ড্রোন বিধ্বস্ত করার পর ইসরায়েলের দাবি, ‘ইরানের হামলা এখনো শেষ হয়নি’
এ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে:
প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের ভূখণ্ডে সরাসরি হামলা করেছে ইরান। শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে ইসরায়েল জুড়ে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়।
ইরান ছাড়াও ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেন থেকেও তিনশোর বেশি ড্রোন, ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
তবে বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন লক্ষ্যে আঘাত করার আগেই ধ্বংস করে দেয়া হয় অথবা ভূপাতিত করা হয়। ইসরায়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জর্ডান এতে সহায়তা করেছে।
শনিবার রাতে ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ড কোর জানিয়েছে, তারা ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
লেবাননের হেজবুল্লাহ দাবি করেছে, গোলান হাইটসে ইসরায়েলি সামরিক ঘাটি লক্ষ্য করে তারাও রকেট হামলা করেছে।
তবে ইসরায়েলের দাবি, এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের ৯৯ শতাংশ মাঝ আকাশে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
ইরানের হামলার সমুচিত জবাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের একজন কর্মকর্তা।
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের রিয়ার অ্যাডমিরাল হাগরি জানিয়েছেন, হাতেগোনা কয়েকটি ব্যালিস্টিক মিসাইল ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আঘাত করতে পেরেছে। এতে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আর ১২ জন আহত হয়েছে।
তবে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, হামলায় ইসরায়েলি নেভাতিম বিমান ঘাটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, ইরানের হামলা এখনো শেষ হয়নি।
অন্যদিকে ইরান সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইসরায়েল রাতের এই হামলার জবাব দেয়ার চেষ্টা করা হলে এর চেয়েও বড় হামলা চালানো হবে।
রোববার জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। অন্যদিকে ‘কূটনৈতিক প্রত্যুত্তর’ দেয়ার জন্য জি সেভেন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ইরানের হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র
জোনাথন বেল, প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংবাদদাতা
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইরানের হামলা ঠেকাতে ভালোরকম প্রস্তুতি ছিল ইসরায়েলের।
কয়েকদিন আগে থেকেই ইসরায়েলকে এই বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল। তার চেয়েও বড় কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের একইরকম অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।
বহুদিন ধরেই গাজা থেকে হামাসের ছোড়া রকেট ধ্বংস করার অভিজ্ঞতা রয়েছে ইসরায়েলের।
ইসরায়েলের রয়েছে আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ডেভিড’স শিলিং এবং অ্যারো অ্যারিয়েল ডিফেন্স সিস্টেম। অন্যদিকে লোহিত সাগরে বেশ কিছুদিন ধরেই ইয়েমেনের হুথিদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ধ্বংস করতে একই রকমের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
এক কথায় বলতে গেছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র- উভয়েই জানতো যে ইরানের ছোড়া ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দেয়ার মতো সক্ষমতা তাদের আছে। সেজন্য তারা প্রস্তুতও ছিল।
উভয় পক্ষকে সংযত হতে আহ্বান রাশিয়ার
ইরান ও ইসরায়েলের উত্তেজনার মধ্যে সব পক্ষকে সংযত হতে আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। উত্তেজনা বাড়তে থাকায় দেশটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
রাশিয়া বলেছে, ”বর্তমান সমস্যার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমাধানে আঞ্চলিক সব দেশকে এগিয়ে আসতে হবে।
মস্কো বলেছে, তারা এর আগে অনেকবার সর্তক করে দয়েছে যে, সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলার পর যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে রাশিয়ার আনা একটি প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স।
হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছিল ইরান। ইসরায়েল যদিও হামলার দায় স্বীকার করেনি, আবার নাকচও করে দেয়নি।
কোন দেশ কীভাবে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে
ইসরায়েলের হামলার সময় ভূপাতিত একটি ড্রোনের ছবি পেয়েছে বিবিসি, যে ড্রোনটি জর্ডান নামিয়েছে। এর বাইরে বেশ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলকে ইরানের হামলা ঠেকাতে সহায়তা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, বেশ কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ঠেকিয়ে দিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
যুক্তরাজ্যের যুদ্ধবিমানও অংশ নিয়েছে। ইসরায়েলি একজন সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আকাশে পাহারা দিতে সহায়তা করেছে ফ্রান্স।
অন্যদিকে এক বিবৃতিতে জর্ডান জানিয়েছে, তাদের আকাশসীমার ভেতরে আসা কিছু বস্তুকে তারা বাধা দিয়েছে।
ইরানকে কীভাবে কূটনৈতিকভাবে জবাব দেয়া যায়, এ নিয়ে আজ রোববার জি সেভেন নেতাদের সাথে বৈঠক করতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।