দুর্নীতির শঙ্কায় টিউলিপের চাচিকে নাগরিকত্ব দেয়নি মাল্টা

Spread the love

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবারটির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে অর্থপাচার, দুর্নীতি, জালিয়াতি এবং ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠে আসে। মাল্টার কর্তৃপক্ষের নজরে বিষয়টি আসায় দেশটির পাসপোর্ট পাওয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়।

জানা গেছে, তিনি ছিলেন যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী ও লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের চাচি শাহীন সিদ্দিক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী তিনি।

বর্তমানে বাংলাদেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়েছে। তবে তারিক আহমেদ সিদ্দিক কোথায় আছেন, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে বিভিন্ন সময় দেশের সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।

এদিকে টিউলিপের চাচি শাহীন সিদ্দিক মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য চেষ্টা করেছিলেন ২০১৩ সালে। হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের তখন মাল্টার নাগরিকত্ব প্রদানের মাধ্যমে বিনিয়োগ কর্মসূচি পরিচালনার একচেটিয়া অধিকার ছিল। সংস্থাটি শাহীন সিদ্দিকের অর্থে দুর্নীতির শঙ্কায় আবেদন প্রত্যাখ্যান করে।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এ সংক্রান্ত কিছু নথি হাতে পেয়েছে। তা বলছে, অভিবাসন পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানটি শাহীনের মাল্টার পাসপোর্টের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। কারণ তাদের অভিযোগ ছিল, শাহীন এমন একটি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত; যে কোম্পানির বিরুদ্ধে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো রাজধানী ঢাকায় অবৈধভাবে মূল্যবান সরকারি জমি দখলের অভিযোগ তুলেছে।

পাসপোর্ট আবেদনের নথিতে তারেকের পরিবারের দুর্নীতির বিশদ বিবরণ রয়েছে। হেনলির সিদ্ধান্তের নথিতে উল্লেখ করা হয়, প্রচ্ছায়া নামের একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান শাহীন। ২০১২ সালে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ঢাকার মূল্যবান জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। অথচ ২০১৩ সালেও পাসপোর্ট আবেদনে কোম্পানিটিতে তার পদের কথা উল্লেখ করেছেন শাহীন।

নথিপত্রে দেখা যায়, শাহীন ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে মাল্টার পাসপোর্টের জন্য দুটি আবেদন করেছিলেন। দ্বিতীয়টি ছিল তার লন্ডনে থাকা মেয়ে বুশরার সঙ্গে যৌথ আবেদন। বুশরা যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের চাচাতো বোন। ২০১১ সালের একটি নথিতে বুশরাকে প্রচ্ছায়ার একজন পরিচালক ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৫ সালের মার্চ মাসে যৌথ আবেদনের নথি অনুসারে, মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য শাহীনকে ৬৫০০০০ ইউরো এবং বুশরাকে ২৫০০০ ইউরো খরচ করতে হতো। এ ছাড়া হেনলিকে ফি হিসেবে ৭০০০০ ইউরো পরিশোধ করার কথা ছিল।

Bushra Siddique being interviewed on YouTube, 27 April 2023

ইউটিউবে বুশরা সিদ্দিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে, ২৭ এপ্রিল ২০২৩ © ইউটিউব

সেই আবেদনের অংশ হিসেবে শাহীন কুয়ালালামপুরের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য অর্থ প্রদানের নিশ্চয়তার প্রমাণ হিসেবে সংযুক্ত করেন। ওই অ্যাকাউন্টে ২,৭৬০,৪০৯ ডলার জমা দেখানো হয়, যা ওই সময় গত দুই মাসে ১১টি লেনদেনে নগদ অর্থ জমা করা হয়েছিল। নথিতে অর্থের উৎস নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের মুদ্রা আইন অনুসারে, এক ক্যালেন্ডার বছরে বাংলাদেশিরা ১২,০০০ ডলারের বেশি দেশ থেকে বাইরে নিয়ে যেতে পারে না।

কিন্তু টিউলিপের চাচি কী করে এত বিপুল অর্থ দেশের বাইরে পাচার করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখে মাল্টার নাগরিকত্ব প্রদান সম্পর্কিত সংস্থাটি।

এদিকে শেখ হাসিনার পতনের পর টিউলিপ সিদ্দিকও আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছেন বলে তথ্য প্রকাশ্যে আসে। শেখ হাসিনার আমলে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট নিয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সম্প্রতি তার এমন দুটি ফ্ল্যাট ভোগদখলের তথ্য ফাঁস করে।

এমন দুর্নীতির অভিযোগে প্রশ্নবিদ্ধ যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। দল ও দলের বাইরে থেকে তিনি পদত্যাগের চাপে রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে তিনি পদত্যাগ না করলেও তাকে বরখাস্ত করা হতে পারে। হারাতে পারেন মন্ত্রিত্ব।

অপরদিকে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর থেকে টিউলিপের চাচা তারিক আহমেদ সিদ্দিক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধেও বাংলাদেশে তদন্ত চলছে।

গত বছরের অক্টোবরে বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে, মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তার স্ত্রী শাহিন সিদ্দিক, দুই মেয়ে নুরীন তাসমিয়া সিদ্দিক ও বুশরা সিদ্দিকের নামে পরিচালিত ব্যক্তি হিসাব এবং তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত হিসাবের লেনদেন ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং আইনের আওতায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো। এ ছাড়া তাদের নামে কোনো লকার থাকলে তার ব্যবহারও ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, লেনদেন স্থগিতের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালার বিধান প্রযোজ্য হবে।


Spread the love

Leave a Reply