তরুণরাই চেঞ্জার, মেকার এবং বিল্ডার

Spread the love

আমাদের মধ্যে এমন একটা ধারণা দেয়া হয়েছিলো যে আমার দেশের তরুণরা জি জেনারেশন, তারা শুধু মোবাইল, ট্যাব আর ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে পরে আছে। তারা কিছুই জানে না, পারে না, করতেও চায় না।আজকের প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে বুঝা যায় আসলে তরুণরা যাতে সমাজ সংস্কারের কাজে এগিয়ে না আসে, যাতে তারা গঠনমূলক কাজ করতে না পারে, যাতে তারা দেশের কল্যানে ভূমিকা না রাখতে পারে, সে জন্য তাদেরকে কিভাবে দূরে রাখা যায়, তাদেরকে ডিমোরালাইজড করা যায়, এবং তাদেরকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা যায়, তজন্য একশ্রেণীর লোক সর্বদা তরুণ-যুবকদেরকে নিয়ে নেতিবাচক ভাইব উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে সমাজে ছড়িয়ে দিতো।

আসলে তা কিন্তু ঠিক না, একদম ঠিক না, আমাদের তরুণরা যেমন ঘরে বসে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে, ঠিক তেমনি সমাজ ও জাতি গঠনে রাখতে পারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। ২০১৮ সালে আমাদের তরুণরা সর্বপ্রথম আবির্ভুত হয় এক ভিন্নরূপে, সে সময়ে তারা কোটা সংস্কার আন্দোলন করে সফলভাবে, পাশাপাশি নিরাপদ সড়ক আন্দোলন করেছে অত্যান্ত সুশৃঙ্খলভাবে, যা নজর কেড়েছিল দেশসহ বিশ্ববাসীর।ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিলো তারা। দেশবাসীও তাদেরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। সেই তরুণ-যুবকরা এবার ২০২৪ সালে যৌক্তিক, সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী সরকারকে মসনদ চুত্য করেছে, পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। দেশবাসীকে জানান দিয়েছে যে, নিজেরা যদি লক্ষ্য ঠিক রাখতে পারে, নিজেদের কাজের উপর যদি সৎ থাকে, নিজেদের দায়িত্বটা যদি নিজেরাই ঠিক করে, আর অর্থ, লোভ-লালসা, পদ-পদবি, যদি তাদের কাছে তুচ্ছ হয় তাহলে যেকোনো সমস্যা, জঞ্জাল, দূর করা তাদের কাছে ব্যাপার না। তার প্রমান তারা আবারো রাখলো, গত পনেরো বছরের ঘুনে ধরা সমাজে অধিকার বঞ্চিতদেরকে তাদের অধিকার আদায়ের মাধ্যমে। তারা ছিলো তাদের লক্ষপানে অটুট, ইস্পাতের মতো দৃঢ় যার কারণে শত শত লাশ,অন্যায় অত্যাচার, জেল জুলুম, আটক, কোনো কিছুই তাদেরকে দেশবাসীর অধিকার আদায় থেকে দূরে রাখতে পারেনি। ঠিক ঠিকই তারা দেশবাসীর অধিকার আদায় করেছে, অত্যাচারী, স্বৈরাচার, একনায়ক শাসককে ক্ষমতা থেকে সরাতে পেরেছে মাত্র কয়েকদিনের দিনের এক সুশৃঙ্খল আন্দোলনের মধ্যদিয়ে।

৫ই আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হয়, স্বৈরাচারী দেশ থেকে পলায়ন করে, আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাও পালায় এবং গাঢাকা দেয়। আওয়ামী অত্যাচার, জেলখানা, আয়নাঘর, গুম, ভয়-ত্রাসের রাজত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে মানুষ নতুন করে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করতে শুরু করেছে, স্বাধীন বাংলাদেশের নির্মল বাতাসে প্রানভরে শ্বাস নিতে পেরেছে আনন্দের সাথে সবে মাত্র। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ, উল্লাস, উচ্ছাস যেন বিশ্ব জয়ের মতো।

এই আনন্দ, উল্লাসের দিনে কতিপয় দুর্বৃত্তরা রাস্তা, ঘাট, গণভবন, সংসদ ভবন ও কতিপয় স্থাপনার ভাঙচুর ও লুটতরাজ করে যা ছিলো তরুণদের অহিংস আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের বিপরীত। অবাক করার বিষয় হলো যখনই ভাঙচুর ও লুটতরাজের বিষয়টি তরুণ-যুবকদের চোখে পড়েছে, সামনে আর যাতে কোনো অঘটন না ঘটে, ফারদার কোনো ড্যামেজ না হয় সেইজন্য সাথে সাথে তারা কার্যকরী ব্যাবস্থা হাতে নেয়।মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে তারা সংসদ ভবনসহ শহরের রাস্তা ঘাট, বড় বড় স্থাপনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে, এমনকি যানবাহন চলাচল ও ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টকে খুব সুন্দরভাবে পরিচালনা করে দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দেয়।দেশের প্রধান প্রধান সড়কের রাস্তার দৃশ্যই পাল্টে গেছে, যেন অচেনা এক শহর। সবাই কি সুশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে হাট-বাজারেও। মাত্র একদিনের মাথায় দ্রব্যমূল্য কমতে শুরু করেছে।

আর আমরা দেশবাসীরা যেন অবাক হয়ে দেখছি আর মুগ্ধদের মুগ্ধতায় আরো বেশি উদ্বেলিত হচ্ছি, হায় এই তরুণ সমাজ এতদিন কোথায় ছিলো, তারা এখন কোথা থেকে আসলো, কে শেখালো তাদের এই দায়িত্ববোধ, কে শেখালো তাদের এই শৃঙ্খলাবোধ, কে শেখালো এ দেশপ্রেম, কে শেখালো দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি তাদের এই মমত্ববোধ। তারাইতো সমাজ ও দেশের চেঞ্জার, মেকার এবং বিল্ডার।

লেখকঃ ব্যারিষ্টার ওয়াহিদ মুহাম্মদ মাহবুব
০৭/০৮/২০২৪, লন্ডন।


Spread the love

Leave a Reply