ভারতে ধর্মীয় উৎসবে পদদলিত হয়ে অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু

Spread the love

ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরাসে এক ধর্মীয় উৎসব চলাকালীন পদপিষ্ট হয়ে এখনও পর্যন্ত ৬০ জন ভক্তের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। নিহতদের অধিকাংশই নারী। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হাথরাসের পুলিশ সুপার নিপুন আগরওয়াল বিবিসির সংবাদদাতা দিলনাওয়াজ পাশাকে নিশ্চিত করেছেন যে ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ৬০ জন মারা গেছেন।

তবে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির বরাত দিয়ে ওই ঘটনায় ৮৭ জনের মৃ্ত্যুর খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

মঙ্গলবার হিন্দুদের ধর্মীয় জমায়েত ‘সৎসঙ্গ’ শেষ হওয়ার পরে হঠাৎই দৌড়োদৌড়ি শুরু হওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

যে জায়গায় এক ধর্মগুরুর ভাষণ শোনার জন্য অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল, সেটি ইটাহ এবং হাথরাস জেলা দুটির সীমান্তে।

এর আগে পার্শ্ববর্তী জেলা ইটাহ-র হাসপাতালে ২৭টি মৃতদেহ নিয়ে আসা হয়েছিল, যাদের মধ্যে ২৩ জনই নারী। এছাড়া তিনটি শিশু ও একজন পুরুষের মৃতদেহও সেখানে রয়েছে।

সংবাদ সংস্থা এএনআইকে সিনিয়র পুলিশ সুপার রাজেশ কুমার সিং জানিয়েছেন, “একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, হাথরাস জেলার মুঘলগড়ি গ্রামে ভোলে বাবার অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানেই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা হয়েছে।“

জেলার প্রধান মেডিক্যাল অফিসার উমেশ কুমার বলেছেন যে, আহতদের অনেককে ইটাহ-র হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সিকান্দ্রারাউ শহরের একটি ট্রমা সেন্টারে।

তিনি জানিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ১৫০ জনের মতো মানুষ আহত হয়ে ভর্তি আছেন।

মৃতদেহের ময়না তদন্ত করে নাম পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন

ট্রমা সেন্টারে বিবিসি যা দেখল

বিবিসির সহযোগী সাংবাদিক ধর্মেন্দ্র চৌধুরী ট্রমা সেন্টার থেকে কিছু ভিডিও পাঠিয়েছেন যেখানে নিহতদের পরিবারগুলিকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।

ট্রমা সেন্টারে নিহতদের পরিবারের এক সদস্য বলেন, “এত বড় মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে কিন্তু একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এখানে উপস্থিত নেই। ভোলে বাবাকে এখানে এত বড় অনুষ্ঠান করার অনুমতি কে দিয়েছে? প্রশাসন কোথায়?”

আহত ও নিহতদের ট্রাক, টেম্পো ও অ্যাম্বুলেন্সে করে ট্রমা সেন্টারে আনা হয়।

ভিডিওতে দেখা গেছে, ট্রমা সেন্টারের বাইরে মেঝেতে পড়ে রয়েছে দুইজন নারীর দেহ।

ট্রমা সেন্টারের বাইরে বিশৃঙ্খলা রয়েছে এবং লোকেরা তাদের নিকটাত্মীয়দের সন্ধানে সেখানে আসছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান

আলিগড় রেঞ্জের পুলিশ আইজি শলভ্ মাথুর সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে ‘ভোলে বাবা’ নামে ওই ধর্মগুরুর অনুষ্ঠানের জন্য অস্থায়ী অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

হিন্দুস্তান টাইমস সংবাদপত্র ‘ভোলে বাবা’ নামের ওই ধর্মগুরুর ‘সৎসঙ্গ’ অনুষ্ঠানে হাজির এক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছে। তিনি নিজেও আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন যে প্রচণ্ড গরমে তাঁবুর মধ্যে অনুষ্ঠান চলছিল। গরমের কারণে পুরো অনুষ্ঠান চলাকালীনই ভক্তদের অস্বস্তিতে কাটাতে হয়েছে। তাই অনুষ্ঠান শেষ হতেই সবাই হুড়োহুড়ি করে বেরনোর চেষ্টা করছিলেন।

“সবাই বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিল কিন্তু বের হবার পথ ছিল না। একজন আরেকজনের ওপরে পড়ে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে গেছেন। আমি নিজেও বেরোতে গিয়ে দেখি মোটরসাইকেল রাখার কারণে বেরনোর পথ বন্ধ হয়ে গেছে,” হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন ওই প্রত্যক্ষদর্শী।

এক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে জানাচ্ছেন কীভাবে দুর্ঘটনা হয়েছিল
এক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে জানাচ্ছেন কীভাবে দুর্ঘটনা হয়েছিল

যোগী আদিত্যনাথের বিবৃতি

সামাজিক মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর তরফে একটি বিবৃতি জারি করে হাথরাসের দুর্ঘটনায় মৃতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে।

আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দ্রুত আহতদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া এবং ঘটনাস্থলে ত্রাণ বিলি করার নির্দেশ দিয়েছেন।

আগ্রার অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিচালক এবং আলিগড়ের কমিশনারকে এই দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আগেও মৃত্যু

ভারতের ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠানে আগেও বড় সংখ্যায় মৃত্যুর ঘটনা হয়েছে।

দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য কেরালার এক মন্দিরে নতুন বছরের অনুষ্ঠান চলাকালীন অবৈধ বাজি বিস্ফোরণ হয়ে অন্তত ১১২ জন মারা গিয়েছিলেন। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল ২০১৬ সালের ওই ঘটনায় যে কংক্রিটের ভবন ধসে গিয়েছিল আর মন্দিরটিতেও আগুন ধরে গিয়েছিল।

মধ্যপ্রদেশের একটি মন্দিরের কাছে সেতু ভেঙ্গে পড়ে ১১৫ জন ভক্ত মারা গিয়েছিলেন ২০১৩ সালে। সেদিন ওই সেতুর কাছে প্রায় চার লাখ ভক্ত জড়ো হয়েছিলেন। এরই মধ্যে গুজব ছড়ায় যে সেতুটি ভেঙ্গে পড়তে চলেছে।

ভারত শাসিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় হিন্দু তীর্থস্থান বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে ২০২২ সালে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিলেন অন্তত ১২ জন।


Spread the love

Leave a Reply