চাঁদে বসবাসে নাসার পরিকল্পনা এগোলো কতদূর?
পৃথিবীর বাইরে অন্য গ্রহ-উপগ্রহে বসবাস করা যায় কি না এই চিন্তা বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি তাড়া করে ফেরে হয়তো অনেককেই। বিশেষ করে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে কয়েক দশক আগে। তবে বার বার এর নানা ধাপ নানা কারণে পিছিয়েছে। এবার আবার পেছালো চাঁদে মহাকাশচারী পাঠানোর নির্ধারিত তারিখ।
সময় পিছিয়ে নতুন ক্ষণ ঘোষণা করেছে নাসা। ২০২৬ সালের এপ্রিলে মহাকাশযান উৎক্ষেপণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। নাসা’র প্রধান বিল নেলসন সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে এ বছর জানুয়ারিতে সময়সূচি স্থগিত করা হয়েছিল। তখন লক্ষ্য ছিল চলতি বছরের নভেম্বর। এরপর এটি মিশন পেছানোর দ্বিতীয় ঘটনা।
বিল নেলসন জানান, চাঁদে মহাকাশচারী পাঠানোর প্রোগ্রাম ‘আর্টেমিস-টু’র দ্বিতীয় মিশন চালু হবে ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে।
এবারের মিশনে প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল, মহাকাশচারীদের চাঁদের কাছাকাছি পাঠানো হবে, কিন্তু তাদের ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করানো হবে না।
এখন যেহেতু এই তারিখ পরিবর্তন করে একবারে ২০২৬ সালে নেওয়া হয়েছে, তার মানে অন্তত ২০২৭ সালের আগে চাঁদে অবতরণ আর সম্ভব হবে না। অর্থাৎ, পুরো পরিকল্পনাটি মূল পরিকল্পনার চেয়ে এক বছর পিছিয়ে গেলো।
তারিখ পেছানোর কারণ হিসেবে ক্যাপসুলের হিট শিল্ডের একটি সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়।
মি. নেলসন জানান, ক্যাপসুলে কী হয়েছিলো তা প্রকৌশলীরা ইতোমধ্যে চিহ্নিত করে ফেলেছেন। তারা মনে করছেন ক্যাপসুলের পুনঃপ্রবেশের গতিপথ পরিবর্তন করে এর সমাধান সম্ভব।
তবে যা-ই করা হোক না কেন, এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে আরও অনেক সময় লাগবে।
নাসা এখন চীনের মহাকাশ সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। চীনের ওই সংস্থারও চাঁদে মহাকাশচারী পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
চীনের প্রসঙ্গ টেনে এনে বিল নেলসন বলেন, চীনের নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই আর্টেমিস প্রোগ্রাম চাঁদে পৌঁছে যাবে, সে বিষয়ে তিনি আত্মবিশ্বাসী।
তবে নাসার বাণিজ্যিক ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের তিনি ‘সময়সূচি মেনে চলার’ ও প্রক্রিয়াটি ‘ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানান।
ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এর সঙ্গে তুলনা করলে নাসা বিষয়ক ওই সমালোচনা আরও জোরালো হয়। কারণ পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও তুলনামূলক কম খরচের স্টারশিপ রকেট তৈরিতে স্পেসএক্স এগিয়ে রয়েছে।
এদিকে, নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাসা’র প্রধান হিসাবে বিল নেলসনকে বাদ দিয়ে জ্যারেড আইজ্যাকম্যানকে মনোনীত করেছেন।
এতে করে চাঁদে যাওয়া সংক্রান্ত নাসা’র এই প্রোগ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। কারণ এখানে যে একটি বড়-সড় পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে, তা পরিষ্কার।
জ্যারেড আইজ্যাকম্যান একজন বিলিয়নিয়ার এবং ইলন মাস্কের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তিনি ইতোমধ্যেই দুটি বেসরকারি মহাকাশ মিশনের জন্য অর্থায়ন করেছেন এবং সফল হয়েছেন।
তার এই উদ্যোক্তা মনোভাব নাসার কার্যপ্রণালীতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন ওপেন ইউনিভার্সিটির মহাকাশ বিজ্ঞানী ড. সাইমন বারবার। তিনি বলেন, “এসএলএস একটি পুরনো ঘরানার রকেট। এটি স্টারশিপের মতো পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়। তাই এটি ব্যয়বহুল এবং চালু করতে অনেক সময় লাগে। ধীর ও ব্যয়বহুল হওয়া একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে নতুন প্রেসিডেন্ট যখন খরচ সাশ্রয়ের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।”
“আইজ্যাকম্যান নাসার কাজের ধরনে নতুন কিছু বিষয় যোগ করবেন। তবে আইজ্যাকম্যান, মাস্ক ও ট্রাম্পের এই সংমিশ্রণ নাসার ভবিষ্যৎকে কীভাবে প্রভাবিত করবে তা বলা কঠিন”, বলেন তিনি।
আর্টেমিস মিশন কী ও কেন?
১৯৬৯ সালে নাসার প্রথম চন্দ্রাভিযানের পর কেটে গেছে ছয় দশকেরও বেশি সময়। এরপর ২০২৫ সালে চাঁদের বুকে আবারও মানুষকে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও সেটি আবারো পিছিয়ে যাচ্ছে।
চাঁদে যাওয়ার এই পুরো আয়োজনের নাম দেওয়া হয়েছে আর্টেমিস। গ্রিক পূরাণের চন্দ্রদেবী আর্টেমিস হলেন দেবতা অ্যাপোলোর জমজ বোন। তারই নামে এই মিশনের নামকরণ।
মঙ্গলগ্রহে নভোচারী পাঠানোর ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে আর্টেমিস। এজন্য চাঁদে মানুষ ও রোবটের অস্থায়ী বসতি তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে বিজ্ঞানীদের।
আর্টেমিস মিশন পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হবে নাসার শক্তিশালী নতুন রকেট স্পেস লঞ্চ সিস্টেম বা এসএলএস। এর মাথায় বসানো থাকবে স্পেসক্র্যাফট ওরিয়ন। আপাতত আর্টেমিস মিশনের তিন ধাপের পরিকল্পনা চূড়ান্তভাবে জানিয়েছে নাসা।
নাসার নেতৃত্বে পৃথিবীর ২১টি দেশের অর্থায়ন ও সহযোগিতায় পরিচালিত হবে এই অভিযান। আর্টেমিসের মূল লক্ষ্য, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, অর্থনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি এবং নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানচর্চায় অনুপ্রাণিত করা।
আর্টেমিস মিশনে নতুন প্রযুক্তির সহায়তায় আরো ভালোভাবে চাঁদ নিয়ে গবেষণা করবেন বিজ্ঞানীরা। এর মাধ্যমে জানা যাবে পৃথিবী, চাঁদ এবং আমাদের সৌরজগতের উৎপত্তি এবং ইতিহাস সম্পর্কে নানা তথ্য।
আর্টেমিস-১ নিয়ে যে সংকট
মিশনের প্রথমধাপ আর্টেমিস ১-এর মহাকাশযানে কোনো নভোচারী থাকবে না। এটি হবে মূলত টেস্ট ফ্লাইট।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে এটি উৎক্ষেপনের কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়।
সম্প্রতি আর্টেমিস ১-এর পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের সময় ওরিয়ন মহাকাশযানের হিট শিল্ড-এ সমস্যা দেখা দেয় যে কারণে মিশন পিছিয়ে যায়। সেই পরীক্ষামূলক মিশনে হিট শিল্ডের পোড়া উপাদান অপ্রত্যাশিতভাবে উধাও হয়ে যায়।
মূলত, আর্টেমিসের প্রথম মিশনের সময় পরীক্ষামূলক ফ্লাইটটিতে অনেক পোড়া অংশ দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, ফিরে আসার পর তাতে ফাটল দেখা গেছে এবং কিছু অংশ ভেঙেও পড়েছে।
নাসা’র প্রধান বিল নেলসন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মহাকাশচারীদের নিরাপত্তাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত আমরা উড্ডয়ন করি না। পরবর্তী পরীক্ষামূলক ফ্লাইটটি ঠিকঠাক শেষ করতে হবে এবং আর্টেমিস প্রোগ্রাম এভাবেই এগিয়ে যাবে।”
আর্টেমিস টু ও থ্রি নিয়ে কী পরিকল্পনা?
আর্টেমিস-১ এর সফল উৎক্ষেপনের পর নভোচারি নিয়ে চাঁদের উদ্দেশে ছুটবে আর্টেমিস ২-এর মহাকাশযান।
এতে নভোচারী থাকবেন। তারাও চাঁদের কক্ষপথ ঘুরে পৃথিবীতে ফেরত আসবেন।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলেছে, এখন ২০২৬ সালের এপ্রিলে আর্টেমিস ২ মিশন হতে পারে।
আর্টিমিস মিশনের তৃতীয় ধাপে অর্থাৎ আর্টেমিস-৩ তে নভোচারীরা অবতরণ করবেন চাঁদে। প্রথমবারের মতো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখবে মানুষ।
আর্টেমিসের প্রথম দফার অভিযান পেছানোর পর তৃতীয় দফা অর্থাৎ ‘আর্টেমিস-থ্রি’ এর যাত্রার পরিকল্পনাতেও পরিবর্তন এসেছে।
নাসার তথ্যমতে, আর্টেমিস ৩ মিশনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ২০২৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে।
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে, এই দশক জুড়েই চলবে আর্টেমিস মিশনের নানা কার্যক্রম ও অভিযান।
বিল নেলসন বলেন, “আমরা ২০২৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে আর্টেমিস-৩ চালু করার পরিকল্পনা করছি। চীনা সরকারের ঘোষণা করা ২০৩০ সালের আগেই এটি হয়ে যাবে,” বলেন তিনি।
তবে এই যে উড্ডয়নে দেরি হলো, এটি সরকারিভাবে পরিচালিত সংস্থা নাসা’র ওপর চাপ বাড়িয়ে দেবে।
ইতোমধ্যে চাঁদে মহাকাশচারী পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত নাসার রকেট সিস্টেম ও স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) সমালোচনার মুখে পড়েছে। কারণ সেগুলো ব্যয়বহুল, অথচ ধীরগতির।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তৃতীয় আর্টেমিস অভিযানে মহাকাশযান নভোচারী নিয়ে চাঁদে অবতরণের পর তারা নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ করবে।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবস্থিত ৯টি প্রস্তাবিত অবতরণ অঞ্চল হচ্ছে ক্যাবিউস বি-এর পাশের শিখর, হাওর্থ, ম্যালাপার্ট ম্যাসিফ, মন্স মাউটন মালভূমি, মনস মাউটন, নোবিল রিম ১, নোবিল রিম ২, ডি গের্লাচে রিম ২ ও স্লেটার প্লেইন।
নাসা জানিয়েছে, এ ৯টি স্থানের প্রতিটিই পাথুরে এলাকা। এসব এলাকা থেকে চন্দ্রসম্পদ ও সৌরজগতের বিস্তৃত ইতিহাস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার সুযোগ আছে।
গন্তব্য যখন মঙ্গল গ্রহ
নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন তাদের বর্তমান চন্দ্রাভিযানের পেছনে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মহাকাশের আরো দূরে যাওয়ার স্বপ্ন।
বলা হচ্ছে, আর্টেমিস মিশনে তারা চাঁদ দেখতে যাচ্ছেন না, এবার তারা সেখানে থাকতে যাচ্ছেন। নাসার উদ্দেশ্য চাঁদের বুকে একটি ঘাঁটি গড়ে তোলা যেখান থেকে মঙ্গল গ্রহে অভিযান চালানো হবে।
আর্টেমিস মিশনের অন্যতম লক্ষ্য হলো, মঙ্গল মিশনের জন্য নভোচারীদের তৈরি করা। অর্থাৎ মানুষের শরীর ও জৈবিক ক্রিয়া পৃথিবীর আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই। পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো পরিবেশে খাপ খাওয়ানো অত সহজ নয়।
এর আগে চাঁদে মানুষ গেছে। সেখানকার আবহাওয়ায় কীভাবে বেঁচে থাকতে হয়, মানুষ সেটা এখন জানে না। মঙ্গলের আবহাওয়ায় টিকে থাকারে তাত্ত্বিক ব্যবস্থা হয়তো মানুষের আছে, কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই।
আবার আগে যেসব নভোচারী চাঁদে পা রেখেছেন, তাদের বেশিরভাগই মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন তাদের যে বয়স ও শারীরিক অবস্থা, তাদের পক্ষে মঙ্গলে যাওয়া সম্ভব না।
তাই নতুন একদল নভোচারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। মঙ্গলে পা রাখার আগে আর্টেমিস মিশনের মাধ্যমে নিজেদের সক্ষমতা যাচাই করে নেয়ার সুযোগ পাবেন নভোচারীরা।
এখানে চাঁদের ভূমিকা অনেকটা মহাকাশ স্টেশনের মতো। মানুষের শরীরে কীভাবে কম মহাকর্ষীয় বলে কাজ করে, প্রতিকূল পরিবেশে মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকে, তার প্রাথমিক মহড়া হয়ে যায় মহাকাশ স্টেশনে।
সেখানে সব সময় বেশ কয়েকজন নভোচারী বসবাস করেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন খুব বেশি দূরে নয়। এখানে বসবাসের অভিজ্ঞতা মঙ্গল অভিযানে ঠিকঠাকভাবে কাজে নাও লাগতে পারে।
বরং চাঁদ এ ক্ষেত্রে ভালো বিকল্প হতে পারে। তবে এর বাইরেও আর্টেমিস মিশনের আরও বেশ কিছু লক্ষ্য ও কারণ আছে।
চাঁদে যাওয়া শুরু যেভাবে
আসলে চাঁদে মানুষ অবতরণের এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল ১৯৬২ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি তার এক ভাষণে এরকম এক স্বপ্নের কথা উল্লেখ করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, “আমরা চাঁদে যাবো বলে ঠিক করেছি।” এটা সহজ বলে নয়, বরং কাজটা কঠিন বলেই তারা এই সিদ্ধান্ত নেন বলে তিনি জানান।
প্রেসিডেন্ট কেনেডি ষাটের দশকেরই মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠানোর কথা বলেছিলেন এবং তার সেই স্বপ্ন সাত বছরের মধ্যেই বাস্তবে পরিণত হয়।
কিন্তু এর কয়েক বছরের মধ্যেই নাসার চন্দ্রাভিযান বন্ধ হয়ে যায়। সংস্থাটির বাজেটে এতো ব্যাপক কাটছাঁট করা হয় যে অ্যাপোলো মিশনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
শুরুতে মোট ২০টি অ্যাপোলো মিশনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু চাঁদে অবতরণের পর প্রযুক্তি ও গবেষণা নির্ভর এই মিশন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকদের কাছে ক্রমশই গুরুত্ব হারাতে থাকে।
ফলে শেষ তিনটি মিশন বাতিল করা হয় এবং চাঁদে নাসার মিশন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
চন্দ্রাভিযান কেন বন্ধ হয়ে যায়
অ্যাপোলো ১১ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজনৈতিক মিশন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল চাঁদে মানুষ পাঠিয়ে মহাকাশেও যে তারা শক্তিশালী সারা পৃথিবীর কাছে এরকম একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ছিল চাঁদে যাওয়ার দৌড়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে পরাজিত করা। তাতে তারা সফলও হয়েছিল।
নাসার বিজ্ঞানী ড. ঘোষ বলেন, “নাসার প্রথম চাঁদে যাওয়াটা ছিল সামরিক কারণের একটি অংশ। শীতল যুদ্ধের কারণে সেসময় রাশিয়ার সঙ্গে একটা প্রতিযোগিতা ছিল। সামরিক কারণটা চলে যাওয়ার পর এতো অর্থ খরচ করে চাঁদে মানুষ পাঠানো আর যৌক্তিক বলে বিবেচিত হলো না।”
“তাই আমেরিকা মহাকাশ গবেষণার বাজেট অনেক কমিয়ে দিল। তারা ভাবল আমরা অন্য কোনো সক্ষমতা অর্জন করি,” বলেন তিনি।
চাঁদে যাওয়ার জন্য জেএফ কেনেডি সরকার প্রাথমিকভাবে বাজেট নির্ধারণ করেছিল ৭০০ কোটি ডলার। কিন্তু পরে সেটা ২০০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
এতো বিশাল অর্থ খরচ করে চাঁদে মানুষ পাঠানোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণেরও খুব একটা সমর্থন ছিল না। কারণ সেসময় দেশটিতে নানা ধরনের সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল।