আইরিশ সাধারণ নির্বাচন ২০২৪: অভিবাসন ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

Spread the love

সৈয়দ আতিকুর রব, আয়ারল্যান্ড:
২০২৪ সালের ২৯শে নভেম্বর, আইরিশ সাধারণ নির্বাচন এক উত্তপ্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আয়ারল্যান্ডে অভিবাসন, আবাসন সংকট এবং স্বাস্থ্যসেবা সংকট নিয়ে জনমনে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর ডাবলিনে একটি স্কুলের বাইরে শিশুদের ওপর হামলার ঘটনার পর সহিংস দাঙ্গা শুরু হয়। এই দাঙ্গায় শহরের গণপরিবহন পুড়িয়ে দেওয়া, দোকান লুট এবং বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে। এক বছর পরও অভিবাসন নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভুল তথ্য শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ তৈরি করছে।
২০২৩-২৪ সালে আয়ারল্যান্ডে অভিবাসীর সংখ্যা ১,৫০,০০০ ছাড়িয়েছে, যা ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ৩০,০০০ জন প্রবাসী আইরিশ নাগরিক। তবে এই বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধি আবাসন সংকট এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক চাপ ফেলেছে। গড় বাড়ির দাম বর্তমানে ২০০৭ সালের সর্বোচ্চ পর্যায়ের চেয়ে ১০.৮% বেশি। পাশাপাশি, জাতীয় গড় ভাড়া দাঁড়িয়েছে €১,৯৫৫, যা কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে ৪৩% বেশি।
শরণার্থীদের জন্য পৃথক বাসস্থানের ব্যবস্থা থাকলেও, ডাবলিনের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা অফিসের (IPO) বাইরে শরণার্থীদের তাবুতে অবস্থান করতে হচ্ছে। দারিদ্র্য, রোগ এবং অপরাধের ঘটনায় এই অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা জনগণের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ;
প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো – ফিনাফইল , ফিনাগেইল, এবং সিনফেইন – অভিবাসন ব্যবস্থার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
ফিনাফেইল:  আশ্রয়প্রার্থী এমন ব্যক্তিদের আবেদন বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে যাদের আবেদন অন্য কোনো ইইউ রাষ্ট্রে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
ফিনাগেইল: আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আয়ের ওপর নির্ভরশীল একটি অনুদান ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দিয়েছে।
সিনফেইন: একটি নতুন অভিবাসন ব্যবস্থাপনা সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করেছে, যা সমস্য সমাধানে কুইক  সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হবে।
তবে এসব নীতি প্রণয়নের সময় অনেক দলকেই “অভিবাসীদের বলির পাঁঠা বানানো”র অভিযোগের মুখোমুখি হতে হয়েছে বিগত সময়ে।
মার্কিন নীতির প্রভাব ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ;
আন্তর্জাতিক স্তরে আয়ারল্যান্ড একটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর মার্কিন কোম্পানিগুলোকে দেশে ফিরিয়ে আনার যে নীতি গ্রহণ করেছেন,এটি আয়ারল্যান্ডের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের আঘাত হতে পারে। বর্তমানে মার্কিন প্রযুক্তি এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আয়ারল্যান্ডের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০২৩ সালে মার্কিন কোম্পানিগুলো থেকে আইরিশ সরকার প্রায় ১০ বিলিয়ন ইউরো করপোরেট ট্যাক্স আয় করেছে, যা মোট কর রাজস্বের প্রায় ২৫%।
করপোরেট ট্যাক্সের ঐতিহ্যগত হার আয়ারল্যান্ডে ১২.৫% হলেও, সাম্প্রতিক গ্লোবাল ট্যাক্স রিফর্মের ফলে কিছু বড় কোম্পানির জন্য এই হার ১৫% পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে।এটি প্রযোজ্য তাদের ক্ষেত্রে যাদের বৈশ্বিক বার্ষিক আয় ৭৫০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি। এর মধ্যে অ্যাপল, গুগল, মাইক্রোসফট এবং ফাইজারের মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অন্তর্ভুক্ত। ট্রাম্পের নীতির কারণে যদি এই কোম্পানিগুলো আয়ারল্যান্ড ছেড়ে চলে যায়, তবে কর্মসংস্থান এবং সরকারের রাজস্ব আয় উভয়ই হ্রাস পাবে। এতে আয়ারল্যান্ডের অর্থনীতি একটি স্থবির অবস্থার মুখোমুখি হবে।
করণীয় ;
আয়ারল্যান্ড সরকারকে মার্কিন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ চুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, স্থানীয় স্টার্টআপ এবং ব্যবসা খাতকে উৎসাহিত করার জন্য নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করা জরুরি। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব বজায় রেখে আয়ারল্যান্ডকে বহুজাতিক কোম্পানির জন্য আরও আকর্ষণীয় করতে হবে। অভিবাসন ইস্যুতে সরকারের সাশ্রয়ী মূল্যে আবাসন এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণের মধ্যে অভিবাসন সংক্রান্ত ভুল ধারণা দূর করতে গণসচেতনতা কার্যক্রম চালু করা অপরিহার্য।
২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচন আয়ারল্যান্ডের রাজনৈতিক ও সামাজিক দিকনির্দেশনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অভিবাসন ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায়  নতুন সরকারকে দ্রুত এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। আয়ারল্যান্ড একটি  বৈচিত্র্যময় দেশ।  এই বৈচিত্র্যকে মেনে নিয়েই uসমাজ গঠনের মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডকে স্থিতিশীল এবং উন্নত করার পথে এগিয়ে যেতে হবে সবাইকে।

Spread the love

Leave a Reply