রাষ্ট্রপতি আর বঙ্গভবনে থাকতে পারবেন না, জাতীয় নাগরিক কমিটি
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র নিয়ে ‘মিথ্যাচার’ করায় মো. সাহাবুদ্দিন আর কোনোভাবেই রাষ্ট্রপতির পদে থাকতে পারেন না বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীতে এক সমাবেশে নাগরিক কমিটির নেতারা অভিযোগ করেছেন, বঙ্গভবনে বসে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছেন সাহাবুদ্দিন। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে তাঁকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণ করতে হবে।
‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে’ রাজধানীর লালবাগের হাজী আব্দুল আলীম ঈদগাহ মাঠে এই সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। ‘ঢাকা রাইজিং’ শিরোনামে এটি তাদের তৃতীয় সমাবেশ। সমাবেশ দুই শতাধিক মানুষ অংশ নেন। এর আগে ৬ অক্টোবর যাত্রাবাড়ী প্রথম এবং ১৮ অক্টোবর মেরুল বাড্ডায় দ্বিতীয় সমাবেশ করে তারা। রাজধানীর লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, চকবাজার, বংশাল ও কোতোয়ালি এলাকাকে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের ‘পাল্স পয়েন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
রক্তের দাগ শুকানোর আগেই দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য রাষ্ট্রপতি পাঁয়তারা করছেন বলে সমাবেশে অভিযোগ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির বিষয়ে ৫ আগস্ট দফারফা হয়ে গেছে। গণ–অভ্যুত্থানের দিনই সংবিধান অকার্যকর হয়ে গেছে। সাহাবুদ্দিন আর বঙ্গভবনে থাকতে পারবেন না। জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে এই রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করার দাবি জানান তিনি।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আপনারা ৫ তারিখে (৫ আগস্ট) ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন; কিন্তু এখন নির্বাচনের কলা ঝুলিয়ে বাংলাদেশে বিভাজনের রাজনীতি আপনারা চালু করেছেন।’
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, মহামান্যের চেয়ারে বসে যিনি ‘মহামিথ্যাচার’ করতে পারেন, তিনি কোনোভাবেই আর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকতে পারেন না। রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের ব্যাপারে বিএনপি, জামায়াত, গণতন্ত্র মঞ্চ ও গণ–অধিকার পরিষদসহ সব রাজনৈতিক দলকে অতি দ্রুত এক হতে হবে। ঐকমত্য না থাকলে হাসিনার দোসরদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়তে হবে।
দেশ অনেক সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, এই সংবিধানকে বাংলাদেশের মানুষ আর সহ্য করবে না। এর পাশাপাশি তিনি বলেন, ছাত্রলীগকে মদদ দেওয়া শিক্ষক ও প্রশাসকদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
শেখ হাসিনা চলে গেলেও সংকট এখনো কাটেনি বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মানজুর-আল-মতিন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে কয়েক শ চলে গেছে। বাকিরা তো রয়ে গেছে। তারা চাইছে, আগের পুরোনো ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে।
গুম–খুনের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে সমাবেশে উল্লেখ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আরেক সদস্য সানজিদা রহমান। তিনি বলেন, যুদ্ধ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। দেশের কোথাও ‘আওয়ামী শক্তিকে’ মাথাচাড়া দিতে দেওয়া হবে না।
‘চাঁদাবাজেরা চেপে বসেছে’
পুরান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা ফোন করে চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষা করার আকুতি জানাচ্ছেন বলে সমাবেশে উল্লেখ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আবদুল্ল্যাহ আল মামুন ফয়সাল। তিনি বলেন, খুনিরা বিভিন্ন নামে আবার পুনর্বাসিত হচ্ছে। এদের রুখে দিতে হবে।
যারাই লড়াই–সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তারাই স্বৈরাচার হয়ে ওঠে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আরেক সদস্য মশিউর রহমান। তিনি বলেন, যদি একটি সঠিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করা না যায়, তাহলে আগামী প্রজন্মের কাছে ভিলেন (খলনায়ক) হয়ে যেতে হবে।
ছাত্র–জনতার আন্দোলনে নিহত হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কয়েকজন স্বজন লালবাগের সমাবেশে বক্তব্য দেন। তাঁদের একজন কামরুল হাসান। তাঁর ছেলে খালিদ হাসান গত ১৮ জুলাই গুলিতে নিহত হন। গণমানুষের অধিকার আদায়ের জন্য খালিদ জীবন দিয়েছে উল্লেখ করে কামরুল হাসান বলেন, কৃষকেরা মূল্য পায় না; কিন্তু ক্রেতারা বাজারে গিয়ে হাঁসফাঁস করে। ৪০ টাকার বেগুন ১২০ টাকায় কিনতে হয়। আবারও সেই চাঁদাবাজেরা চেপে বসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাঁদাবাজদের হাত ভাঙতে পারলেই বাংলাদেশ মুক্তি পাবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত হওয়া কয়েকজন সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ বক্তব্য দেন। এমনই একজন রাকিবুল হাসান। তিনি রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।
রাকিবুল অভিযোগ করেন, বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা–সংক্রান্ত পরিচয়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল হচ্ছে। এ কারণেও সহায়তা পেতে সমস্যা হচ্ছে। তাঁর নাম ও বাবার নাম লেখার ক্ষেত্রে ভুল করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয়ে সরকারকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশে ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেওয়া হয়। এই সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সাইফ মোস্তাফিজ, সালেহ উদ্দিন সিফাত, মো. নিজাম উদ্দিন প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মুতাসিম বিল্লাহ।