গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের সাথে লড়াইয়ের দাবি হামাসের

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ গাজার উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু জায়গায় শুক্রবার রাতে ইসরায়েলি সৈন্যদের সাথে তীব্র লড়াই হয়েছে বলে দাবি করেছে ফিলিস্তিনির সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সামরিক শাখা আল কাসাম ব্রিগেডস।

সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলি সৈন্য ও ট্যাঙ্ক গাজায় প্রবেশ করলে উত্তর গাজার বেইত হানুন এবং মধ্য গাজার বুরেজের কাছে ভয়াবহ যুদ্ধ হয় বলে হামাসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

যদিও বিবিসি’র পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে হামাসের এ দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে শুক্ররার রাতে গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। কিছুক্ষণ পরপরই সেখানে বড় ধরনের বিস্ফোরণ হতে দেখা গেছে।

এর আগে, শুক্রবার সন্ধ্যায় গাজায় হামলা জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছিলো ইসরায়েল।

তখন নিরাপদে থাকার জন্য গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদেরকে বলা হয়েছিলো দক্ষিণে সরে যেতে। তবে গতরাতের হামলার মাধ্যমে গাজায় স্থল অভিযান শুরু হয়েছে কি-না, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি তেল আবিব।

ইসরায়েলি জানিয়েছে, গাজায় তাদের স্থল অভিযান আরও বিস্তৃত করা হয়েছে।

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস বাড়ির সামনে গাজার কয়েকজন বাসিন্দা
ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন গাজার কয়েকজন বাসিন্দা

এ বিষয়ে ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র ইলন লেভির কাছে জানতে চেয়েছিলো বিবিসি।

“গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান আরো বড় করেছে ইসরায়েল। এর বাইরে, এই অভিযানের বিষয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”- বলেন তিনি।

এদিকে, গাজা উপত্যকায় কিছু সৈন্য ঢুকেছে বলে মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র। তবে তিনিও “স্থল অভিযান” শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেননি।

“আমাদের সৈন্য এবং ট্যাঙ্ক গাজা উপত্যকার ভিতরে অবস্থান করছে এবং তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে”- নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন মেজর নীর দিনার।

তিনি আরো বলেন, “গতকালও আমাদের সৈন্য ও ট্যাঙ্কগুলো গাজার ভেতরেই ছিলো।”

ইসরায়েল জানিয়েছে, সাতই অক্টোবর প্যারাগ্লাইডারে করে হামাসের যে সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরায়েলে প্রবেশ করেছিল, তাদের প্রধান আসেম আবু রাকাবাকে তারা হত্যা করেছে।

বড় ধরনের যুদ্ধ বাঁধার ভয় এখন সত্যি

বিবিসি’র কূটনীতি বিষয়ক সংবাদদাতা পল অ্যাডামস এখন ইসরায়েলের জেরুজালেমে সংবাদ সংগ্রহ করছেন।

বিবিসি’র এক সংবাদ বিশ্লেষণে তিনি বলেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গতরাতে যেভাবে গাজায় অভিযান জোরদার করেছে, তাতে মনে হচ্ছে- পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাচ্ছে।

কিন্তু এই অভিযানের মাধ্যমে গাজায় পুরোদস্তুর “স্থল অভিযান” শুরু হলো কি-না, সেটা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। তবে এর মাধ্যমে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ আরো বড় আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

তিনি বলেন, “আমি বুঝতে পারছি যে, পশ্চিমা কূটনীতিকরা ইসরায়েলকে এখনই সর্বাত্মক হামলার দিকে দ্রুত অগ্রসর না হয়ে বরং ধীরসুস্থে পা বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন, যাতে লেবাননের হেজবুল্লাহ, ইরাক ও সিরিয়ার শিয়া মিলিশিয়া এবং ইয়েমেনের হুতি বাহিনী এই যুদ্ধে আরো ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ার সুযোগ না পায়। তারপরও যুদ্ধটি এই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই এখন যুদ্ধের লাল সংকেত দেখা যাচ্ছে।”

ইসরায়েলের সৈন্যদের সাথে হেজবুল্লাহ’র প্রায় প্রতিদিনই সংঘর্ষ হচ্ছে। এদিকে, ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- উভয়ই কয়েকদিন আগে সিরিয়ায় বেশকিছু “লক্ষ্যবস্তুতে” হামলা চালিয়েছে। এছাড়া ইয়েমেন থেকেও শুক্রবার ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে লোহিত সাগরের তীরবর্তী মিশরের দু’টি শহরে আঘাত হেনেছে।

এমন পরিস্থিতে ইসরায়েল তার মিত্রদের পরামর্শ কানে নেবে কি-না, তা স্পষ্ট নয়।

জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারে আলোচনা বন্ধ

গাজায় নতুন করে হামলা চালানোর পর থেকে হামাসের হাতে জিম্মি ব্যক্তিদের মুক্তির বিষয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা বন্ধ গয়ে গেছে।

বিবিসি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জেরেমি বোয়েন বলেছেন, গতকাল তিনি প্রায় সারাদিন ধরে শুনছিলেন যে, জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছিলো এবং বেশ অগ্রগতিও হয়েছিলো।

এছাড়া মানবিক দিক বিবেচেনায় আগামী কয়েকদিনের জন্য একটি যুদ্ধবিরতির কথাও শোনা যাচ্ছিলো। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যায় ইসরায়েল নতুন করে হামলার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে দু’পক্ষের আলোচনা একেবারেই থমকে গেছে।

ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক ও সৈন্যরা ইতিমধ্যেই গাজায় ঢুকে গেছে বলে জানা যাচ্ছে। কাজেই এই অবস্থা চলতে থাকলে দু’পক্ষ আবারও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে কথা বলতে আলোচনায় বসার খুব আগ্রহ দেখাবে বলে মনে হচ্ছেনা।

গাজায় ব্ল্যাকআউটে “গণ-নৃশংসতা” ঢাকা পড়ার আশঙ্কা

আল সাথি উদ্বাস্তু শিবিরের বেশ কয়েকটি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে
গত কয়েকদিনের ইসরায়েলি হামলায় গাজা শহরের আল সাথি উদ্বাস্তু শিবিরের বেশ কয়েকটি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে

গাজায় এখন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছেই বলা যায়। এই ব্ল্যাকআউটের কারণে গাজার “গণ-নৃশংসতা” ঢাকা পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারী মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জ্যেষ্ঠ গবেষক ডেবোরা ব্রাউন।

এর আগে, দ্য কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টম (সিপিজে) গাজার তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছে।

তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে যে, এটি করা না হলে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের সবটুকু চিত্র তুলে ধরা সম্ভব হবে না।

এর ফলে এই যুদ্ধকে ঘিরে নানান প্রোপাগান্ডা ও গুজব ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হবে বলেও আশঙ্কা করছে সংগঠনটি।

গত ৭ই অক্টোবর ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ শুরু পর সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ২৯ জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সিপিজে।

যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাব পাস

মানবিক সহায়তার জন্য গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে।

শুক্রবার অনুষ্ঠিত সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। আরব দেশগুলোর পক্ষে সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে জর্ডান।

এ সময় সদস্য দেশগুলোর মধ্যে প্রস্তাবের পক্ষে ১২০টি দেশ এবং বিপক্ষে ১৪টি দেশ ভোট দেয়। এছাড়া ভোটদানে বিরত ছিলো ৪৫টি সদস্য দেশ।

গৃহীত এই প্রস্তাবে হামাসের কাছে জিম্মি বেসামরিক ব্যক্তিদেরকে অবিলম্বে “নিঃশর্ত মুক্তি” দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এছাড়া আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, জিম্মিদের সাথে মানবিক আচরণ করার পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা ও সুস্থতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।

অধিবেশনে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর “সন্ত্রাস ও নির্বিচার হামলা” সহ সব ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানানো হয়।

একই সাথে দু’দেশের বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদানের পাশাপাশি নির্বিঘ্নে ত্রাণ সহায়তা প্রদানেরও আহ্বান জানানো হয়।


Spread the love

Leave a Reply