রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা : আইএসের দায় স্বীকার

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্ক:

বাংলাদেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ইংরেজি বিভাগের ওই অধ্যাপকের নাম ড.এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী।  শনিবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে ভোয়ালিয়া এলাকার শালবাগান মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ হত্যাকান্ডের হত্যার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

অধ্যাপক ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী
অধ্যাপক ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মুজিবুল হক আজাদ খান জানান, রেজাউল করিমের বাড়ি ভোয়ালিয়া থানার শালবাগান বাজার এলাকায়। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়গামী বাসের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে ড. রেজাউল করিম শালবাগানের মোড়ে অপেক্ষা করছিলেন।

এ সময় হেলমেট পরিহিত মোটরসাইকেলযোগে দুই যুবক এসে পেছন থেকে তার ঘাড়ে কয়েকটি কোপ দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় । এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। বোয়ালিয়া থানার ওসি শাহদাত হোসেন বলেন, হত্যাকাণ্ডস্থল থেকে ৫০ গজ দূরে অধ্যাপক রেজাউলের বাড়ি।

রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশানার মো. শামসুদ্দিনের দাবি, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গি বা মৌলবাদীদের যোগসূত্র থাকতে পারে। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন আগে রেজাউল করিম বাগমারা এলাকায় একটি গানের স্কুল গড়ে তোলেন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। এ বিষয়টি সামনে নিয়ে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা খতিয়ে দেখছে।

তিনি বলেন, রেজাউল করিমের ঘাড়ে তিনটি কোপ দেখা গেছে। যা ৭০/৮০ ভাগ গভীরে। ইতোপূর্বে কয়েকজন ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ধরনের সঙ্গে এই হত্যার মিল রয়েছে। তার ধারণা, এটি জঙ্গি হামলা হতে পারে। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো জানান, তারা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন অধ্যাপক রেজাউল করিম বিভিন্ন ব্লগে লেখা লেখি করতেন। তবে কী নামে লিখতেন তা নিশ্চিত হতে পারেননি।

রেজাউল করিমের সহকর্মী রাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম জানান, অধ্যাপক রেজাউল করিম কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তবে প্রগতিশীলতার চর্চা করতেন। তিনি বেহালা বাজাতে পছন্দ করতেন। সঙ্গীত চর্চায়ও তার উৎসাহ ছিল। এছাড়া সবসময় তার হাতে ক্যামেরা দেখা যেত। তার ফটোগ্রাফিতে শখ ছিল।

এদিকে, অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। শনিবার আইএস নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা আমাক নিউজ অ্যাজেন্সির বরাত দিয়ে জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রুপ এক টুইট বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।

twtটুইটার বার্তায় আরও বলা হয়, ‘নাস্তিকবাদে আহ্বান করার জন্য’ রাবি’র এই শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে। তবে জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাটির খবর বরাবরই অস্বীকার করে আসছে বাংলাদেশ সরকার।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর দুপুরে খুন হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম। তখন জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। তবে পুলিশ তা নাকচ করে দেয়।

এছাড়া ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুসকে। ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আবাসিক এলাকা থেকে নিখোঁজ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের। দুই দিন পর ক্যাম্পাসের বাসার পাশের ম্যানহোলের ভেতরে তার লাশ পাওয়া যায়।


Spread the love

Leave a Reply