‘দ্য গ্রেটেস্ট’ মোহাম্মদ আলীর চির বিদায়
বাংলা সংলাপ ডেস্ক:
চলে গেলেন কিংবদন্তি বক্সার মুহাম্মাদ আলি। যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে অ্যারিজোয়ানার ফিনিক্সের একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ‘সর্বকালের সেরা’ খ্যাত এই মুষ্টিযোদ্ধা। মৃত্যুকালে তার বয়ষ হয়েছিল ৭৪ বছর।
তার মৃত্যুতে শোকাহত সারা বিশ্ব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ শোক প্রকাশ করেছেন প্রায় সকল বিশ্বনেতারা। তাঁর স্মরণে বাণী দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে।
পরিবার ও চিকৎসকদের সূত্রে জানা যায়, সেপটিক শক বা সংক্রমণ জটিলতায় আলীর মৃত্যু হয়েছে। সেপটিক শক এমন একটি অবস্থা যার ফলে শরীরের রক্তের চাপ বিপদজনক মাত্রায় নেমে আসে। যাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের এ ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
মোহাম্মদ আলীর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আলীর সেপটিক শকের সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ণয় করতে পারেননি তারা। তবে পারকিনসন্স রোগের কারণে মোহাম্মদ আলীর শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ক্রমশ জটিল হচ্ছিলো।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, কেনটাকির লুইসভিলে শুক্রবার নিজের শহরে মোহাম্মদ আলীর শেষকৃত্য হবে। বিবিসি তার পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, আলীর ইচ্ছানুযায়ী ইসলামিক রীতি মেনেই শেষকৃত্য হবে। শেষকৃত্যের পর কেভ হিল কবরস্থানে আলীকে সমাহিত করার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে ভয়েস অব আমেরিকা।
১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি লুইসভিলায় জন্মগ্রহণ করেন আলী। ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে লাইট হেভিওয়েড বক্সিংয়ে সোনা জয়ের মধ্য দিয়ে মোহাম্মদ আলী খ্যাতি অর্জন করেন। এর পরপরই পেশাদার মুষ্টিযুদ্ধে লড়েন আলী। ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ বলে খ্যাত এই মুষ্টিযোদ্ধা ১৯৬৪ সালে মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা সনি লিস্টনকে হারিয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন। প্রথম মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে তিনবার হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন আলী। ৬১টি মুষ্টিযুদ্ধের ৫৬টিতেই জয় পান তিনি, এর মধ্যে ৩৭টিই ছিল নকআউট (প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী)। ১৯৮১ সালে অবসর নেন মোহাম্মদ আলী।
১৯৯৯ সালে ক্রীড়া সাময়িকী ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড’ মোহাম্মদ আলীকে ‘স্পোর্টসম্যান অব দ্য সেঞ্চুরি’ ঘোষণা করে। একই বছর বিবিসি তাঁকে ঘোষণা করে ‘স্পোর্টস পার্সোনালিটি অব দ্য সেঞ্চুরি’। মুষ্টিযুদ্ধের বাইরেও বিখ্যাত ছিলেন মোহাম্মদ আলী। একদিকে তিনবারের বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন, অন্যদিকে ছিলেন ন্যায়-সমতা-যুদ্ধবিরোধিতা-বর্ণবাদবিরোধিতার একজন জোরালো কণ্ঠস্বর।
বাংলাদেশে মোহাম্মদ আলী
১৯৭৮ সালে স্ত্রী ভেরোনিকাকে সঙ্গে নিয়ে এক সপ্তাহের সফরে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী। প্রায় ২০ লাখ মানুষ তখন ঢাকায় তাকে স্বাগত জানায়। তাকে সম্মাননা জানাতে দেওয়া হয় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কক্সবাজারে তাকে দেওয়া হয় ২ একর জমি। তিনি এর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যদি আমাকে আমেরিকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে এখন আমার আরেকটি বাড়ি আছে। এছাড়াও আলীকে সম্মান জানাতে বাংলাদেশের বক্সিং স্টেডিয়াম তার নামে নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশে মুগ্ধ আলী দেশে ফিরে গিয়ে সবাইকে বলেছিলেন, স্বর্গ দেখতে চাইলে বাংলাদেশে যাও।