টাওয়ার হ্যামলেটসের নতুন লেজার সার্ভিস ‘বি ওয়েল’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন মেয়র লুৎফুর রহমান
ডেস্ক রিপোর্টঃ টাওয়ার হ্যামলেটসের সাতটি লেজার সেন্টার পাবলিক মালিকানায় ও ব্যবস্থাপনায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
জিএলএল (বেটার) এর সাথে কাউন্সিলের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গত ১ মে ২০২৪ থেকে বারার লেইজার সেন্টারগুলো সরাসরি কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে।
সারা দেশে যেখানে কাউন্সিলের লেজার সেন্টার হিসেবে পরিচিত অবকাশ কেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, সেখানে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল বারার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিশ্চিত করতে লেজার সেন্টারগুলোকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনে বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস প্রদানের ক্ষেত্রে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে।
কাউন্সিলের লেজার সেন্টারগুলোকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন মেয়র লুৎফুর রহমান। ৮ মে মঙ্গলবার নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান ‘বি ওয়েল’ নামে যাত্রা শুরু করা কাউন্সিলের নতুন ইনসোর্সিং লেজার সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। মাইল এন্ড লেজার সেন্টারে আয়োজিত বিশেষ এক অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিক ও ব্যবহারকারীদের নিয়ে সেন্টারের বিভিন্ন সার্ভিস ও সুবিধাদি ঘুরে দেখেন।
কাউন্সিলের নতুন লেজার সার্ভিসেস ‘বি ওয়েল’ স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর ফোকাস করবে, পাশাপাশি বাসিন্দাদের অংশগ্রহণ এবং অ্যাক্সেস বাড়ানোর সাথে নারী ও মেয়ে, বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্ক এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা বা তাদের সাথে বসবাসকারী ব্যক্তির উপরও বিশেষ নজর দেয়া হবে।
এই সার্ভিস বাসিন্দাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের নতুন সুবিধা প্রদান করবে, যার মধ্যে রয়েছেঃ
— বারার ১৬ বছরের বেশি বয়সী মহিলা এবং মেয়েদের জন্য এবং ৫৫ বছরের বেশি পুরুষদের জন্য বিনামূল্যে সাঁতারের সুবিধা, যা ২০২৪ সালের গ্রীষ্ম থেকে শুরু হবে
— একটি মেম্বারশীপের অধীনে ছয়টি অবকাশ কেন্দ্রে অ্যাক্সেস সুবিধা
— নতুন ফিটনেস সরঞ্জাম এবং ক্লাস প্রোগ্রাম
— স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার ক্লাস এবং প্রোগ্রাম
— ইয়র্ক হলের স্পা, জন অরওয়েলের একটি নতুন স্পিন স্টুডিও এবং মাইল এন্ডের পিচগুলিকে সংস্কার করা সহ কেন্দ্রগুলোকে আধুনিকায়ন করা
— নতুন এই সার্ভিসে ২৫০ জনেরও বেশি কর্মী জিএলএল থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে।
— এছাড়া নতুন পরিষেবার শূন্যপদগুলিতে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হলে বারার বাসিন্দারা লেজার সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার অর্থাৎ চাকুরির সুযোগ পাবেন।
— শেডওয়েলের সেন্ট জর্জেস লেজার সেন্টারের স্থানে কাউন্সিল একটি নতুন অবকাশ কেন্দ্র এবং আবাসন সুবিধার নির্মাণে ৫৫ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি বিনিয়োগ করছে, যা বাসিন্দাদের জন্য নতুন বাড়ির পাশাপাশি আরও ভাল মানের লেজার সুবিধা প্রদান করবে।
৭ মে মাইল এন্ড লেজার সেন্টারে আয়োজিত ‘বি ওয়েল’ নামের নতুন লেজার সার্ভিসের যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠানে মেয়র লুৎফুর রহমান, ডেপুটি মেয়র মাইয়ুম তালুকদার, কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন হলসি এবং কেবিনেট মেম্বার ফর কালচার এন্ড রিক্রিয়েশন, কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন, কাউন্সিলের ডিরেক্টর ফর কমিউনিটিজ সায়মন বেক্সটার ও ডিরেক্টর ফর কালচার জাওয়ার আলী সহ পদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
টাওয়ার হ্যামলেটস কমিউনিটি ডিসেবিলিটি লার্নিং সার্ভিস (সিএলডিএস), অলিম্পিক কোচ ক্রিস্টোফার জাহ এবং ক্রীড়াবিদ হেইলি ম্যাকলিন এবং কলম্বা ব্লাঙ্গো সেন্ট লুকস প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে, সেন্ট পলস এর শিক্ষার্থীরাও এই উদযাপনে যোগ দিয়েছিলেন।
মেয়র লুৎফুর রহমান ফিতা কেটে সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, “আমি ‘বি ওয়েল’ সার্ভিসে নতুন ও বিদ্যমান গ্রাহকদের স্বাগত জানাতে পেরে আনন্দিত। বারার যেসকল বাসিন্দা লেজার সার্ভিসের সুবিধা ভোগে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন, তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করা, বিশেষ করে মহিলা ও মেয়েদের উপর অধিকতর দৃষ্টি দেয়া এবং লেইজার সার্ভিসে অ্যাক্সেস বাড়ানোকে অগ্রাধিকার দিবে নতুন এই সার্ভিস।”
মেয়র বলেন, “টাওয়ার হ্যামলেটসে বিপুল সংখ্যক লোক রয়েছেন, যাদের দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক ও স্বাস্থ্যগত জটিলতা রয়েছে, পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজনের সাথে বসবাসকারী শিশুদেরও উচ্চ হার রয়েছে। টাওয়ার হ্যামলেটসের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বৈষম্য মোকাবেলা করা এবং বারার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের ফলাফল উন্নত করার জন্য আমরা যে অনেক পদক্ষেপ নিচ্ছি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই বিনিয়োগ।” লেজার সার্ভিস কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণে আসায় বারার বাসিন্দাদের জন্য বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি সকলকে কাউন্সিলের লেজার সার্ভিসের সুফল কাজে লাগিয়ে নিজেদের ও পরিবারের স্বার্থ সুরক্ষায় যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান।
শেডওয়েলের সেন্ট জর্জেস সেন্টারের স্থানে অত্যাধুনিক লেজার সুবিধাদির পাশাপাশি হাউজিং অর্থাৎ নতুন ঘর নির্মাণে প্রায় ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করার কথা জানিয়েছেন মেয়র।
সংস্কৃতি বিষয়ক কেবিনেট মেম্বার, কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন বলেন, “বি ওয়েল স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি খেলাধুলা ও শরীরচর্চার অত্যাধুনিক সুবিধাদি প্রদানের মাধ্যমে বাসিন্দাদের জন্য উচ্চ মানের পরিষেবা সরবরাহ করবে। নতুন পরিষেবাটি একটি স্বাস্থ্যকর বারা তৈরি করতে, এক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধাগুলি অপসারণ করতে এবং কমিউনিটি গুলোকে একত্রিত করতে লক্ষ্যযুক্ত প্রোগ্রাম এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”
উল্লেখ্য, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের লোকাল কাউন্সিল পরিচালিত ২৭৬টি সুইমিং পুল বন্ধ হয়ে গেছে। ২০২২ সালে ২৮টি আর ২০২৩ সালে ২৩ টি বন্ধ হয়। অন্যদিকে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল তহবিল কর্তন সহ নানামুখি আর্থিক চাপ সত্ত্বেও সুষ্ঠু বাজেট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সুইমিং পুল সাতটি লেজার সেন্টার পরিচালনার দায়িত্ব নিজেদের অধীনে এনেছে।