৪৮ ভিভিআইপি ফ্লাইটে ২০০ কোটি টাকা ব্যয় শেখ হাসিনার

Spread the love

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ সফরে গেলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ ভাড়া করতেন সরকারি টাকায়। নিয়ে যেতেন সফরসঙ্গীদের বিশাল বহর। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখভাল করত বলে জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

বিশাল বহর সঙ্গে থাকায় শেখ হাসিনার বিদেশ সফর নিয়ে বিতর্ক ছিল।

কিন্তু এসংক্রান্ত ব্যয়ের তথ্য গোপন রাখার কারণে রাষ্ট্রের কী পরিমাণ অর্থ সেখানে খরচ হয়েছে, তা নিরূপণ করা কখনো সম্ভব হয়নি।২০০৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত শেখ হাসিনা কোথায় কতবার গেছেন, তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যায়নি।

করোনা পরিস্থিতির কারণে জাতিসংঘের ৭৫তম অধিবেশনে সশরীরে যোগ দেননি শেখ হাসিনা। টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে প্রায় প্রতি অধিবেশনে সরকারপ্রধান হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি।

প্রতিবারই নিউইয়র্ক নিয়ে যেতেন বিশাল বহর। এ নিয়ে প্রচুর সমালোচনাও ছিল।শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে ২২৭ জনের একটি দল নিয়ে নিউইয়র্কে ৭০তম সাধারণ অধিবেশন এবং টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যান। ২০১৪ সালে ৬৯তম সাধারণ অধিবেশনে এই সংখ্যা ছিল ১৭৮ এবং ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৩৪।

বিমানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে বিমানের বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৮৭ সিরিজের অত্যাধুনিক উড়োজাহাজে যেতেন। তবে কখনো কখনো শিডিউল করা ফ্লাইটেও যাতায়াত করেছেন।

বিমান সূত্র জানায়, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থাটি আড়াই শ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৮টি ভিভিআইপি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে ৩৫টিই শেখ হাসিনার সফরসংক্রান্ত।

এসব সফরে শেখ হাসিনা ব্যয় করেছেন প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

এ সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনা অন্তত আটবার যুক্তরাজ্যে সফর করেন। ভারতে গেছেন অন্তত চারবার। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে চারবার করে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে দুইবার করে সফর করেন শেখ হাসিনা।এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ২০২৩ সালে মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সফরে। তখন প্রায় ২৩ কোটি টাকার কাছাকাছি ব্যয় হয়। এসব বিল সাধারণত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া হয়ে থাকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

ফিনল্যান্ডে ব্যক্তিগত সফরেও চার্টার্ড ফ্লাইট

শেখ হাসিনা ২০২১ সালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আগে ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে দুই দিন ছিলেন। ওই বছর ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ২৩ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-১৯০১ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। হেলসিংকিতে পৌঁছে ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেখানে দুই দিনের যাত্রাবিরতি করেন।

তৎকালীন প্রেস সচিবের বক্তব্য অনুযায়ী, এটি ছিল শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সফর। কারণ ফিনল্যান্ডের কোনো সরকারি কর্মকর্তা, এমনকি প্রটোকল বিভাগের একজন কর্মীকেও বাংলাদেশের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে দেখা যায়নি।

১৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় বিকেলে হেলসিংকির ভানতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভিভিআইপি ফ্লাইট বিজি-১৯০২যোগে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী।

বিমানের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রে খবর নিয়ে জানা গেছে, সরাসরি ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক যাত্রা না করে ফিনল্যান্ডে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এই ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট অবতরণ এবং সেখানে দুই দিনের ল্যান্ডিং চার্জসহ সফরসঙ্গীদের যাবতীয় খরচ বহন করতে অতিরিক্ত সাত কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়েছে।

দুই বছর আগেও লন্ডনে চোখের চিকিত্সা করাতে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সেখানে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছিলেন এবং পরে ব্যক্তিগত সফরে ফিনল্যান্ডে ববির শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যান। রাষ্ট্রীয় এই অর্থ অপচয়ের ব্যাপারে শেখ হাসিনার কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার একটি গণমাধ্যমকে বলেন, এ ধরনের বিদেশ সফর বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের জন্য কাম্য নয়। বাংলাদেশে উন্নয়নের নামে যেমন লুটপাট আর দুর্নীতি হয়েছে, তার ধারাবাহিকতাই এমন বিমান বিলাসিতা। যে সরকারই আসুক বা রাষ্ট্র পরিচালনা করুক, তাদের উচিত হবে জনগণের টাকায় বিমানের এমন ব্যবহার পরিহার করা।
২০২৩ সাল পর্যন্ত বিমানের প্রায় ৫০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে সরকারের কাছে।

গত জুলাই মাসে সর্বশেষ বিশাল বহর নিয়ে চীন সফরে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরো দীর্ঘ সফরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে শেখ হাসিনা তাঁর সর্বশেষ বিদেশ সফর বাতিল করেন। আর ৫ আগস্ট নিয়মিত ফ্লাইট নয়, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সামরিক উড়োজাহাজে করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তিনি।

ব্যতিক্রম ড. ইউনূস 
অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতায় থাকাকালে প্রতিবছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দেওয়ার সময় বিশাল বহর নিয়ে গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে অংশ নেওয়ার সময় নিজের বিশাল প্রটোকল নিয়ে যাওয়ার তথ্যও রয়েছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি নিয়মিত বিমান ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সফর করেছেন। নিরাপত্তার বাইরে সংকুচিত করেছেন তাঁর সফরসঙ্গীর সংখ্যা।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ওই সময় বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী কাতার এয়ারওয়েজের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।’


Spread the love

Leave a Reply