“দ্যা ডিপ্লমেট” কে দেয়া তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারঃ কেন বিএনপি এই ডামি এবং সাজানো নির্বাচনে অংশ নেয়নি
সোয়ালেহীন করিম চৌধুরী:
বিএনপি সমর্থকরা ঢাকার একটি আদালতে সামনে আজ ১৮ ডিসেম্বর জনসমাগম ঘটায় তাদের দলের সিনিয়র দুই সদস্যের জন্য। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগির এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আজ আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসে সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে, দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা অভিযোগ করেছে যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন মুক্ত বা ন্যায্য হতে পারে না। স্বচ্ছ নির্বাচনের তাগিদে বিএনপি গত এক বছর ধরে সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে।
স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্যকে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারিক রহমান ব্যাখ্যা করেছেন কেন তার দল নির্বাচন বর্জন করেছে। তিনি বলেছেন, “কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই নয় বরং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপি দেশে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারেক রহমান বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জৈষ্ঠ পুত্র, যিনি ২০০৭ সালে ১৮ মাস কারাগারে কাটিয়েছিলেন, পরবর্তীতে তিনি ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে নির্বাসনে রয়েছেন।
এই সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল, একটি ন্যায্য নির্বাচনের সম্ভাবনা এবং ভূ -রাজনৈতিক বিবেচনার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তারেক রহমান যুক্তি দিয়েছেন, জামায়াত-ই-ইসলামির সাথে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে ভারতের উদ্বেগগুলি ভুল জায়গায় স্থান পেয়েছে, কারণ আওয়ামীলীগ অতীতে একই ইসলামপন্থী দলের সাথে বেশ কয়েকবার একত্রিত হয়েছিল।
প্রশ্নঃ বিএনপি কেন ২০২৪ সালের নির্বাচন বয়কট করতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ?
উত্তরঃ এটি একা বিএনপির সিদ্ধান্ত নয়, গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলগুলি ও আপামরসাধারণ জানুয়ারী মাসে তথাকথিত নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনগণ চায় নির্দ্বিধায় তাদের ভোট দিতে এবং সেই ভোটগুলি যেন সত্যই গণনা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে দুর্বৃত্ত নির্বাচনের কলঙ্কিত ইতিহাস রয়েছে, যা কারচুপি ও অনিয়মের বিভিন্ন পদ্ধতি দ্বারা চিহ্নিত। পুরো বিশ্বব্যাপী যা খুব ভালভাবে নথিভুক্ত করা রয়েছে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে। ২০১৪ সালে, আওয়ামীলীগ কোনও বিরোধী প্রার্থী ছাড়াই ৩০০ টি আসনের মধ্যে ১৫৪ আসনে বিনা ভোটে নির্বাচিত হবার দাবি করেছিল। ২০১৮ সালে, নির্বাচনের দিনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সগুলি ভর্তি করা হয়েছিল, গণতন্ত্রকে বিদ্রূপ করে।
আ.লীগ ২০২৪ সালে আরেকটি প্রতারণামূলক নির্বাচন করার পায়তারা করছে, ভোটের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত করছে তারা প্রতিটি অংশগ্রহণকারী দলের সাথে আলোচনা করে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলি মূলত আ.লীগের ঐতিহাসিক মিত্র,যাদের উপর জনসাধারণের বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে। তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি একটি ক্ষয়িষ্ণু দল। বাকি দলগুলোর জনিসাধারণের কাছে কোনো গ্রহণযোগ্যতা বা পরিচিতিই নেই। তবে জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতারা একটি সভায় নির্বাচন বয়কট করার এবং আআওয়ামীলীগের সাথে জোটটি বাতিল করার তীব্র ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এরপরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী জেপি নেতৃত্বের সাথে সাক্ষাত করে এবং তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করে।
শেখ হাসিনা আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের ডামি প্রার্থী হিসাবে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন। জিততে নয় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এই নিকৃষ্ট পরিকল্পনা তিনি করেন। রাষ্ট্রীয় সম্পদ কাজে লাগিয়ে তিনি বিএনপিকে বিভক্ত করার চেষ্টায় ব্যর্থ হোন। তথাকথিত কিংস পার্টি রাষ্ট্রীয় সমর্থন নিয়ে গঠন করেন। তাদের সকল ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন। যদিও আওয়ামীলীগ আসন বিতরণ নিয়ে চাপে রয়েছে, যেমন জাকের পার্টি শেষদিনে ২০০ জন প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে, অন্যান্য ছোট দলের অনেক প্রার্থীও প্রত্যাহার করতে চেয়েছিল তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলির চাপে পড়ে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধ্য হয়।
যদি আমরা শেখ হাসিনার অধীনে উপ-নির্বাচনগুলির দিকে দৃষ্টি দেই তাহলে দেখতে পাই আওয়ামীলীগের কর্মীরা রাষ্ট্রীয় সম্পদের সহায়তায় নির্বাচনে কারসাজির মদদে অনৈতিক কার্যকলাপ অব্যাহত রেখেছে। প্রতিটি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলি থেকে বিরোধী প্রার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়া, ত্রুটিযুক্ত ভোটারদের তালিকার ব্যবহার,মৃত ব্যক্তিদের দ্বারা ভোটদান সম্পাদন, জাল ভোটদান এবং ব্যালট বাক্সের স্টাফিংয়ের সাক্ষী সারাদেশের আপামর জনসাধারণ। গত মাসে, আমরা নির্বাচন জালিয়াতির একটি নতুন উদাহরণের মুখোমুখি হয়েছিলাম। যখন একজন আআওয়ামীলীগ পোলিং এজেন্ট ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩টি ব্যালট স্ট্যাম্প করতে সক্ষম হয়েছিল। এটা স্পষ্ট যে যতক্ষণ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখবে, ততক্ষণ বাংলাদেশের প্রতিটি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ঘটতে থাকবে।
নির্বাচন যত নিকটবর্তী হয়েছে ফ্যাসিবাদী সরকার বিরোধী নেতা এবং কর্মীদের উপর ততবেশি ক্র্যাকডাউন অব্যাহত রেখেছে। তারা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে যা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পক্ষে উপযুক্ত নয়। কারাগারগুলি উপচে পড়ছে সাধারণ মানুষ এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মী দ্বারা। মনগড়া মামলায় নির্বিচারে আটকে রাখা অব্যাহত রয়েছে, পাশাপাশি ঘটছে গুম ও নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং নির্মম নির্যাতনের মতো স্থূল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। এটা স্পষ্ট যে কেবলমাত্র একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বিশ্বাসযোগ্য এবং স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়াই দেশকে স্থিতাবস্থা দিতে পারবে। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থাই প্রতিষ্ঠা করতে পারে ভোটদানের অধিকার। পুনরুদ্ধার করতে পারে জনসাধারণকে এবং বাংলাদেশ একটি পাবলিক ম্যান্ডেট অর্জন করতে পূণরায় সক্ষম হতে পারে।
প্রশ্নঃ বিএনপির রাস্তার আন্দোলন কি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গতি হারাবে না? বিশেষ করে যখন নতুন সরকার গঠন হবে নির্বাচনের পর?
উত্তরঃ ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি দ্বারা ২,৬৮৭ জন ব্যক্তি বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। পাশাপাশি গুম ও নিখোঁজ হওয়া লোকের সংখ্যা কমপক্ষে ৬৭৫ জন যা নথিভুক্ত হয়েছে। বিএনপি এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক দলগুলির ৫০ লক্ষাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে প্রায় ১,৩৮,৫০০টির বেশি রাজনৈতিক মামলা চালু রয়েছে। ২৮ শে অক্টোবর আমাদের মহাসমাবেশের পর থেকে ২২,০০০ এরও বেশি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারাগারে মোট বন্দীদের সংখ্যা প্রায় আড়াই গুণ বেশি, এমনকি গ্রেপ্তারের তীব্রতা এখনও অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এরপরেও মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে সাধারণ মানুষ ও বিরোধী নেতাকর্মীদের থামিয়ে রাখতে পারছে না সরকার।
বিএনপি শাসকদের দ্বারা দমন ও অবিচার সহ্য করে যাচ্ছে। এটি জাতির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতির একটি প্রমাণ। প্রধান বিরোধী দল হিসাবে, আমরা নাগরিকদের নিকট তাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করাকে আমাদের কর্তব্য হিসাবে দেখি। তথাকথিত নির্বাচন দ্বারা যদি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় জোর করে থাকতে চায় তবে বাংলাদেশের লোকেরা বিএনপির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকবে। এবং সেটাই হবে আমাদের মূল বিজয়, শুধু ক্ষমতায় আরোহনই আমাদের লক্ষ্য নয় সেটা অন্তত জনগণ বুঝতে সক্ষম হয়েছে। আমরা জনগণের অধিকার আদায় করার জন্য রাজপথে শেষ রক্তবিন্দু দিতে সদা প্রস্তুত।
১৬ ডিসেম্বর বিএনপির সর্বশেষতম র্যালিতে কয়েক লক্ষাধিক গণতন্ত্রীকামী মানুষ অংশ নিয়েছিল। রাষ্ট্র কর্তৃক সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের স্থিতিস্থাপকতা এবং জনসাধারণকে একত্রিত করার ক্ষমতার প্রমাণ হিসাবে এই অংশগ্রহণ কাজ করবে। গত কয়েক বছর ধরে আমরা বাংলাদেশ জুড়ে প্রচুর সমাবেশের আয়োজন করেছি, লক্ষ লক্ষ অংশগ্রহণকারী দেশ ও জাতিকে দেখিয়ে দিয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নিঃস্বার্থভাবে বিএনপি সবাইকে নিয়ে কাজ করে যেতে প্রস্তুত। যা জাতির ইতিহাসে অভূতপূর্ব অধ্যায় হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।
প্রশ্নঃ আওয়ামীলীগ সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের উপর একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য তীব্র চাপ রয়েছে। বিএনপি কি নিশ্চিত যে এই চাপটি কাজ করবে না?
উত্তরঃ আপনার নিজের প্রশ্নটি স্ব-ব্যাখ্যামূলক। ন্যায্য নির্বাচনের জন্য একটি প্রতিকূল অবস্থার মোকাবেলা করে যাচ্ছে এই দেশের জনগণ। আমাদের দায়িত্ব আমাদের চলমান আন্দোলনের নৈতিক ও বৈধ ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করা। কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন, বিএনপি তার সমস্ত আটককৃত নেতাদের রাতারাতি মুক্তি পাওয়ার বিনিময়েও নির্বাচনে যোগদানের প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। যাতে পরিষ্কার বোঝা যায় জোর করে নির্বাচনে নিতে বাধ্য করার জন্যই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের কারাগারে রাখা হয়েছে। তার কথাতেই প্রকাশ পায় আওয়ামীলীগ সরকার,বিচার ব্যবস্থাকে কিভাবে তাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বিচার বিভাগ, পুলিশ, সামরিক ও আমলাতন্ত্র সহ রাষ্ট্রীয় যন্ত্র গুলিকে কলুষিত করে ফেলেছেন। তাদের অনুগতদের দ্বারা প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান পূর্ণ।যারা অবৈধ আদেশ মানছে এবং সরকারের তাবেদারি করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে মতবিরোধকে দমিয়ে রাখতে এবং ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য তিনি এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলিকে ব্যবহার করে যাচ্ছেন।
নির্বাচন কমিশনও তল্পিবাহক হিসাবে ইতোমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। কমিশনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত হল, নির্বাচনী প্রচারনা ব্যতীত সমস্ত রাজনৈতিক ঘটনা নিষিদ্ধ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে নির্দেশনা দেয়া। আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ ও অভিব্যক্তির স্বাধীনতা রোধ করার পদক্ষেপটি কেবল অনৈতিক, অবৈধ এবং অসাংবিধানিক নয়, বরং নির্বাচন কমিশন যেশেখ হাসিনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তা ভালোভাবেই প্রমাণ করে।
প্রশ্নঃ ২০১৪ সালের নির্বাচনের বিএনপির বয়কট আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে হাসিনা সরকারকে খুব বেশি প্রভাবিত করে নাই। বিএনপি কোন ভিত্তিতে হাসিনা সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে দুর্বল করার জন্য আসন্ন নির্বাচনের বর্জনের প্রত্যাশা করছে?
উত্তরঃ বাংলাদেশ কার্যকরভাবে একটি দুর্নীতিবাজ সরকার দ্বারা শাসিত হচ্ছে। যা স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার একটি অন্যতম নিয়ামক। শেখ হাসিনা কেবল নিজের দেশের সাধারণ জনগণের জন্যই হুমকিস্বরূপ নন বরং তিনি বিতর্কিত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও তৈরি করে যাচ্ছেন। যার ফলে ডেমোক্র্যাটিক ওয়ার্ল্ড থেকে ধীরে ধীরে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তিনি গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সারা বিশ্বের দাবি উপেক্ষা করে আছেন এবং নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক আদেশের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার আহ্বানের সাথে একমত পোষণ করছি। গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করতে তাদের নৈতিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডার এবং উন্নয়ন অংশীদারদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের জনগণ সাম্প্রতিক কূটনৈতিক ব্যবস্থা যেমন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের উপর স্যাংশন এবং ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগে মার্কিন তৎপরতার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য দেশের সরকার সহ সকলের প্রতি সাধারণ আহ্বানকে প্রশংসা চোখে দেখে।সাধারণ জনগণ মনে করে এগুলি গণতন্ত্রকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
প্রশ্নঃ যদি হাসিনা আবারও ক্ষমতায় ফিরে আসে তাহলে বিএনপির কর্ম পরিকল্পনা কী? নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা কি ভোটারদের কাছ থেকে পার্টিকে বিচ্ছিন্ন করবে না?
উত্তরঃ মোটেও নয়, কারণ ভোটাররা ইতোমধ্যে এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিএনপির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশী জনগণকে উৎসাহিত করেছে। যা অর্থবহ নির্বাচনের জন্য আমাদের অংশীদারিত্বের প্রতিফলন ঘটায়। প্রকৃতপক্ষে, আমি বিশ্বাস করি বা এর যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে ফ্যাসিবাদকে ছড়িয়ে দিয়ে আওয়ামীলীগ আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিক থেকে শুরু করে নোবেল বিজয়ী, সাংবাদিক হতে নাগরিক সমাজ, শিক্ষার্থী থেকে পেশাদার শ্রেণী – সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে যাচ্ছে শেখ হাসিনা ও তার সরকার। তারা রাষ্ট্রের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের ব্যাপারে বিএনপির এক-দফা দাবিটি বেশিরভাগ বাংলাদেশীদের আকাঙ্ক্ষার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আমাদের দলটি দেশের ৩১টি পয়েন্টে কাঠামোগত সংস্কার চায় এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল সহ বিভিন্ন নীতি ও দেশ গঠনে জনস্বার্থকে গুরুত্ব দেয়।
আমি বুঝতে পারি যে আসন্ন নির্বাচন কেবল রাজনৈতিক দলগুলির জন্যই নয়, ভোটারদের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জের।কারণ জনসাধারণ তাদের অধিকার প্রকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত বলে মনে করেন নিজেদের। হাসিনার অধীনে সর্বশেষ দুটি নির্বাচনে, ২০০৯ সাল থেকে নতুন ভোটার হয়েছেন এমন প্রায় ৩ কোটি ভোটার সহ প্রায় ১২ কোটি ভোটার তাদের ভোট দিতে পারেননি। এই বঞ্চিত ব্যক্তি এবং বিএনপি একই সূত্রে গাথা। উভয়েই একই দাবিতে একীভূত হয়েছেন।ভোটদানের অধিকার লিঙ্গ, ধর্ম, নৃগোষ্ঠী সকলের একটি বড় অধিকার।
প্রশ্নঃ আওয়ামীলীগের নেতারা বলছেন যে বিএনপি তার নিজস্ব সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে নির্বাচন বর্জন করছে। দলটির অনেক নেতা কারাগারে রয়েছেন বা পলাতক করছেন এই বিষয়টি কি নির্বাচন থেকে দূরে থাকার বিএনপির সিদ্ধান্তে কোনও ভূমিকা পালন করেছে?
উত্তরঃ আমরা যদি কর্মী, সমর্থক এবং অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা দিয়ে তুলনা করি তাহলে বিএনপি বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসাবে এখন প্রতিষ্ঠিত। আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে আমাদের সাথে মুখোমুখি হতে অক্ষম। তাই আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় যন্ত্রপাতি অপব্যবহার করছে এবং নৃশংসতা করে যাচ্ছে। আওয়ামীলীগ এমন একটা পরিস্থিতি ইচ্ছাকৃতভাবে সৃষ্টি করেছে যাতে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে। আমাদের তৃণমূল অনেক বেশি শক্তিশালী কারণ আমরা আমজনতার সাথে মিশে আছি। আওয়ামীলীগ চেষ্টা করেও আমাদের দলে ভাঙ্গন ধরাতে পারে নাই এখানেই তারা সর্বপ্রথম হেরে গিয়েছে।
সিনিয়র বিএনপি নেতারা মামলার দ্বারা জর্জরিত তাও তারা ভেঙ্গে পড়েন নাই। আটক সিনিয়র নেতাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না,কারাগারে বিভিন্ন মানসিক চাপের মোকাবেলা তারা করে যাচ্ছেন। তারা এই নীতি নিয়েছেন যে ভাঙ্গবেন তবু মচকাবেন না। আওয়ামীলীগ তাদের এই মানসিক শক্তি দেখে নিজেরাই ভীত হয়ে পড়েছে। তারা ভাবছে এই মানুষগুলো কিসের তৈরি যাদের লোভ,লালসা দিয়েও বাগে আনা যাচ্ছে না। আর সাধারণ কর্মীরা অসাধারণ হয়ে উঠেছে, তারা ধানক্ষেতে রাত্রীযাপন করে যাচ্ছে।আপনি জানেন শীতের রাতে কিংবা ঝড়,বৃষ্টিতে তারা কিভাবে দিনাতিপাত করে যাচ্ছে। এইসব দেখে মনোবল আমাদের বাড়ছে আওয়ামীলীগের ভাঙ্গছে।
প্রশ্নঃ আওয়ামীলীগের নেতারা অভিযোগ করেছেন যে ২০০৬-০৮ সময়কালে বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, তাই বিএনপি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারী ব্যবস্থাকে নষ্ট করে ফেলেছে। আপনার মন্তব্য?
উত্তরঃ বিএনপি সরকার ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে, নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যুক্ত করে। এই ব্যবস্থা একটি নিরপেক্ষ এবং নির্দলীয় প্রশাসন প্রবর্তন করে। যা জনসাধারণ সহ সকলের জন্য কাম্য ছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরে আওয়ামীলীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। বৈধতা ছাড়াই ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার স্বৈরাচারী প্রয়াসে আওয়ামীলীগ লিপ্ত হয় বিধায় এই বিধান বাতিল করে দেয় তারা।
সম্মানিত আইনজীবী সহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ দ্বারা নিযুক্ত “অ্যামিকাস কিউরি”, তত্ত্বাবধায়ক সরকারী ব্যবস্থাকে সমর্থন করেন। একটি সংসদীয় কমিটি, রাজনৈতিক দলগুলির সাথে পরামর্শ করে, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, আইনবিদ, নাগরিক সমাজের সদস্য এবং জাতীয় দৈনিক সম্পাদকগণ সর্বসম্মতিক্রমে এই সিস্টেমটিকে সমর্থন করেছিলেন। ধারাবাহিকতার প্রতিটি ইঙ্গিত সত্ত্বেও শেখ হাসিনা স্টেকহোল্ডার এবং জনসাধারণের আদেশের অপ্রতিরোধ্য সমর্থনকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছিলেন। পরিবর্তে, তিনি সংসদীয় কমিটিকে হঠাৎ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারী ব্যবস্থা বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
প্রশ্নঃ বিএনপি সম্পর্কে ভারতে উদ্বেগের একটি বিষয় হ’ল ইসলামপন্থী দলগুলির সাথে বিশেষত জামায়াত-ই-ইসলামির সাথে সম্পর্ক। বিএনপি বিধি অনুসারে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছাকাছি ছিল এবং ভারতের সুরক্ষা উদ্বেগের প্রতি সংবেদনশীল ছিল না। আপনার মন্তব্য?
উত্তরঃ একটি বড় দল হিসাবে, বিএনপি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে ধর্ম একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয় তবে রাষ্ট্রটি সবার জন্য। সকল ধর্মের লোকেরা সমান অধিকার পাবে রাষ্ট্র হতে। আমাদের দল কখনও ধর্মকে রাজনৈতিক সরঞ্জাম হিসাবে ব্যবহার করে না নীতিটি মেনে চলে। বাস্তবতা হ’ল বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের সংবিধান ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করার অধিকার দেয়, সুতরাং এই তিনটি দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল রয়েছে।
ভারতের উদ্বেগটি কেবলমাত্র জামাত ইসলামের বিরুদ্ধে। সেক্ষেত্রে এটি লক্ষণীয় যে, জামাতের সাথে আওয়ামীলীগের সুসম্পর্কের ইতিহাস অনেক পুরাতন। ১৯৬৬-৭০ সালে, আওয়ামীলীগ ও জামাত পাকিস্তানি সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একই সাথে প্রচার চালিয়েছিল। ১৯৮৬ সালে, জামাত ও আওয়ামীলীগ এই দুটি দল একই সাথে বাংলাদেশে সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের শাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। ১৯৯৪-৯৬ সালে উভয়দল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে যৌথভাবে প্রচার চালিয়েছিল। সুতরাং, জামাত যদি আওয়ামীলীগের সাথে মিত্রতা করে তবে কি কোনও সমস্যা নেই? একইভাবে, জামাত বিএনপির সাথে নির্বাচনী জোটে থাকতে পারে তাতে সমস্যা কি?
অন্যদিকে, যদি ভারতের উদ্বেগ ইসলামবাদ হয় তবে এটি উল্লেখ করা দরকার যে ২০০৬ সালে, আওয়ামীলীগ বাংলাদেশে শরিয়াহ-ভিত্তিক ইসলামিক স্টেট গঠনের জন্য ইসলামি ঐক্যজোটের সাথে একটি লিখিত চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। হাসিনা র্যাডিকাল ইসলামপন্থীদের তাদের তাঁবুতে নিয়ে আসেন শুধু ক্ষমতায় আরোহনের জন্য। অতি সম্প্রতি, এ.কে.এম বাহাউদ্দিন নামের একজন প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা, দুর্গাপূজা নিয়ে কটুক্তি করেন।অনেক সমালোচনা সত্ত্বেও, তিনি বক্তব্য প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করেছিলেন। কুমিল্লার আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতার দুর্গাপূজা নিয়ে কটুক্তি সম্পর্কে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নেতাদের প্রতিবাদ করতেও দেখা গিয়েছিল। বাহাউদ্দিনের অনুসারীরা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতিবাদ করায় তাদের উপর আক্রমণ করেছিল। হিন্দু নেতাদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও বাহাউদ্দিন আসন্ন ডামি নির্বাচনের জন্য আবার আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। এই যে সনাতন ধর্মের প্রতি আক্রমণ কিংবা,আওয়ামীলীগ সরকারের সময় সবচেয়ে বেশি সনাতন ধর্মের লোকেদের উপর অত্যাচার। তাদের মন্দিরের উপর হামলা ভারতের নজরে নেয়া কি উচিত নয়? তাছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে শেখ হাসিনা নিজেও বিভিন্ন জায়গায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে কটুক্তি করে থাকেন বলেও রেওয়াজ প্রচলিত আছে। তবে ঘটনা ধামাচাপা দিতেও তিনি সিদ্ধহস্ত।
আমাদের ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি শক্তিশালী পদ্ধতির উপর জোর দেয়। আমরা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে বাংলাদেশের অঞ্চলটি কোনও দেশের সুরক্ষা এবং স্বার্থের জন্য ক্ষতিকারক ক্রিয়াকলাপের জন্য কখনও ব্যবহৃত যাতে না হতে পারে।
প্রশ্নঃ আপনি এখন ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে দূরে রয়েছেন, একাধিক মামলায় আপনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে আপনার দলের শাসনের সময় হত্যা করার চক্রান্ত সহ নানা অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে। সরকার আপনার প্রত্যর্পণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার বক্তৃতা এবং মন্তব্য প্রচার বা প্রকাশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আদালতের আদেশ রয়েছে। আপনি কীভাবে এই পরিস্থিতিতে বিএনপি সমর্থকদের নেতৃত্ব দেওয়ার আশা করছেন?
উত্তরঃ শেখ হাসিনার সাথে হঠাৎ সম্পর্কের ছন্দপতনের পরে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়। দেশ হতে চলে যাবার পর তিনি বিচারিক স্বাধীনতার অনুপস্থিতি প্রকাশ করেন এবং আদালত থেকে কীভাবে কারসাজি করে রায় চাপানো হয় সে সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
অন্য একটি ঘটনায় বিচারক এমডি মোতাহার হোসেন, শেখ হাসিনার চাপ সত্ত্বেও আমাকে বানোয়াট মামলায় খালাস দিয়ে অবিশ্বাস্য সাহস দেখিয়েছিলেন। যার কারণে তাকে বাংলাদেশ থেকে পালাতে হয়েছিল এবং তার জীবন রক্ষার জন্য বিদেশে আশ্রয় নিতে হয়েছিল।
আমি মনে করি যে আওয়ামীলীগ শাসকের বার্তাটি পরিষ্কার, তাই বিচারকেরা তাদের চাকরি ধরে রাখার জন্য, পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা বাধ্যতামূলক।
বিচারিক অবিচার প্রবর্তনের এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন আবদুল কাহার আকন্দ, যিনি শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে বেশ কয়েকটি সাজানো মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আপনি যে ক্ষেত্রে হাইলাইট করেছেন সে ক্ষেত্রে তিনি আমার বিরুদ্ধে মনগড়া দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন, ঘটনার সাত বছর পরে চার্জ শীটে আমার নাম যুক্ত করেছেন এবং জাল প্রমাণ তৈরি করেছেন যার কোনও ভিত্তি নেই। অবসর গ্রহণের পরে, তিনি আসন্ন ডামি নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ -০২ আসনের পক্ষে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। আনুগত্য এবং পুরষ্কার আওয়ামীলীগ রাজনীতি কলুষিত করার জন্য সর্বাত্মক ভাবে ব্যবহার করে গিয়েছে। যার কারণে আওয়ামীলীগ রাজনীতিতে সরকারী কর্মকর্তারা জড়িয়ে পড়েছেন।
হাসিনা সরকার আমাকে কেবল মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে নাই বরং আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা হ্রাস করেছে। আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কল্পিত সাজানো মামলাও শুরু করেছে। আমার স্ত্রী রাজনীতিতে জড়িত নন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আমাদের সম্পত্তি দখল করেছিল। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আমাদের পরিবারের বাড়ি থেকে আমার মা বেগম খালেদা জিয়া যিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন তাকে জোর করে উচ্ছেদ করেছিল। জীবন ও স্বাস্থ্যের এই পর্যায়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসা যত্ন থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি প্রত্যক্ষ করা খুবই দু:খের। আমি এবং আমার পরিবার গণতন্ত্রের জন্য ত্যাগ অব্যাহত রেখেছি, তবে আমরা বাংলাদেশের কয়েক লক্ষাধিক পরিবারের দুর্ভোগ থেকে অনুপ্রেরণা পাই।
নির্বাসনে থাকাকালীন সময়ে, আমি বাংলাদেশের তৃণমূল নেতা ও কর্মীদের সাথে ফোন কল এবং অনলাইন সভাগুলির মাধ্যমে গভীরভাবে সংযুক্ত রয়েছি। আমি প্রতিদিন অবলোকন করি আমাদের নেতারা এবং কর্মীরা কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কিভাবে নির্ভীক ও দৃঢ়তার সাথে আবির্ভূত হচ্ছে। তারা মুক্তির পরের দিন রাস্তায় সমাবেশ বা জনসভায় যোগদান করে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক আদর্শের জন্য তাদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। আমি এই সাহস এবং উৎসাহ দ্বারা অনুপ্রাণিত হই এবং গণতন্ত্রপন্থী লোকদের আপোষহীন অবস্থানের প্রশংসা করি।
আমার প্রান্ত থেকে আমি স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত রাখার জন্য, তৃণমূলকে একত্রিত করার এবং তাদের দৃঢ় সংকল্পকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করে যাই। আমাদের আবারও একটি মুক্ত জাতি হিসাবে আর্বিভূত হতে হবে। আমার বিশ্বাস সেই দিন খুব দূরে নয় যখন আমরা আবার গণতন্ত্র ফিরে পাবো। যদিও আমরা দুর্ভোগ ও প্রতিকূলতার দ্বারা বেষ্টিত একটি চ্যালেঞ্জিং রাজনৈতিক যাত্রার মুখোমুখি অবস্থান করছি। কিন্তু অনুধাবন করতে পারছি অত্যাচারিতরা খুব শীঘ্রই তাদের পরাজয় দেখতে পাবে। এই দেশের সাধারণ জনগণের বিজয় আসবে সাধারণ জনগণের হাত ধরেই।
অনুবাদঃ সোয়ালেহীন করিম চৌধুরী
চেয়ারম্যান, সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি এন্ড গুড গভর্নেন্স
সাবেক সেক্রেটারী, যুক্তরাজ্য যুবদল