ফেসবুক অ্যাপসে আড়িপাতা টুলস : দাবি মার্কিন প্রফেসরের

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্ক:

স্মার্টফোনে অ্যাপসের বিশেষ টুলের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর সকল ফোনালাপ এমনকি যেকোন ধরনের কথোপকথন শুনতে পায় ফেসবুক। এমনটাই অভিযোগ করেছেন এক মার্কিন প্রফেসর। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডার গণ যোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক কেলি বার্নস দাবি করেন ফোনের মাইক্রোফোনের মাধ্যমেই ব্যবহারকারীর কথোপকথনে আড়ি পাতছে ফেসবুক।

তবে ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে ফেসবুক দাবি করছে, অ্যাপসটি ফোনের আশপাশে কী ঘটছে তা শুনে না। কিন্তু অ্যাপসটি চিহ্নিত করে মানুষ কী দেখছে বা শুনছে এবং কী পোস্ট করা হচ্ছে। এর ভিত্তিতে ফেসবুক নিজেদের বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ব্যবহারকারীর ওয়ালে প্রদর্শন করছে। যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েক বছর ধরেই এটা করছে ফেসবুক।

কিন্তু অধ্যাপক বার্নসের দাবি, ফেসবুক অ্যাপসটির মাধ্যমে শুধু যে ব্যবহারকারীদের পছন্দের ব্যাপারগুলো চিহ্নিত করছে তা নয়, এর মধ্য দিয়ে তারা ফোন ব্যবহারকারীর সব ফোনালাপ শুনছে। এই ফোনালাপের ভিত্তিতে তারা ব্যবহারকারীর ওয়ালে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করছে। তিনি জানান, ফেসবুকের এ বিষয়টি পরীক্ষার জন্য তিনি ফোন পাশে রেখে বেশ কিছু বিষয়ে কথা বলেন। পরে তিনি দেখতে পান, তার ফেসবুক ওয়ালে আলাপ সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে।

২০১৪ সালে ফেসবুক যুক্তরাষ্ট্রে ফোনালাপ ও ফোনের আশপাশের সব শব্দ শোনার এই টুলটি ব্যবহার করা শুরু করে। এতে তৈরি হওয়া বিতর্কের প্রেক্ষিতে ফেসবুক জানিয়েছিল, তারা ফোনের আশপাশের সব শব্দ শুনছে না এবং তা রেকর্ড করছে না। তবে তারা ফোনের আশপাশে যা ঘটছে তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করে।

এর আগে বেলজিয়ামের পুলিশ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের রিয়্যাকশন টুল ব্যবহার করে অনুভুতি প্রকাশ না করার আহ্বান জানিয়েছিল।  এর পেছয়ে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণও উল্লেখ করেছে তারা। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে লাইকের পাশাপাশি ফেসবুকে আরও পাঁচটি উপায়ে নিজের আবেগ প্রকাশের সুযোগ পান ব্যবহারকারীরা। এগুলো হলো লাইক, লাভ, হাহা, ওয়াও, স্যাড ও অ্যাংরি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যবহারকারীদের কাছে এখনও ফেসবুকের রিঅ্যাকশন বাটনের গুরুত্ব কম। ফেসবুকে ৯৭ শতাংশ লাইক, কমেন্ট আর শেয়ার হয়। সে তুলনায় রিঅ্যাকশন বাটনের ব্যবহার খুব কম। ফেসবুকের লাইক বাটনের ওপর মাউস রেখে বা আঙুল দিয়ে চাপ দিয়ে ধরে রাখলে রিঅ্যাকশন বাটন আসে। সেখান থেকে পাঁচটি রিঅ্যাকশন বাটনের মধ্যে যেকোনও একটি অনুভুতি প্রকাশ করা যায়।

বেলজিয়ামের পুলিশের দাবি, এ বাটনগুলো ব্যবহার করা হলে তা ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা নষ্ট করতে পারে। কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি পর্যবেক্ষণ করলে যে কেউ ব্যবহারকারীর মানসিক অবস্থা জানতে পারবে। আর কোনো বিজ্ঞাপনদাতাও এতে বুঝে যাবে ঠিক কোন সময়টিতে তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দিলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এতে যখন কারও মন ভালো থাকবে তখন হয়ত বিজ্ঞাপনের পরিমাণও বেড়ে যাবে।  বেলজিয়ামের পুলিশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, ‘আইকনগুলো শুধু আপনার অনুভূতির কথাই প্রকাশ করে না এটি আপনার প্রোফাইলে বিজ্ঞাপনের কার্যকারিতাও প্রকাশ করে।’

গত বছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ব্রিটেনের একটি সংসদীয় কমিটির এমপিরা জানিয়েছেন, ফেসবুক সরাসরি ব্যবহারকারীদের অজান্তেই ছবি তুলতে ও ভিডিও রেকর্ড করতে পারবে। কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ফেসবুক মেসেঞ্জার মোবাইল অ্যাপস বিশ্বের প্রায় ২০ কোটি লোক ব্যবহার করছে।  এসব ফেসবুক ব্যবহারকারীর মোবাইল, ট্যাব, স্মার্টফোনের মালিকদের অনুমতি ছাড়াই ছবি তোলা ও ভিডিও রেকর্ড করতে পারবে যে কোনও সময়।

কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু মিলার এমপি জানান, পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারকারীদের অনুভূতি নিয়ে ফেসবুকের এ পরীক্ষা উদ্বেগজনক। যদিও টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনে সম্মত হয়ে যে কেউ ফেসবুক ব্যবহার করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বেশিরভাগ লোকই না পড়েই এতে সম্মতি দেয়। কারণ এগুলো অনেক দীর্ঘ এবং আইনি ব্যাপার যে তা বুঝতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করা লাগবে।

ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ ফেসবুকের বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই ছিলো। কুকিজ ব্যবহার করে ফেসবুক ব্যবহারীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের তথ্য সংগ্রহের অনেক সমালোচনাও হয়েছে। এমনকি অভিযোগ উঠেছিল, স্মার্টফোনের অ্যাপসের মাধ্যমে ফেসবুক মানুষের অবস্থান চিহ্নিত করছে।


Spread the love

Leave a Reply