সিরিয়ায় ইরানের অস্ত্র ভান্ডারে বিমান হামলা চালিয়েছে আমেরিকা
ডেস্ক রিপোর্টঃ সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে থাকা ইরানের রেভ্যুলিউশনারি গার্ডের দুটি অস্ত্র ও গোলাবারুদের গুদামে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, ইরাক ও সিরিয়ায় থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর চালানো সাম্প্রতিক হামলার জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মার্কিন বিমান হামলাগুলো “ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাত থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ভিন্ন।”
ইরান তাৎক্ষণিকভাবে কোন মন্তব্য করেনি।
শুক্রবার ইরাকের সীমান্তের কাছে আবু কামাল শহরে স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে চার টার দিকে এই হামলা চালানো হয়। এই হামলায় কেউ হতাহত হয়েছে কিনা তা এখনো জানা যায়নি।
এক বিবৃতিতে মি. অস্টিন বলেন, “গত ১৭ই অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক সদস্যদের লক্ষ্য করে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর চালানো চলমান ও ব্যর্থ হামলার জবাবে এই হামলাগুলো চালানো হয়েছে।”
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকে মার্কিন ও যৌথবাহিনীর সদস্যরা ইরাকে ১২ বার এবং সিরিয়ায় চার বার হামলার শিকার হয়েছে।
পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২১ জন সেনা সদস্য সামান্য আহত হয়েছেন।
হামলার জন্য আমেরিকার কর্মকর্তারা ওই এলাকায় থাকা ইরানের ছায়া গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেছে। ইরান গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাস এবং লেবাননে পরিচালিত হেজবুল্লাহকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করে থাকে।
মি. অস্টিন বলেন, “মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ইরান সমর্থিত এসব হামলা অগ্রহণযোগ্য এবং এগুলো অবশ্যই বন্ধ করা উচিত।”
“যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইরানের ছায়া গোষ্ঠীগুলোর এ ধরনের হামলা চলমান থাকলে, আমাদের জনগণের নিরাপত্তায় আমরা আরো পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবো না।”
বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরআবদোল্লাহিয়ান হুশিয়ার করে বলেন, গাজায় সহিংসতা চলতে থাকলে ওই এলাকায় যে আগুন জ্বলছে তার থাবা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে না ওয়াশিংটন।
চলতি সপ্তাহগুলোতে ওই এলাকায় যুদ্ধ জাহাজ ও যুদ্ধ বিমান পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরো ৯০০ সেনাকে ওই এলাকায় পাঠানো হচ্ছে।
এরআগেও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাটিগুলো হামলার মুখে পড়েছে, এর জবাবে হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্রও।
গত মার্চে একটি ড্রোন হামলায় এক মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার পর সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েলের সাথে সমন্বয় হয়নি
পেন্টাগনে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে আজকের হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের সাথে কোন ধরণের সমন্বয় করা হয়নি। এমনকি হামলা চালানোর আগে তাদেরকে জানানোও হয়নি।
তারা জোর দিয়ে বলছেন যে, এই হামলা ইসরায়েল-গাজা সংঘাতের সাথে যুক্ত নয়। এরআগে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এক বিবৃতিতে বলেন যে, এই হামলা গাজা পরিস্থিতি থেকে “বিচ্ছিন্ন এবং আলাদা” এবং এটি এই সংঘাতের বিষয়ে আমাদের “দৃষ্টিভঙ্গির কোন পরিবর্তনকে নির্দেশ করে না”।
পেন্টাগনের কর্মকর্তারা আরো বলেন, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইরানকে একটি পরিষ্কার বার্তা পাঠানো।
কর্মকর্তারা বলেন, “আমরা চাই ইরান যাতে একটি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়। তারা যাতে তাদের সশস্ত্র এবং ছায়া গোষ্ঠীগুলোকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়।”
ইরানের অস্ত্রাগারে আঘাত
ওয়াশিংটন ডিসিতে পেন্টাগনের সংবাদ সম্মেলনের পর সিরিয়ায় মার্কিন বিমান হামলার বিস্তারিত জানা যাচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, বিমান হামলা ইরানি বাহিনীর অস্ত্র ও গোলাবারুদের গুদামে আঘাত করেছে।
স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে চার টার দিকে ইরাকের সীমান্তের কাছে আবু কামাল নামে একটি শহরে হামলা চালানো হয়। এই হামলায় অংশ নেয় যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান।
কিন্তু এই হামলায় কেউ হতাহত হয়েছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
হামলায় ২১ মার্কিন সেনা আহত
পেন্টাগনের মতে, সম্প্রতি কয়েক দিনে ইরাক এবং সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন ও রকেট হামলায় কমপক্ষে ২১ জন মার্কিন সেনা আহত হয়েছে। এরা সবাই হালকা আঘাত পেয়েছেন। কিন্তু সম্ভাব্য একটি হামলা থেকে বাঁচতে আশ্রয় নেয়ার সময় একজন সেনা হৃদরোগজনিত ঘটনায় মারা গেছে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং যৌথবাহিনী ইরাকে কমপক্ষে ১২ বার এবং সিরিয়ায় চার বার হামলার শিকার হয়েছে।
এই হামলার জন্য আমেরিকা ওই এলাকায় থাকা ইরানের ছায়া গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেছে। ইরান হামাস এবং লেবাননের হেজবুল্লাহকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করে থাকে।
সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ৯০০ সেনা মোতায়েন রয়েছে। আর প্রতিবেশী দেশ ইরাকে আছে আরো ২৫০০জন। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ওই এলাকায় তারা আরো ৯০০ সেনা পাঠাচ্ছে।
এরআগে হোয়াইট হাউজ বলেছে, ইরানের সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে একটি বিরল বার্তায় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনাসদস্যদের উপর হামলা না চালাতে হুশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলা যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত
বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক কারেসপনডেন্ট ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বেশ কষ্টের সাথেই বলছে যে, সিরিয়া পূর্বাঞ্চলে রাতারাতি চালানো হামলা গাজার চলমান পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত নয়, এটা ইসরায়েলের সাথে কোন ধরণের সমন্বয় করে করা হয়নি এবং এটা আত্মরক্ষামূলক সম্পূর্ণ আলাদা একটি পদক্ষেপ।
পেন্টাগন বলছে, সিরিয়া ও ইরাক সীমান্তে থাকা প্রত্যন্ত মার্কিন ঘাটিতে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী গত কয়েক দিনে ১৯ বার হামলা চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর এফ-১৬ নামে এক জোড়া যুদ্ধ বিমানের সাহায্যে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর ব্যবহৃত অস্ত্রের মজুদে আঘাত হেনেছে। পেন্টাগন এই হামলা থেকে নিজেদের দূরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং ইরানকে পিছু হটতে বলা হয়েছে।
কিন্তু পেন্টাগন যাই বলুক না কেন, এই পদক্ষেপকে ওই এলাকায় ইসরায়েলের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং একে এই কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আমরা এখনো যেটা জানি না সেটা হচ্ছে, এই হামলায় হতাহতের সংখ্যা।
আরব বিশ্বের বেশিরভাগ অংশেই যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের মিত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটিগুলোতে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে স্থল অভিযান চালাতে বিরতি নিতে বলার কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলা মোকাবেলায় ঘাঁটিগুলোতে মার্কিন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থানান্তর করতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় প্রতিটি উপসাগরীয় দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। এসব ঘাঁটিতে ছায়া গোষ্ঠীগুলোর হামলা আশঙ্কায় সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে।