মুক্ত বাংলাদেশ, যুদ্ধের দামামা থেকে মুক্তি পাক বিশ্ববাসী

Spread the love

মোঃ মশাহিদ আলীঃ
আজকের দিনটি আমাদের জন্য গৌরবের। দীর্ঘ ১৪ বছরের সংগ্রাম সংকট উত্তোরণ করে ১৫ বছরে পদার্পণ করলো বাংলা সংলাপ। আজকের এই আনন্দক্ষণ মূহুর্তে আমাদের মিলিয়ন পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের জানাচ্ছি অভিবাদন ও শুভেচ্ছা। সংকটকালে যারা আমাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি রইল শ্রদ্ধা । ১৪ বছর আগে এই দিনে আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যতো বাধা আসুক না কেন সকল ভয়কে জয় করে আমরা কমিউনিটি মানুষের পাশে থাকবো। আমরা কথা রেখেছি, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিনি।

আমাদের প্রাণের দেশ বাংলাদেশ ছিল এক কঠিন সংকটে। দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান ঘটালো আমাদের ছাত্রসমাজ। যার বিনিময়ে হাজারো ছাত্র জনতা প্রাণ দিতে হয়েছে ফ্যাসিস্টদের বন্দুকের গুলিতে। আবু সাঈদের মতো কতো না ছাত্র কিশোর শহীদ হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বন্দুকের গুলি থেকে রক্ষা পায়না পিতার কোলে থাকা ৬ বছরের শিশু পর্যন্ত। কি নির্মম বর্বরতার দৃশ্য দেখতে হয়েছিল দেশবাসীকে । আমাদের ছাত্র সমাজের গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে যায় ফ্যাসিস্ট হাসিনা সহ তার দুসররা। মুক্তি পায় বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ। আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। সালাম জানাই আহত সংগ্রামীদের, অভিবাদন জানাই কিশোর-তরুণ ছাত্রদের আর বাংলাদেশের কোটি সাহসী মানুষকে। একই সাথে গণ অভ্যুত্থানে হতাযজ্ঞের সাথে জড়িত সকল পুলিশ র‍্যাব ছাত্রলীগ যুবলীগ ক্যাডারদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা্র দাবী জানাচ্ছি। সেই সাথে হত্যাকারী স্বৈরাচার হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে জনসম্মুখে ফাঁসি কার্যকরের ব্যবস্থা করা হোক।

আমাদের চির-অপরাজেয় ছাত্র-তরুণ সমাজ জেগে উঠেছে। তাদের রক্তদানে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ এখন স্বাধীন ভাবে কথা বলতে পারছে, যা কদিন আগেও সম্ভব হয়ে উঠেনি।

ছাত্ররা ডাক দিল, ১৯৬৯-এর শহীদ ড. শামসুজ্জোহার কথা স্মরণ করে রংপুরের আবু সাঈদ গেলেন প্রতিরোধের মিছিলে, তাঁদের মুখে স্লোগান, ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’। মানুষের মুক্তি আনবার সংগ্রামে প্রাণ দিলেন সাহসী আবু সাঈদ।

স্কুলের কিশোর ছাত্র শাহারিয়ার খান আনাস চিঠি লিখল মায়ের কাছে, ‘মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না।’ তারপর সেই বালক গেল মিছিলে, গুলিতে প্রাণ দিল বীরের মতো। কত শিশু, কিশোর, তরুণ প্রাণ বিসর্জন দিল, কত নারী আত্মদান করলেন, কত মানুষ শহীদ হলেন—সে সবের কথা স্বজনদের অশ্রুজলে লেখা থাকবে আগামী ভবিষ্যতের ইতিহাসের পাতায় পাতায়। হাত-পা হারিয়ে চিরস্থায়ী প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ, গুলিবিদ্ধ চোখ নিয়ে পৃথিবী আঁধার হয়ে এসেছে কত মানুষের। এত বড় বিদ্রোহ-অভ্যুত্থান এর আগে আর কখনো দেখেনি স্বাধীন বাংলাদেশ। এত অশ্রু, এত রক্ত, এত প্রতিরোধ, এত সংগ্রাম এবং অবশেষে স্বৈরতন্ত্রের পতন।

বাংলাদেশের এই কঠিন সময়ে আমরা আমাদের সাধ্যমতে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। প্রবাসে বসে দেশের সংবাদ সংগ্রহ করা আমাদের জন্য দুস্কর হয়ে পড়েছিল যখন দেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপরও বিশেষ ব্যবস্থায় আমরা সংবাদ সংগ্রহ করে ২৪/৭ পাঠকদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। দেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অনেক প্রবাসীরা অবদান রেখেছেন, আমরা শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করছি তাদের এই  আত্মত্যাগের কথা।

প্রিয় পাঠক বাংলা সংলাপ বিগত ১৪ বছর ধরে সুসাংবাদিকতা অনুশীলনের চেষ্টা করে চলেছে। যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠা আমাদের নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে বাংলা সংলাপ দুটি ভাষায় প্রকাশ হয়ে থাকে। বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংলিশ ভার্ষণে আমরা চেস্টা করি যুক্তরাজ্য তথা বিশ্বজুড়ে ঘটে যাওয়া সকল সংবাদ তুলে ধরার । আর এই কাজ করতে গিয়ে আমাদের কখনো কখনো ভুলভ্রান্তি হয়েছে, কিন্তু অবিলম্বে সেসব ভুল শুধরে নেওয়া হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, সে কারণেই বাংলা সংলাপ ব্রিটেনে সর্বাধিক প্রচারিত ও আস্থাভাজন একমাত্র সংবাদমাধ্যমের মর্যাদা অর্জন করেছে; বাংলা সংলাপ একমাত্র সংবাদপত্র যা যুক্তরাজ্যের মেইন্সট্রীমের সংবাদ প্রকাশ করে থাকে । আমাদের মূল লক্ষ মেইনস্ট্রীমের সংবাদ প্রকাশ করা, যেসকল সংবাদ আমাদের কমিউনিটি মানুষের পক্ষে জানা দুস্কর হয়ে পড়ে। বাংলা সংলাপ গতানুগতিক বাশি সংবাদে বিশ্বাস করেনা ,যাহা সোসিয়াল মিডিয়ার বদৌলতে পত্রিকায় ছাপা হওয়ার আগেই পাঠকরা জেনে যান । আমরা সব সময় চেস্টা করি যুক্তরাজ্য তথা বিশ্বের তাৎক্ষনিক ঘটে যাওয়া সকল তাজা খবর প্রকাশ করার ।

May be an image of 7 people and text

আমরা দৌঁড়াতে জানি ঘোড়ার বেগে, দ্রুত গতিতে। আমরা কখনও ক্লান্ত হইনা। আমাদের অনলাইন প্লাটফর্ম খুবই শক্তিশালী এবং সর্বদা সক্রিয়, বাংলা সংলাপের অনলাইন ভার্ষণ ২৪ ঘন্টা আপডেট থাকে সর্বশেষ তাজা খবর নিয়ে। আমরা সোসিয়াল মিডিয়াতেও সর্বদা সরব রয়েছি, আর ডিজিটাল এই দুনিয়ায় বাংলা সংলাপের অজস্র পাঠক রয়েছেন বিশ্বজুড়ে। আমরা দৃঢ়তার সহিত বলতে চাই গোটা ইউরোপ জুড়ে বাংলা ভাষাভাষিদের কাছে বাংলা সংলাপ শক্ত অবস্থান তৈরী করে নিয়েছে । সেই সাথে আমেরিকা,কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে আমাদের অসংখ্য পাঠক ।

২০১০ সালের ১০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠালগ্নে বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাংলা সংলাপ যাত্রা শুরু করে ,কিন্তু আমাদের এই দীর্ঘ পথ নিষ্কণ্টক ছিল না। যেসব চ্যালেঞ্জ সামনে ছিল, সেগুলো এখনো আছে। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন হয়েছে। তারপরও আমরা হতোদ্যম হইনি। শুরু থেকে মানবতার কল্যাণে বাংলা সংলাপ সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে সৎ, বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার নীতিতে অটল রয়েছে,এবং থাকবে।

আমরা সব সময় ভাল কাজের সমর্থন জানাই, মন্দ কাজের সমালোচনা করি। সৃজনশীল, উদ্যোগী মানুষদের আরও এগিয়ে নিতেও উৎসাহ জোগাই। আমরা যুক্তরাজ্য বাংলাদেশি কমিউনিটির পাশে রয়েছি, পাশে থাকব ।

বাংলা সংলাপ পাঠকের হৃদয়ে কড়া নাড়ে প্রতি সপ্তাহে । আমাদের উপস্থাপনা সব সময় ব্যতিক্রমী যে কোন পাঠকের হৃদয়ে নাড়া না দিয়ে পারেনা । সামনে এগিয়ে যাবার পথে অনেক কঠিন সময় পাড়ি দিতে হয়েছে আমাদের । খুবই ব্যয়বহুল এই যাত্রা পথে প্রতি সপ্তাহে আপনাদের সামনে হাজির হওয়াটা ছিল একটা বিশাল চ্যালেঞ্জের ব্যাপার । শত কষ্ট ও প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আমরা হাজির হয়েছি আপনাদের সামনে । কারণ কমিউনিটির মানুষের প্রতি আমাদের ভালবাসা ছিল সীমাহীন । আমরা জানি এটা আমাদের আদর্শিক চ্যলেঞ্জ । আমরা এগিয়ে যাবো শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে । ১৪ বছরের দীর্ঘ সুগমের পথে আমাদের লেখনি অনেকের আকাংখা পুরণ করতে পারিনি । কারণ আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে, ভুলত্রুটিও আমাদের হয়। চরম দুঃসময়েও আমরা যখন এগিয়ে যাচ্ছিলাম তখনও বিভিন্ন মহল থেকে চাপের সম্মুখিন হতে হয়েছে ।এমনকি পত্রিকাটির প্রকাশনা বাধা গ্রস্থ করতে আমাদেরকে মামলা হামলা হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে । বড় বড় লাগববোয়ালরা  বাংলা সংলাশপের আগ্রযাত্রা স্তব্ধ করে বুর্থ হয়েছেন। একমাত্র পাঠকদের ভালবাসার শক্তি ,সততা ও মনোবলের কারনে আমরা এসকল প্রতিকুলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি ।

প্রিয় পাঠক আমরা নীতি ও আদর্শে বিশ্বাসী । কোন অপশক্তির কাছে মাথা নত করার ব্রতি নিয়ে বাংলা সংলাপের জন্ম হয়নি । বাংলা সংলাপ সব সময় আপোসহীন এবং ভয় ভীতির উর্ধে । কারণ সত্য কখনো দূর্বল হতে পারেনা । আমরা বিশ্বাস করি, বাংলা সংলাপের শক্তি আপনারা, আমাদের শ্রদ্ধেয় পাঠকেরা। সব সময় বাংলা সংলাপ ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের এক নম্বর কাগজ।

আমরা আমাদের নীতি ও আদর্শ থেকে বিচলিত হইনি । আমাদের কলমের মুখে লাগাম টেনে ধরিনি। এই সাহসের মূলেও কিন্তু আপনারাই—আমাদের বিপুলসংখ্যক পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষী যারা আমাদেরকে সব সময় সাহস জোগান। আপনারা সঙ্গে আছেন বলেই আমরা সাহসী, নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ, আপসহীন। আপনারা সঙ্গে আছেন বলেই আমরা বিনয়ী। আমাদের চেষ্টা পরিশীলনের, শুদ্ধতার, সুরুচির, সংস্কৃতির। কমিউনিটি মানুষের প্রতি আমাদের যে দায়বোধ, তা থেকে আমরা বিন্দুমাত্র সরে আসিনি, কখনো আসব না।

প্রিয় পাঠক বাংলাদেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। দেশের ১৮ কোটি মানুষ ফ্যাসিস্টের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে অস্তিতিশীলতা অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ফিলিস্তিনে ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে । ইসরায়েলিদের বর্বরতা থেকে রক্ষ পায়নি ফিলিস্তিনি শিশুরা। বর্বর হামলায় আহত হয়েছেন কত হাজারো নারী শিশু। ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে এখনো ইসরায়েলি বাহিনী হামলা অব্যাহত রেখেছে। ভাল নেই লেবাননের মুসলমানরা। ইসরায়েল বাহিনী লেবাননের ভূখন্ডে ঢুকে হামলা চালিয়ে একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। তাতেও ক্লান্ত হয়নি নেতানিয়াহুর বাহিনী, হামলা করেছে ইরানেও। যদিও ইরান থেকে পাল্টা আক্রমণের শিকার হয়েছে ইসরায়েল। এসকল পালটা পালটি হামলা বিশ্ববাসীকে এক অনিশ্চয়তায় ঠেকে দিয়েছে। দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে ইউক্রেণ – রাশিয়ার । হাজার হাজার বেসামরিক লোক মারা যাচ্ছে। করোনা মহামারির পর বিশ্ব দাঙ্গা বেড়েই চলছে। আর এসকল কাজে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদ দিচ্ছে আমেরিকা ও ব্রিটেন। এমন পরিস্থিতিতে একটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আশঙ্কা ঘণিভূত হয়েছে।

আমরা কেউই যুদ্ধ চাই না। আমরা একটি শান্তিময় বিশ্ব চাই। বাংলাদেশ ফ্যাসিস্ট থেকে মুক্তি পেয়েছে। তা সম্ভব হয়েছে ছাত্র সমাজের জেগে ওটার ফলে। তাই বিশ্ববাসীকে মুক্তি পেতে হলে সবাইকে জেগে উঠতে হবে । জাগ্রত করতে হবে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক। মানুষে – মানুষে মায়ার বন্ধুত্ব সৃষ্টি হলে তবেই যুদ্ধ ঠেকানো সম্ভব। আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে প্রত্যাশা বিশ্ববিবেক জাগ্রত হোক। বাংলাদেশের মতো বিশ্ববাসী মুক্তি পাক ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার অত্যাচারীদের হাত থেকে। আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।


Spread the love

Leave a Reply