বাংলাদেশে দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী চান না ৯৫ শতাংশ মানুষ, এসআইপিজি’র জরিপ

Spread the love

দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী চান না ৯৫.৯ শতাংশ মানুষ। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ২ বছর বা আরও কম হওয়া উচিত বলে মনে করেন ৫৩ শতাংশ। ৪৭ শতাংশ মানুষ চান এই মেয়াদ হোক ৩ বছর বা আরও বেশি। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্সের (এসআইপিজি) গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে নাগরিকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য উঠে আসে।

গবেষণায় ৮টি বিভাগের ১৭ জেলার ১ হাজার ৮৬৯ জনের ওপর এই জরিপ করা হয়। যাতে ৫৪ শতাংশ শহরাঞ্চল ও ৪৬ শতাংশ ছিলেন গ্রামাঞ্চলের। যার মধ্যে ৫২ শতাংশ পুরুষ ও ৪৮ শতাংশ নারী। যাদের  মধ্যে ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী ২২ শতাংশ, ২৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী ৬৩ শতাংশ ও ৫০ ঊর্ধ্ব রয়েছেন ১৪ শতাংশ। তারা সকলেই বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ভোটার। অংশগ্রহণকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিরক্ষর ১০ শতাংশ, প্রাথমিক ১৩ শতাংশ, মাধ্যমিক ৩০ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিক ১৮ শতাংশ, স্নাতক ১৯ শতাংশ ও স্নাতকোত্তর ৯ শতাংশ। উত্তরদাতাদের ৪৬ শতাংশ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনিশ্চিত। যেখানে ৫৪ শতাংশ মূলধারার রাজনীতিতে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জরিপে দেখা যায়- ৯৪ শতাংশ অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকলাপে সন্তুষ্ট আর তরুণ প্রজন্ম (জেনজি,  বয়স ১৮-২৭) তাদের সন্তুষ্টি ৯৭ শতাংশ। দেশের সাম্প্রতিক বন্যায় সন্তুষ্ট ৮৬ শতাংশ ও তরুণ প্রজন্ম সন্তুষ্ট ৮৯ শতাংশ।

জরিপে অংশ নেয়া ৫৩ শতাংশ চান ২ বছর বা তার কম সময় অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকুক। আর ৪৭ শতাংশ বলেন ৩ বছর বা তার অধিক। যারা ২ বছর বা এর কম সময়ের কথা বলেছেন তাদের ৮৭ শতাংশ বলেন সরকারের শুধুমাত্র নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া উচিত। এর অধিক সময়ের কথা যারা বলেছেন তাদের ৪২ শতাংশ জরুরি সংস্কার, ২৪ শতাংশ অর্থনৈতিক সংস্কার, ২০ শতাংশ দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও ১৪ শতাংশ রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিবস্থার কথা বলেন।

জরিপে অংশ নেয়া মাত্র ১১ শতাংশের আস্থা রয়েছে পুলিশের ওপর। এ ছাড়াও সিভিল সার্ভিস ৩৮ শতাংশ, নির্বাচন কমিশন ৩৯ শতাংশ, বিচারব্যবস্থা ৪২ শতাংশ, আর্মি ৯২ শতাংশ ও ৯৭ শতাংশ মানুষের অন্তর্বর্তী সরকারের উপর আস্থা রয়েছে। একইভাবে রাজনৈতিক দলের জন্য আইন চান ৯৫.৪ শতাংশ, দলীয় প্রতীক ছাড়া লোকাল গর্ভমেন্ট নির্বাচন চান ৯৪.৬ শতাংশ, একই ব্যক্তি দলীয় প্রধান ও সরকার প্রধান চান না ৯১.৪ শতাংশ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী রাজনীতি বন্ধ চান ৯১ শতাংশ, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার চান ৮৯.৫ শতাংশ, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইন সভা চান ৭৯ শতাংশ এবং ফেডারেল সিস্টেম চান ৭১.৩ শতাংশ।

জরিপের ফলে দেখা যায়, সংবিধানে গুরুতর পরিবর্তন চান ৪৬ শতাংশ, সামান্য পরিবর্তন চান ৩৫ শতাংশ, নতুন লিখিত সংবিধান চান ১৬ শতাংশ এবং সংবিধান অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে ৩ শতাংশ মানুষ। আর ৯৪ শতাংশ চান পুনরায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও ৯৬ শতাংশ চান ফ্লোর ক্রসিং অ্যাক্ট সংশোধন। শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থন আছে ৭২ শতাংশের।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। জনগণ নির্বাচনী সংস্কার চায়- যাতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দায়িত্ব হলো কারিগরি কিছু সুপারিশ করা। আমি যেই কমিশনের সঙ্গে যুক্ত সেই কমিশনের কাজ হবে কীভাবে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা যায়। তার কিছু টেকনিক্যাল সলিউশন আমাদের ও বাইরের অভিজ্ঞতার আলোকে এবং জনগণের সঙ্গে বা বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করে কী কী আইন পরিবর্তন করা দরকার। একই সঙ্গে নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত আছে তাদের কী কী পরিবর্তন দরকার।

তিনি আরও বলেন, সাংবিধানিক কী কী সংস্কার দরকার এগুলো সম্পর্কে আমরা সুপারিশ দিতে পারি। আমরা আশা করছি, আমাদের সুপারিশ পাওয়ার পর সরকার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে একটা ঐকমত্যে পৌঁছার চেষ্টা করবে এবং একটি রোডম্যাপ সৃষ্টি হবে এবং নির্বাচনের সময়কাল নির্ধারিত হবে। একটা বিষয় সুস্পষ্টভাবে মানুষের উপলব্ধিতে ছিল সেটি হলো বিচার। যারা এত বছর থেকে সব অন্যায় করেছে, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, যারা ফৌজদারি অপরাধ করেছে, আর্থিক অপরাধ করেছে, নির্বাচনী অপরাধ করেছে তাদের বিচারের কথা অনেকে সুস্পষ্টভাবে বলছেন।

এই জরিপ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এসআইপিজি’র উপদেষ্টা অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম. আমিনুজ্জামান ও এনএসইউ’র রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের (পিএসএস) অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ। এদিন সেমিনারে জরিপের তথ্য ও ফলাফল উপস্থাপন করেন এনএসইউ’র এসআইপিজি ও পিএসএস’র সহকারী অধ্যাপক ড. আকরাম হোসেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন এনএসইউ চেয়ারম্যান এবং ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান।


Spread the love

Leave a Reply