ব্রেক্সিটের পর ১০০ দিন যুক্তরাজ্যে যা ঘটতে পারে…
বাংলা সংলাপ ডেস্ক:
যুক্তরাজ্য যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগ করে, তাহলে আগামী ১০০ দিনে কী কী হতে পারে- তার একটি ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটির জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড পত্রিকা ডেইলি মেইল। বলে রাখা ভালো যে, সংবাদ মাধ্যমটি কিছুটা ব্রেক্সিটের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। তাদের ভাষ্য, ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে যুক্তরাজ্য আবার তার আগের গৌরব ও সমৃদ্ধির পথে যাত্রা শুরু করতে পারবে। না হলে ইইউয়ের অনির্বাচিত আমলাতান্ত্রিকতার যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে ধুকতে হবে তাদের।
২৩ জুন, বৃহস্পতিবার গণভোটে ইইউ ছাড়ার পক্ষটি বিজয়ী হলে, আগামী ১০০ দিনে যা হতে পারে যুক্তরাজ্যে-
২৪ জুন : পর্যুদস্তু প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে এসে ব্রিফিং করবেন। যেহেতু তিনি ইইউয়ে থাকার পক্ষে এবং এর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন, সেহেতু তিনি পরাজয় স্বীকার করবেন।
ক্যামেরন জনগণের ইচ্ছার বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেবেন। তবে বিশদভাবে কোনো ব্যাখ্যা হয়তো দেবেন না। তাৎক্ষণিকভাবে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে হয়তো কিছু বলতে পারেন। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার, ইইউ ছাড়ার পর হয়তো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেশি দিন থাকা হবে না ক্যামেরনের।
রক্ষণশীল টরি পার্টিতে নেতৃত্বের টানাপোড়েন সৃষ্টি হবে এবং এ সুযোগে ইইউ ছাড়ার পক্ষের কট্টর রাজনীতিক ও লন্ডনের প্রাক্তন মেয়র বরিস জনসন দলের নতুন নেতা হবেন।
রাজতহবিল, দি ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এবং ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক অনির্ধারিত ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। সব ধরনের কাজকর্ম সচল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করবে তারা।
জুন ২৮-২৯
ইইউয়ের সদরদপ্তর ব্রাসেলসে মিলিত হবেন এর সদস্যদেশগুলোর নেতারা। এদিনের আলোচনায় একটি বিষয় আলোচিত হবে- ব্রেক্সিট (ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া)। তাদের আলোচনা হয়তো কয়েক দিন ধরে চলতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন ইইউ নেতাদের কাছে তার দেশের জনগণের ইচ্ছার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন। লিসবন চুক্তির ৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাজ্য থেকে ইইউয়ের বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেবেন।
উল্লেখ্য, ২৮ সদস্যবিশিষ্ট ইইউ থেকে কোনো সদস্যদেশের বেরিয়ে যাওয়ার জন্য একটি চুক্তি রয়েছে, যা লিসবন চুক্তির ৫০ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে।
এরপর শুরু হবে পরবর্তী দুই বছরের জন্য ইইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য, বিচার ও অন্য চুক্তিগুলো নতুন করে বুঝে নেওয়া। এ সময় ইইউয়ের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দরকষাকষি হবে এবং অন্য সদস্য দেশগুলো ঝোপ বুঝে কোপ মারা চেষ্টা করবে।
জুলাই ৬
চলতে থাকা চুক্তি প্রক্রিয়ায় সরকার চেষ্টা করবে আন্তর্জতিক সংস্থা ও সংগঠনের সঙ্গে সহজে সমঝোতায় পৌঁছানোর। বাজার ব্যবস্থা অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও জনগণ সামান্য পরিবর্তন দেখতে পারবে। অর্থমন্ত্রী (চ্যান্সেলর অব একচেকার) জর্জ অসবোর্নের পদত্যাগের দাবি জোরালো হবে।
৬ জুন বহুল প্রতীক্ষিত ইরাক তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ হবে এবং এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবেন প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন। তারপর তিনি ন্যাটোর এক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন।
জুলাই ২১
সংসদ অধিবেশনের পরও মন্ত্রীরা চরম ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে সময় পার করবেন। কারণ তাদের ঘাড়ে চুক্তি নিয়ে সমঝোতার চাপ থাকবে। এ সময় পর্যন্ত ক্যামেরন যদি প্রধানমন্ত্রী থাকেনও, তবু তাকে চাপের মুখে থাকতে হবে।
ইইউ ছাড়ার পক্ষের মন্ত্রী মাইকেল গভকে হয়তো চুক্তি নবায়নের বিষয়গুলো দেখভাল করার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। ইইউ ত্যাগ করার পক্ষের নেতারা আগেই বলেছেন, জাতীয় স্বার্থে নতুন করে চুক্তি করার সময় বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
মধ্য আগস্ট
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিতে সমস্যা আরো ঘনীভূত হতে পারে। দ্রুত সীদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে অসমর্থ হলে চুক্তি নবায়নের জন্য হয়তো ক্যামেরনের পরিবর্তে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে বরিস জনসনই হয়তো হবেন সেই ব্যক্তি।
সেপ্টেম্বর
সংসদ অধিবেশন আবার চালু হবে। এ সময় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে না পারা এমপিরা সমালোচনার মুখে পড়বেন। সব কাজে নতুন গতি আনার উদ্যোগ দেখা যাবে।
১৯৯৪ সালের ভ্যাট আইন সংশোধন করে গৃহস্থালি বিদ্যুতের ওপর আরোপ করা ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানাবেন ইইউ ত্যাগ করার পক্ষের নেতারা। তা ছাড়া ইউরোপের যেকোনো দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের বিধান রোধ করা হবে। এ সময় নানা নাটকীয়তার মধ্যে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের প্রশ্ন উঠবে।
অক্টোবর ৫
ব্রেক্সিটের ১০০ দিন পর বার্মিংহ্যামে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাজ্যকে শক্তিশালী সার্বভৌম জাতি হিসেবে গঠনের অঙ্গীকার পুনঃব্যক্ত করা হবে।
যুক্তরাজ্য সত্যিই যদি ইইউ থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে পুরো ইউরোপে এর প্রভাব পড়বে। অনেক কিছু পুর্নগঠনের দাবি উঠবে।