থাকা মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে ‘আশ্রয় চাওয়ার’ পর বাসায় ফিরে গেছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাত টার দিকে ঢাকায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে গিয়ে দেখা যায়, দূতাবাসের প্রবেশমুখে থাকা একটি কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়েছে তাদের। মি. ভূঁইয়ার সাথে ছিলেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। ওই কক্ষটি রাস্তা থেকেই দেখা যায়।
তবে দূতাবাসে গিয়েও তাদের সাথে কথা বলা যায়নি। দূতাবাসের নিরাপত্তা প্রহরীরা জানান, এবিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
দূতাবাসের বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। সেখানে সংবাদকর্মীদের প্রবেশের অনুমতি নেই বলেও দায়িত্বরত সদস্যরা জানান।
এছাড়া, মি. ভূঁইয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোন প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
এরআগে, দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকাকে একটি লিখিত বার্তায় এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া জানান, তিনি তার পরিবারের সদস্যসহ আমেরিকান দূতাবাসে আশ্রয় নিতে গেছেন। গত চার-পাঁচ দিন ধরে তিনি বিভিন্ন ধরণের হুমকির শিকার হয়েছেন বলেও ওই বার্তায় দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্রে বলা হচ্ছে , কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে গেছেন মি. ভূঁইয়া।
এই প্রতিবেদনগুলোতে মি. ভূঁইয়াকে উদ্ধৃত করে বলা হচ্ছে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যে তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে, তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। পরে তাকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করা হলে তিনি বাসায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
গত ৫ই সেপ্টেম্বর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি (এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া) অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন ডিএজি (ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল)। তিনি যদি সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন, তাহলে তাঁকে হয় পদত্যাগ করে কথা বলা উচিত, অথবা অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমতি নিয়ে কথা বলা উচিত। তিনি সেটি করেননি। তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন।’
শুক্রবার আখাউড়ায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, “উনাকে বরখাস্ত করা হয়েছে”।
সম্প্রতি নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে ১৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি একটি খোলা চিঠি দেয় যেখানে ড. ইউনূসকে ‘বিচারিক হয়রানি’ করা হচ্ছে বলে নোবেল বিজয়ী ও নেতারা উল্লেখ করেন।
এর প্রতিবাদ করে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদ বিবৃতিতে ‘স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে’ আলোচনায় আসেন এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া।
এ ঘটনার পর গত সাতই সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির এক আদেশের মাধ্যমে এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার নিয়োগাদেশ বাতিল করে তাকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মি. ভূঁইয়া বলেন, রবিবার অর্থাৎ ৩রা সেপ্টেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি বার্তা পাঠানো হয় যেন কর্মকর্তারা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে দেয়া বিবৃতির প্রতিবাদ লিপিতে যেন পরদিন স্বাক্ষর করেন।
মি. ভূঁইয়া এই প্রতিবাদ লিপিতে স্বাক্ষর করেন নি। কারণ তার মতে, অধ্যাপক ইউনূস ‘বিচারিক হয়রানির’ শিকার হচ্ছেন।
“শ্রম আদালতে মামলা কীভাবে চলে, মামলার গতি কেমন থাকে – তা আমরা জানি। এই মামলাটি (মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা) অস্বাভাবিক গতিতে চলছে”, বলেন মি. ভূঁইয়া।
‘একান্ত ব্যক্তিগত’ মনোভাব থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
বিবিসি বাংলাকে মি. ভূঁইয়া বলেন, “বিশ্বের জীবিত যারা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আছেন তাদের অধিকাংশ এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ অনেকে অধ্যাপক ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। মূল বিবৃতির কারণে বিচার সরাসরি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না।”
“ড. ইউনূস শুধু বাংলাদেশেরই নয়, বিশ্বেরও সম্পদ। মূল বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে তিনি ‘বিচারিক হয়রানি’র শিকার হচ্ছেন। আমার কাছেও বিষয়টা সেরকমই মনে হয়।”
তার এই বক্তব্যের পর তার কার্যালয়ের সামনে থেকে তার নেমপ্লেট খুলে ফেলেন তার সহকর্মীরা।
পরবর্তীতে আইনমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের’ অভিযোগ করেন।
সাতই সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘এমরান আহম্মেদ ভূঁইয়ার নিয়োগাদেশ জনস্বার্থে বাতিলক্রমে তাঁকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলা পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো’।