রাস্তা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের পক্ষে হাইকোর্টের রায়

Spread the love

কাউন্সিল যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করেছে মর্মে আদালতের রায়কে আমি স্বাগত জানাইঃ মেয়র লুৎফুর রহমান

ডেস্ক রিপোর্টঃ তিনটি লো ট্রাফিক নেইবারহুড (এলটিএন) প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা আইনি চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের পক্ষে রায় ঘোষণা করেছে। আজ ১৭ ডিসেম্বর এই রায় ঘোষণা করা হয়। ‘লিভেবল স্ট্রিট’ প্রকল্প বাতিল করে রাস্তা গুলো পুণরায় খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিলো।
উল্লেখ্য, ‘লিভেবল স্ট্রিট’ নামের প্রকল্প কোভিড মহামারির সময় চালু হয়েছিল এবং অন্যান্য বারায় এটি লো ট্রাফিক নেইবারহুড বা এলটিএন নামে পরিচিত ছিল। এই প্রকল্পের অধীনে বারার বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো।
এলটিএন স্কিম বা লিভেবল স্ট্রিট প্রকল্প বাতিলে কাউন্সিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে হাইকোর্টে একটি বিচারিক পর্যালোচনা বা জুডিশিয়াল রিভিউ আবেদন দায়ের করা হয়। গত মাসে দুই দিনের শুনানির পর হাইকোর্ট আজ (১৭ ডিসেম্বর) কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় ঘোষণা করে। মূলত কাউন্সিলের পরামর্শ প্রক্রিয়া (কনসালটেশন প্রসেস) এবং ওল্ড বেথনাল গ্রিন রোডকলাম্বিয়া রোড এবং আর্নল্ড সার্কাস পুনরায় খুলে দেওয়ার এক্সিকিউটিভ মেয়র লুৎফুর রহমানের সিদ্ধান্তের বৈধতার উপর ভিত্তি করেই আদালতে এই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিলো।

নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমান

লিভেবল স্ট্রিট’ নামের প্রকল্পের আওতায় বন্ধ করে দেওয়া তিনটি রাস্তা পুনরায় খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তটি ২০২২ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লুৎফুর রহমানের দেওয়া প্রতিশ্রুতির অংশ ছিল। ঐ নির্বাচনে তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের এক্সিকিউটিভ মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। রাস্তা পুণরায় খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ২০২২ ও ২০২৩ সালে দুটি পরামর্শমূলক কার্যক্রম (কনসালটেশন প্রক্রিয়া) পরিচালনা করা হয় এবং কনসালটেশনে প্রাপ্ত মতামতের আলোকে ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কেবিনেট মিটিংয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কানরবার্ট স্ট্রিটের এলটিএন এবং ওয়াপিং—এ বাস গেট রেস্ট্রিকশন (যান চলাচল সীমিত করার বিধিনিষেধ) বহাল রাখা হয়। এছাড়াও স্কুল স্ট্রিটের জন্য ৩৩টি ‘নির্ধারিত সময়’ এর জন্য রাস্তা বন্ধপথচারীদের জন্য আরও সুবিধাজনক পথ এবং সহজে প্রবেশযোগ্য স্থান সংরক্ষিত হয়েছে।
টাওয়ার হ্যামলেটস্ বারাকে একটি নেট—জিরো এলাকায় পরিণত করার লক্ষ্যে কাউন্সিল কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিশুদ্ধ বায়ু নিশ্চিত করতে বায়ু মান উন্নয়নে ৬ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করেছে। গত এক বছরে কাউন্সিল পরিচালিত ভবনগুলোর জ্বালানী দক্ষতা বাড়িয়ে দূষণ নির্গমন ১৯% হ্রাস করা হয়েছে। এছাড়া গোটা বারা জুড়ে ১,৪০০—এর বেশি গাছ রোপণহাঁটা ও সাইকেল চালানোর জন্য উন্নত পথ তৈরিএবং রাস্তায় সাইকেল পার্কিং এর উপযোগী স্থান স্থাপন করা হয়েছে।
অন্যান্য টেকসই উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে কাউন্সিল ভবনগুলোতে সৌর প্যানেল স্থাপনস্ট্রিট লাইট গুলোকে এলইডিতে রূপান্তর করালো—কার্বন হিটিং সিস্টেম যেমন এয়ার সোর্স হিট পাম্প বসানোকাউন্সিলের যানবাহন বহর ইলেকট্রিক যানবাহনে রূপান্তর এবং আরও ইভি চার্জিং পয়েন্ট স্থাপন।
হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, “জলবায়ু সংকট মোকাবিলা এবং নেট—জিরো অঞ্চল হওয়া আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। বায়ু মান উন্নয়নে আমরা ৬ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করেছি এবং গত এক বছরে নির্গমন ১৯% হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা ভর্তুকিযুক্ত বাস ভ্রমণসহ আরও পদক্ষেপ অন্বেষণ করছি এবং বাসিন্দাদের সাথে একত্রে কাজ করে আরও উন্নতি করতেও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তিনি বলেন, “এলটিএন প্রকল্পগুলি এর আশেপাশে বাতাসের গুণমান উন্নত করলেওআগে এগুলো যেভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছিলোতার ফলে প্রধান প্রধান সড়কগুলিতে যানজট সৃষ্টি করে। যার কারণে উল্টো বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পায় এবং সেই রাস্তায় বসবাসকারী অনেকের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেযে এলাকাগুলোতে প্রধানত কর্মজীবী পরিবারগুলো বাস করে থাকে। ট্র্যাফিক গ্রিডলক অর্থাৎ গুরুতর যানজট বাস সার্ভিসগুলিতে মারাত্মক বিলম্ব ঘটায়এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা গণপরিবহন ব্যবহার বাড়ানোর প্রচেষ্টাকে দুর্বল করেযা মূখ্যত নির্গমন কমানোর কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এছাড়াও চলাচলে সীমাবদ্ধতা থাকা (মোবিলিটি ইস্যূ) বাসিন্দা এবং জরুরি সার্ভিসগুলোর উপর এলটিএন প্রকল্প অর্থাৎ রাস্তা বন্ধের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়যার মধ্যে লন্ডন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের আপত্তিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
নির্বাহী মেয়র বলেন, “কাউন্সিল যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করেছে মর্মে আদালতের রায়কে আমি স্বাগত জানাই। যদিও মে ২০২২ — এর নির্বাচনে এই রাস্তাগুলো পুনরায় খোলার জন্য গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলতারপরও আমি অধিকতর পরামর্শের পথ বেছে নিয়েছিলাম যাতে সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের মতামত বিবেচনা করা যায়।”
উল্লেখ্যটাওয়ার হ্যামলেটস বারার মধ্যে অবস্থিত সবচেয়ে দূষিত সড়ক হলো এ১১ এবং এ১২যা ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন (টিএফএল) — এর আওতাধীন।


Spread the love

Leave a Reply