অধ্যাপক ইউনূসের সাজার রায় স্থগিতের আদেশ বাতিল করলো হাইকোর্ট
ডেস্ক রিপোর্টঃ বাংলাদেশে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চার কর্মকর্তার ছয় মাসের সাজা ও দণ্ড স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেয়া আদেশ বাতিল ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।
সোমবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসাইনের বেঞ্চ এ রায় দেন।
এ রায়ের ফলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অধ্যাপক ইউনূসের ছয় মাসের কনভিকশন অর্থাৎ দোষী সাব্যস্তকরন বহাল থাকবে।
আদালত শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে করা আপিল দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আদেশ দিয়েছে।
রায়ে আদালত বলেছে, যতক্ষণ অধ্যাপক ইউনূসসহ চারজন জামিনে রয়েছে, সাজা স্থগিত থাকবে। শ্রম আদালতের দেয়া জরিমানাও স্থগিত থাকবে।
একইসাথে দেশের বাইরে গেলে অধ্যাপক ইউনূসসহ চারজনকে সংশ্লিষ্ট আদালতে অবহিত করতে হবে।
গত ১লা জানুয়ারি গ্রামীণ টেলিকমে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইউনূসসহ চারজনকে ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয় ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত।
সেই সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে ২৮শে জানুয়ারি আপিল করেন অধ্যাপক ইউনূসসহ চারজন।
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে বিচারিক আদালতের দেয়া রায় ৩রা মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করে।
চারজনকে জামিন দেয় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার অন্য তিন জন হলেন আশরাফুল হাসান, নূর-জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
পরে কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর তৃতীয় শ্রম আদালতের দেয়া ছয় মাসের রায় ও আদেশ স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেয়া আদেশের বৈধতা নিয়ে গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আরেকটি আবেদন করেন।
এ আবেদনের শুনানি নিয়ে পরদিন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল দেয় হাইকোর্ট।
এ রুল যথাযথ ঘোষণা করে সোমবার রায় দেয় হাইকোর্ট।
এর আগে গত ১লা জানুয়ারি রায়ের পরে আদালতের বাইরে এক প্রতিক্রিয়ায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ”যে দোষ আমরা করি নাই, সেই দোষের ওপরে শাস্তি পেলাম। এটা আমাদের কপালে ছিল, জাতির কপালে ছিল, আমরা সেটা বহন করলাম।”
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের নয়ই সেপ্টেম্বর মামলাটি করেছিল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
এ মামলার অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ না দেয়া এবং ১০১ জন শ্রমিকের চাকরি স্থায়ী না করা।
এছাড়া গণছুটি না দেয়া, শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিল এবং অংশগ্রহণ তহবিল গঠন না করাও এই মামলার অন্যতম অভিযোগ।
কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা এ মামলায় অধ্যাপক ইউনূস ছাড়াও আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অন্য অভিযুক্তরা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূরজাহান বেগম এবং মো. শাহজাহান।
এর আগে গত ৩রা মার্চ এ মামলায় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জামিন আবেদনের শুনানি ঘিরে সারাদিনই আদালতে বিদেশি কূটনীতিকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।