জোটের রাজনীতির লাভ-ক্ষতি ও গণঅধিকার পরিষদ

Spread the love

আশফাকুর রহমান শাওন:

৫ই আগষ্টে শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। সামনে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে চলছে নানা মেরুকরণ। বিভিন্ন সমীকরণে ভোটের রাজনীতিতে জোট ভাঙা-গড়ার খেলা শুরু হয়েছে বা হবে।

আমাদের এ অঞ্চলে জোটের রাজনীতি প্রথম দেখা গিয়েছিল ১৯৫৪ সালে। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্ট পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত নানা জোট হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মাওলানা ভাসানীর সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি, ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে ভাসানীর নেতৃত্বে আরেকটি সাতদলীয় জোট , ১৯৭৩ সালের ২০ এপ্রিল ১১টি সংগঠন নিয়ে সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট। ১৯৭৫ সালে পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট এবং এম এ জি ওসমানীর নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট গঠিত হয়। ১৯৮০ সালের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১০–দলীয় জোট, এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ১৯৮৩ সালে আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হয় ১৫–দলীয় জোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে গঠিত হয় ৭-দলীয় জোট, ১৯৮৮ সালে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে নামসর্বস্ব দলের সমন্বয়ে ১৪০ দলের সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ) গঠন, এরশাদের পতনের পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত কিংবা আ.লীগ- জাতীয় পার্টি যুগপৎ । আবার ১৯৯৯ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট, ২০০৫ সালে ১১–দলীয় বাম জোট পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪–দলীয় জোট বা মহাজোট, ২০১২ সালের চারদলীয় জোট বিলুপ্ত করে বিএনপির নেতৃত্বে ১৮–দলীয় জোট।

জোটের রাজনীতির ইতিহাস স্বরন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবদি জোটের রাজনীতি চলতে থাকলেও তা কখনও দেশের মানুষের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারেনি বরং গণতন্ত্র বার বার হুমকির মুখে পড়েছে। জোটের রাজনীতির কারনে গত ৫৫ বছরেও পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বলয় থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশের মানুষ। নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে দেশে প্রায় ৭০টি রাজনৈতিক দল রয়েছে এরমধ্যে এপর্যন্ত নিবন্ধিত দল হচ্ছে ৫৩টি। পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির আনুগত্যের কারনে এখন পর্যন্ত কোন দলই একক শক্তি হিসেবে নিজেদেরকে জনগণের কাছে উপস্থাপন করতে পারেনি। জোটগত রাজনীতির কারনে বাংলাদেশে প্রধানত দ্বিদলীয় শাসনব্যবস্থা বিরাজমান। এখানে বিএনপি এবং আ.লীগ পালাক্রমে দেশ শাসন করে থাকে।

৫ই আগষ্টে শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। সামনে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে চলছে নানা মেরুকরণ। বিভিন্ন সমীকরণে ভোটের রাজনীতিতে জোট ভাঙা-গড়ার খেলা শুরু হয়েছে বা হবে।

আমাদের এ অঞ্চলে জোটের রাজনীতি প্রথম দেখা গিয়েছিল ১৯৫৪ সালে। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্ট পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত নানা জোট হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মাওলানা ভাসানীর সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি, ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে ভাসানীর নেতৃত্বে আরেকটি সাতদলীয় জোট , ১৯৭৩ সালের ২০ এপ্রিল ১১টি সংগঠন নিয়ে সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট। ১৯৭৫ সালে পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট এবং এম এ জি ওসমানীর নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট গঠিত হয়। ১৯৮০ সালের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১০–দলীয় জোট, এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ১৯৮৩ সালে আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হয় ১৫–দলীয় জোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে গঠিত হয় ৭-দলীয় জোট, ১৯৮৮ সালে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে নামসর্বস্ব দলের সমন্বয়ে ১৪০ দলের সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ) গঠন, এরশাদের পতনের পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত কিংবা আ.লীগ- জাতীয় পার্টি যুগপৎ । আবার ১৯৯৯ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট, ২০০৫ সালে ১১–দলীয় বাম জোট পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪–দলীয় জোট বা মহাজোট, ২০১২ সালের চারদলীয় জোট বিলুপ্ত করে বিএনপির নেতৃত্বে ১৮–দলীয় জোট।

জোটের রাজনীতির ইতিহাস স্বরন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবদি জোটের রাজনীতি চলতে থাকলেও তা কখনও দেশের মানুষের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারেনি বরং গণতন্ত্র বার বার হুমকির মুখে পড়েছে। জোটের রাজনীতির কারনে গত ৫৫ বছরেও পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বলয় থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশের মানুষ। নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে দেশে প্রায় ৭০টি রাজনৈতিক দল রয়েছে এরমধ্যে এপর্যন্ত নিবন্ধিত দল হচ্ছে ৫৩টি। পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির আনুগত্যের কারনে এখন পর্যন্ত কোন দলই একক শক্তি হিসেবে নিজেদেরকে জনগণের কাছে উপস্থাপন করতে পারেনি। জোটগত রাজনীতির কারনে বাংলাদেশে প্রধানত দ্বিদলীয় শাসনব্যবস্থা বিরাজমান। এখানে বিএনপি এবং আ.লীগ পালাক্রমে দেশ শাসন করে থাকে।

আ.লীগের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্হার পতনে যুগপৎ আন্দোলনে গণঅধিকার পরিষদ অন্যান্য দলের ন্যায় বিএনপির সাথে রাজপথে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছে এবং তখনকার প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরী ছিল। পরিবর্তীত পরিস্হিতিতে জোটগত বা যুগপৎ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা নেই। ইদানিং কালে জাতীয় সরকার নামে এক ধরনের প্রলোভনের ছক তৈরী করা হচ্ছে । বিএনপির দেয়া রুপরেখায় বলা হয়েছে, নির্বাচনের মাধ্যমে জয়লাভের পর জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ফ্যাসিস্ট সরকার হঠানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হইবে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি যদি জয়লাভ করতে পারে সেক্ষেত্রে তারা যদি চায় জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করতে পারে,সেটা হবে তাদের দলীয় সিন্ধান্ত। কিন্তু জোট কিংবা জাতীয় সরকার নামের প্রলোভনের ফাদে যারা পা দিবে তাদের দলীয় রাজনীতি নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকবে এবং দিনশেষে এর সুফল ভোগ করবে কেবল বিএনপি। সুতরাং বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় সরকার নামে কি আবার আমরা পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির আনুগত্যের দিকে যাব?

জুলাই-আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার ১ মাসের কিছু বেশি সময় দেশ পরিচালনা করছে। রাষ্ট্র সংস্কার দুরের কথা, রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি কিন্তু কতিপয় দল চাচ্ছে এই সরকার যেন অনতিবিলম্বে নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করে দেয়। যেখানে গত ৫৫ বছরে একটা অবাধ,সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্হা তৈরী করা যায়নি সেখানে কয়েক মাসে সেটা কি আদৌ সম্ভব ?

গণঅধিকার পরিষদ এই মুহুর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময়ী একটি দল। এই দলের উত্থান মূলত রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ প্লাটফর্মে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে আজকের গণঅধিকার পরিষদ অনেক প্রতিকূল পরিস্হিতি মোকাবেলা করে এপর্যন্ত আসতে হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে এই দলের যাত্রা শুরু হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই জাতীয় নির্বাহী পরিষদ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত যারা এই দলের নেতা-কর্মী এবং সমর্থক তাদের বৃহৎ অংশ তরুণ যা এই দলের ভিত্তি মজবুত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে ।

গতানুগতিক পরিবারতান্ত্রিক দ্বিদলীয় রাজনীতির বাহিরে ভিন্ন ধারার রাজনীতি প্রতিষ্টার লক্ষ্যে গঠিত হওয়ায় আত্নপ্রকাশের সাথে সাথে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি এবং জনমত তৈরী করতে পেরেছে গণঅধিকার পরিষদ।

দল হিসেবে যাত্রার শুরুথেকেই নিজেদেরকে গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারার বাহিরে ভিন্ন ধারার রাজনীতি প্রতিষ্টা, একক ভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনের আভাস দিয়েছিলেন ভিপি নুরুলহক নুর। ফলে দল, দলের অঙ্গসংঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসাহ এবং সাধারণ মানুষের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। আ.লীগ,বিএনপি দুই দলই বার বার ক্ষমতায় থেকেও মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি যার ফলশ্রুতিতে মুদ্রার এপিট ওপিট দ্বিদলীয় শাসনব্যবস্থা দেশের মানুষ আর চায় না।

তবে, বিএনপি চাইবে যুগপৎ আন্দোলনে যেসব দল তাদের সাথে ছিল, আগামী নির্বাচনেও তারা সংঙ্গে থাকুক।
রাজনীতির নতুন সমীকরণে ভোটের রাজনীতিতে পুরনো দল গুলোর মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে এই মুহুর্তে বিএনপির সামনে বড় কোন রাজনৈতিক প্রতিযোগী না থাকলেও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্হায় প্রতিকূল পরিস্হিতিতে ঠিকে থাকা ভিপি নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ চিন্তায় ফেলতে পারে বিএনপিকে। সে কারনে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কৌশলগত কারনে জোট বা সমোঝতার রাজনীতির মাধ্যমে গণঅধিকার পরিষদকে নিয়ে খেলতে চাইবে বিএনপি, যেভাবে আ.লীগ ব্যবহার করেছিল জাতীয় পার্টিকে । পরিবর্তিত পরিস্হিতিতে আগামী নির্বাচনে সমোঝতা বা জোট কিংবা জাতীয় সরকার নামক প্রলোভনের কারনে বিএনপি ঘেষা রাজনীতি হুমকির মুখে ফেলবে গণঅধিকার পরিষদের ভবিষ্যৎ।

নতুন বাংলাদেশকে পরিবারতান্ত্রিক দ্বিদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের ব্যলটে নৌকা, ধানের শীষ এর বাহিরে ট্রাক মার্কা নিশ্চিত করা হবে গণঅধিকার পরিষদের সময়উপযোগী জনপ্রিয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অন্যতায় অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যাবে বিশাল সম্ভবনাময় দলটি এবং রাজনীতিতে যুগের পর যুগ ধরে ছোট দল হিসেবেই টিকে থাকতে হবে , বড় দলের ছায়াশক্তি হিসেবে।

লেখক- আশফাকুর রহমান শাওন
রাজনৈতিক কর্মী


Spread the love

Leave a Reply