কানে ব্যান্ডেজ নিয়ে সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প, কে এই ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জেডি ভ্যান্স
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রানিং মেট হিসেবে যার নাম ঘোষণা করেছেন, তিনি ওহাইও থেকে নির্বাচিত সিনেটর জেডি ভ্যান্স। মি. ট্রাম্প নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হলে ৩৯ বছর বয়সী মি. ভ্যান্সই হবেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট, যিনি এক সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া সমালোচক ছিলেন।
দু’দিন আগে পেনসিলভানিয়ার বাটলার এলাকায় এক সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় এক হত্যা চেষ্টায় আহত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঘটনার পর মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান দলীয় কনভেনশনে প্রথম প্রকাশ্যে দেখা গেছে মি. ট্রাম্পকে।
এ সময় তার ডান কানে সাদা একটি ব্যান্ডেজ বাধা দেখা যায়।
এই সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ডেলিগেট বা প্রতিনিধি গণনার হিসাবে অন্য প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে থাকা প্রার্থী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন।
এদিকে, ফ্লোরিডার আদালতের বিচারক মি. ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্লাসিফায়েড ডকুমেন্টস বা গোপন নথি রাখার মামলা বাতিল করে দিয়েছেন।
রিপাবলিকান পার্টির এই কনভেনশনে আসা অতিথির মধ্যে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকেও দেখা গেছে, যিনি ব্রিটেনে এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে হেরে গেছেন।
ফাইট! ফাইট! ফাইট!
কনভেনশনে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন হেঁটে আসছিলেন এবং যখন ভিআইপি সেকশনের সিঁড়ি ভেঙ্গে মঞ্চে উঠছিলেন তখন প্রথম হাত মেলান টাকার কার্লসনের সাথে, যিনি ডানপন্থী মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।
এরপর তিনি যখন তার রানিং মেট জেডি ভ্যান্সের পাশে যান, তখন তার কানের ব্যান্ডেজ দেখা গেলে দলীয় সমর্থকরা চিৎকার করে স্লোগান দিতে থাকেন – ‘ইউ এস এ! ইউ এস এ! এবং এরপর তারা ‘ফাইট! ফাইট! ফাইট!’
এ সময় তারা মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে স্লোগান দিতে থাকেন।
পেনসিলভানিয়ায় গুলিতে আহত হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশের দিকে তুলেছিলেন, সেভাবে।
আকর্ষণের কেন্দ্রে ট্রাম্প
কনভেনশনস্থল থেকে বিবিসির কেয়লা এপস্টেইন জানিয়েছেন, কনভেনশনের প্রথম দিনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিত হওয়াটা ছিলো বিস্ময়কর এবং এর দৃশ্যমান প্রভাব হলো সেখানে একটি আবেগময় পরিস্থিতির তৈরি হয়।
অনুষ্ঠানস্থলে আসা ৩৫ বছর বয়সী ইরিন লুকাস বলেছে, কনভেনশনের ফ্লোরে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখে তার নিজের যে অনুভূতি হয়েছে – তাহলো ‘একজন আমেরিকান ও একজন রিপাবলিকান হিসেবে গর্বিত’।
“তিনি ছিলেন সবার আকর্ষণের কেন্দ্রে, সবাই দেখছিলো যে তিনি হেঁটে যাচ্ছেন,” বলছিলেন তিনি।
অরেগনের ডেলিগেট জেসিকা ডেভিডসন বলেছেন মি. ট্রাম্পের কানের ব্যান্ডেজ তাকে আবেগাপ্লুত করেছে। “কারণ কেউ তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে।”
তার বিশ্বাস হত্যাচেষ্টার ঘটনা মি. ট্রাম্পকে প্রার্থী হিসেবে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
সমালোচক থেকে রানিং মেট
“আমি কখনোই ট্রাম্পের লোক নই। আমি কখনোই তাকে পছন্দ করি না।”
“হায় ঈশ্বর! কেমন ইডিয়ট!”
“আমি তাকে নিন্দনীয় মনে করি।”
জেডি ভ্যান্স ২০১৬ সালে এক সাক্ষাতকারে ও টুইটারে এসব বলেছিলেন , যখন তার স্মৃতিকথা ‘হিলবিলি এলিজি’র প্রকাশনা তাকে খ্যাতি এনে দেয়।
ওই বছরই ফেসবুকে তিনি তার এক সহযোগীকে লিখেছিলেন যে, “তিনি ভাবছেন যে ট্রাম্প কি ‘গাধা নাকি আমেরিকার হিটলার’।”
কিন্তু এমন অবস্থানে থাকার পরের কয়েক বছরে মি. ভ্যান্স নিজেকে মি. ট্রাম্পের একজন সমথর্ক ও সহযোগীতে পরিণত করেন।
ওহাইও থেকে প্রথমবারের মতো সিনেটর হওয়ার পর, তিনি এবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রানিং মেট হিসেবে মনোনীত হলেন।
ওহাইওর এক শহরে তিনি যখন জন্মগ্রহণ করেছেন, তখন তার মা লড়াই করছিলেন নেশার থেকে বেরিয়েআসার জন্য, আর তার বাবা তাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। মূলত দাদা দাদীর কাছে বড় হয়েছেন মি. ভ্যান্স।
অ্যান্থনি জার্চারের বিশ্লেষণ
সোমবার রিপাবলিকান পার্টির কনভেনশনে বক্তা ছিলেন প্রায় এক ডজনের মতো। এর মধ্যে রাজনীতিক, কনজারভেটিভ অ্যাক্টিভিস্ট ও সাধারণ নাগরিকরা ছিলেন।
কিন্তু এই কনভেনশনের যিনি তারকা, তিনি তখনো মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়াননি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন সন্ধ্যায় সেখানে যান, সমর্থকেরা উল্লাসে সবাই ফেটে পড়ছিলেন। মুহুর্মুহু হাততালি ও স্লোগান দিচ্ছিলো এ সময়ে তারা।
এটা ছিলো এমন এক মূহুর্ত যখন সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছিলো। সদ্য বুলেটের ছোঁয়া পাওয়া বীরকে স্বাগত জানানোর যেন এটা ছিলো একটা সুযোগ।
হামলার প্রমাণ ছিলো একেবারেই দৃশ্যমান। কারণ সাবেক প্রেসিডেন্টের কানে ব্যান্ডেজ ছিলো।
পরের কয়েক ঘণ্টা তিনি ভিআইপি সেকশনে বসেছেন, তার রানিং মেট জেডি ভ্যান্সের পাশে। সেখানে তার পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন।
যখন সেখানকার বড় পর্দায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখানো হচ্ছিলো ততবারই সমবেত লোকজনকে উল্লাস করতে দেখা যায়।
কনভেনশনের তৃতীয় দিনে ডেলিগেট ও জাতির উদ্দেশ্যে কথা বলবেন মি. ট্রাম্প এবং তখনই তিনি দলের মনোনয়ন গ্রহণ করবেন।
তবে এই সন্ধ্যায় এটি নিশ্চিত হয়েছে যে কনভেনশনের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন মি. ট্রাম্প নিজেই।