প্যারিস অলিম্পিকের জমকালো উদ্বোধন
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জমকালো উদ্বোধন হলো ২০২৪ অলিম্পিকের। হাজার হাজার ক্রীড়াবিদের সিন নদীতে মার্চ পাস্টের পাশাপাশি ব্রিজ, নদী তীর ও ছাদগুলো থেকে লাইভ পারফরমেন্সে হয়ে গেলো দর্শনীয় ও বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
স্টেডিয়ামের পরিবর্তে নদীপথে প্রথমবারের মতো শুরু হলো ‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। প্রায় চার ঘণ্টার অনুষ্ঠানে মশাল প্রজ্বলন করেন ফরাসি জুডো গ্রেট টেডি রাইনার এবং স্প্রিন্টার ম্যারি-হোসে পেরেক এবং তারপর প্যারিসের আকাশে সেটি ওড়ানো হয় গরম বাতাসের বেলুনে।
৮৫টি নৌকা ও বার্জে করে ৬৮০০ অ্যাথলেটের ২০৫টি দল মার্চপাস্টের আগে অস্টারলিৎয সেতু থেকে লাল, সাদা ও নীল – এই তিন রংয়ের আতশবাজি ছিলো চোখ ধাঁধানো।
অনুষ্ঠান জুড়ে সারপ্রাইজ পারফরমেন্স ছিলো আমেরিকান শিল্পী লেডি গাগার। আর সাথে ছিলো কানাডিয়ান আইকন সেলিন ডিওনের আবেগময় প্রত্যাবর্তন।
তবে দিনটি শুরু হয়েছিলো ফ্রান্সের রেল নেটওয়ার্কে হামলার ঘটনা আর বৃষ্টির মধ্য দিয়ে। তুমুল বৃষ্টির কারণে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাতেও কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে অ্যাথলেটদের রেইনকোর্ট বা ছাতা বহন করতে হয়েছে পরিকল্পিত পোশাকের সাথে। তা সত্ত্বেও প্রায় দুই হাজার সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী ও অন্য কলাকুশলীদের মাধ্যমে ফরাসি ইতিহাস, শিল্পকলা ও ক্রীড়াকে তুলে ধরার প্রাণবন্ত আয়োজন মোটেও বাধাগ্রস্ত হয়নি।
নৌপথে প্যারেডের শেষ দুটি নৌকা ছিলো – প্রথমটি ২০২৮ সালের আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র আর তারপরেরটি ফ্রান্সের, যেখানে বেশ বড় সংখ্যার অ্যাথলেটরা ছিলেন।
হেলেন গ্লোভার আর টম ড্যালি গ্রেট ব্রিটেনের পতাকা বহন করেছেন প্যারিসে, যেখানে তৃতীয় বারের মতো এটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে একশ বছরের মধ্যে এই প্রথম অলিম্পিক আয়োজন করছে দেশটি।
তবে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটের মধ্যেই ৩৩তম অলিম্পিক শুরু হলো। ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) প্রেসিডেন্ট থমাস বাখ অ্যাথলেটদের উদ্দেশ্যে বলেছেন তারা এখন “তারা এমন একটি অনুষ্ঠানের অংশ যা পুরো বিশ্বকে শান্তিতে ঐক্যবদ্ধ করে”।
দশ হাজার পাঁচশর বেশি অ্যাথলেট ৩২টি ক্রীড়া ইভেন্টে প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে এবার, যার সমাপ্তি হবে আগামী এগারই অগাস্ট।
অলিম্পিকের এবারের শুরুর দিনটা প্যারিসের কেন্দ্রের সড়কগুলো ছিলো ব্যারিকেড দেয়া, মেট্রো স্টেশন ছিলো বন্ধ এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়েছিলো হাজার হাজার পুলিশ, সৈন্য এবং অন্য গার্ডদের।
তারপরও নাশকতাকারীরা পাঁচটি জায়গায় হামলা করেছে যেগুলোতে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত করা ছিলো না।
দেশটির রাষ্ট্রীয় রেল সংস্থা এসএনসিএফ বলেছে নাশকতাকারীরা শুক্রবার রাত দেড়টা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে কমপক্ষে পাঁচটি সিগন্যাল বক্স এবং আরও কিছু বৈদ্যুতিক স্থাপনা ভাংচুর করেছে বা ভাংচুরের চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে একটি ছিলো প্যারিসের ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে কোর্তালাইন।
এসএনসিএফ বলছে তাদের সেবা ব্যাহত করতে ব্যাপক ও বড় ধরণের হামলা হয়েছে। এসময় অগ্নিসংযোগ ছাড়াও কেবল লাইন চুরি হয়েছে আরও একটি জায়গায়।
উত্তরাঞ্চলীয় শহর আরাসের কাছে ওই জায়গাটি ছোট হলেও এখানে হাই স্পিড টিজিভি নেটওয়ার্কের একটি বড় জংশন আছে।
প্যারিসের দক্ষিণ পূর্ব এলাকায় আরো একটি হামলার প্রস্তুতি ভণ্ডুল করে দিয়েছে নিরাপত্তাকর্মীরা।
এসএনসিএফ এর প্রদান জিয়ান পিয়েরে ফারাদো বলেছেন একটি ‘পূর্ব পরিকল্পিত ও সমন্বিত’ হামলা হয়েছে যাতে এখন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সংস্কার কাজ করতে হবে।
ছাব্বিশে জুলাইতে ফরাসিরা অনেকে ছুটি কাটাতে শহরের বাইরে গিয়েছেন। একই দিন অলিম্পিক শুরু হলো যার জন্য কয়েক বছর ধরে কাজ হয়েছে।
ফলে প্যারিসের বড় দুটি রেল কেন্দ্র ছিলো লোকজনে পূর্ণ। এর মধ্যে একটি স্টেশনে লোকজন বিলম্বিত ট্রেনের জন্য ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করছিলো। যাদের কারও কারও গন্তব্য ছিলো লন্ডন, ব্রাসেলস কিংবা আমস্টার্ডম।
হাই স্পিড টিজিভি নেটওয়ার্ক প্যারিস থেকে লিল, পশ্চিম দিকে লি মানস এবং পূর্ব দিকে স্ট্রাসবার্গ বন্ধ হয়ে যায়।
এসএনসিএফ ট্রেন গুলো ডাইভার্ট করে দেয় যার অর্থ হলো দীর্ঘ বিলম্বিত যাত্রা। কিন্তু এটি নেটওয়ার্ক সচল রাখতে সহায়তা করেছে।
দুপুরের দিকে ওই তিন লাইন ধীরে ধীরে সচল হতে শুরু করে। যদিও কয়েকটি ট্রেনযাত্রা বাতিল করতে হয়েছে আর বিলম্বিতও হচ্ছিলো প্রায় দু ঘণ্টা।
পরিবহন মন্ত্রী প্যাট্টিস ভারগ্রিয়েটে বলেছেন “এসব জায়গায় অগ্নিসংযোগ ছিলো পরিকল্পিত। হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের ব্যবহৃত ভ্যান পাওয়া গেছে”।
পরিষ্কার এই নাশকতায় দিনটি মারাত্মক বাধাগ্রস্ত হলো এমন এক সময় যখন প্যারিস বিশ্বকে তার সর্বোচ্চটাই দেখাবার চেষ্টা করছিলো।