ব্রেক্সিট আলোচনার প্রস্তুতি তেরেসা মের
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ছাড়ার সিদ্ধান্ত কীভাবে বাস্তবায়ন করবে বৃটেন, তা নিয়ে ইউরোপের প্রশ্নের শেষ নেই। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে সূত্র দিচ্ছেন খুব কমই। তবে তার কৌশল ক্রমেই পরিষ্কার হয়ে আসছে। রয়টার্সের একটি বিশ্লেষণাত্মক প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
গত মাসে নিজের পল্লি আবাস চেকার্স-এ সম্ভাব্য অবাধ্য একটি মন্ত্রীসভার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। প্রথা ভেঙ্গে মন্ত্রীসভার এ বৈঠক ক্যামেরায় ধারণ করতে গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বৃটেনের অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিৎ তা নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে মন্ত্রীদের। মাঝেমাঝে এ দ্বিমত প্রকাশ্যে বলতেও দ্বিধা বোধ করেন না তারা।
অভিবাসন রোধ, আবার একই সঙ্গে বৃটেনের জন্য ভালো শর্তে বাণিজ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে একটি ‘অনন্য চুক্তি’র প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মে। তবে এমন সম্ভাবনা বারবার উড়িয়ে দিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা। তারা বলছেন, একমাত্র মানুষের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করলেই অবাধ বাণিজ্য সম্ভব। চেকার্সে মন্ত্রীসভার ওই সভায় মে বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই স্পষ্ট থাকতে হবে যে, ব্রেক্সিট মানে হলো ব্রেক্সিট। আমরা এর মধ্য থেকেই সাফল্য ঘরে তুলবো।’
এটা ছিল কিছু শব্দগুচ্ছের পুনরাবৃত্তি। তার সমালোচক যারা গণভোটের পূর্বে নীরবে ইইউতে রয়ে যাওয়ার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন তারা বলছেন, এ শব্দগুচ্ছের বহুবিদ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সেøাভাকিয়ার রাজধানী ব্রাতিসøাভায় শুক্রবার অনুষ্ঠেয় ইইউর একটি সম্মেলনে অংশ নেবেন না মে। জুনে বৃটেনের গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় আসার পর, এটিই হতে যাচ্ছে এ জোটের প্রথম সম্মেলন। সম্মেলনে ব্রেক্সিটই থাকবে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা হিসেবে।
কিন্তু এ বিষয়ের ওপর বেশি আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ বছর ইইউ প্রস্থান প্রক্রিয়া শুরু না করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তেরেসা মে। এতে হতাশ তার দল কনজারভেটিভ পার্টির ব্রেক্সিট-পন্থী নেতারা। হতাশ ইউরোপিয়ান নেতারাও। কারণ, তাদের আশঙ্কা জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ বৃটেনের সঙ্গে স¤পর্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলে বাকি ২৭টি দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। মের সহযোগিরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, ইইউর লিসবন চুক্তির আর্টিকেল ৫০ তিনি সক্রিয় করবেন ২০১৭ সালের গোড়ার দিকে। আর্টিকেল ৫০ সক্রিয় করলে ইইউর সঙ্গে সমঝোতা করার ২ বছর মেয়াদী কড়া সময়সীমা শুরু হবে। এর আগ পর্যন্ত, তেরেসার মের সমালোচকদের কেবল অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে। এ মাসের শুরুর দিকে চীনে জি২০ সম্মেলনে যাওয়ার প্রাক্ক¡ালে বিমানে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল চীনের আংশিক অর্থায়নে নির্মিতব্য একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনুমোদনে তিনি এত সময় নিচ্ছেন কেন। জবাবে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এভাবেই আমি কাজ করি। আমি স্রেফ এসেই বলি না যে আমি এ সিদ্ধান্ত নেব।
আমি আসলে প্রামাণিক তথ্যের দিকে তাকাই। ভালোমন্দ বিচার করি। পরামর্শ নেই ও সেসব বিবেচনা করি। এরপর সিদ্ধান্তে উপনীত হই।’ ইইউ-প্রস্থান নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে ‘চলমান ধারাভাষ্য’ দেয়া হবে না বলে সাংবাদিকদের জানিয়ে দিয়েছেন তেরেসা মের সহযোগী ও মন্ত্রীরা। ইউরোপিয়ান নেতারা বলছেন বৃটেন প্রস্থান প্রক্রিয়া শুরুর আগ পর্যন্ত আলোচনা শুরু করা সম্ভব নয়। মের মুখপাত্র আলোচনার ব্যাপারে বলেন, ‘এটা হলো একটি সমঝোতা প্রক্রিয়া।
তাই প্রথমেই টেবিলে নিজের সব কার্ড মেলে দেয়াটা সবসময় সঠিক কাজ নয়।’ বৃটিশ সরকারী কর্মকর্তারা পরিকল্পনা আঁটছেন কীভাবে অভিবাসন রোধ করা যায়। ইইউ জোট থেকে আসা অর্থায়নের অভাব পূরণ করা হবে কীভাবে এবং কীভাবে ইইউ’র আইন বৃটিশ আইনে রূপান্তরিত করা যায়।
এ প্রস্তুতিতে ঘনিষ্ঠ নজর আছে এমন দুটি সূত্র জানিয়েছে কোথায় ছাড় দেয়া সম্ভব হবে বা সমঝোতার সময় কী নীতিতে আগানো হবে তার বিস্তারিত তাদের জানা নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তার কাছে বিভিন্ন বিকল্প উপস্থাপনের দিকেই এখন কর্মকর্তাদের নজর। সমালোচকরা বলছেন অভিবাসনের ব্যাপারে বৃটেনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও একই সঙ্গে ইইউ’র লোভনীয় একক বাজারে (সিঙ্গেল মার্কেট) প্রবেশাধিকার এ দু’টি জিনিস চেয়ে অসম্ভব কিছু করার চেষ্টা করছেন মে।
কিন্তু এ সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তার এক সহযোগী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে স্পষ্ট যে নিজের চেষ্টায় তিনি উচ্চাকাঙ্খী থাকবেন। তিনি দু’টি ক্ষেত্রেই সফল হতে চান।’ মের ব্রেক্সিট মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস এ মাসে মন্তব্য করেছেন যে ইইউর একক বাজারে বৃটেনের সদস্যপদ ধরে রাখা খুবই অসম্ভব। তবে এ মন্তব্যকে তার ব্যক্তিগত মতামত বলে আখ্যা দিয়েছেন মে। সহযোগীরা বলছেন, মে নিশ্চিত করতে চান যে, আলোচনার টেবিলে বৃটেনের অবস্থান যাতে খাটো না থাকে। তার ব্রেক্সিটপন্থী বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়াম ফক্স সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইইউর কাস্টম ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া উচিৎ বৃটেনের।
কিন্তু মের কার্যালয় সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেয়, এ সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্ত এখনও নেয়া হয়নি। লিয়াম ফক্স আরও বলেছিলেন যে, নতুন রপ্তানি বাজার খোঁজার বেলায় ‘খুবই অলস ও মেদপ্রবন’ হয়ে উঠেছে বৃটেন। মের মুখপাত্র এ মন্তব্যের জবাবে বলেন, বাণিজ্য স¤পর্ক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীরা আরও বলেন যে, ডেভিড ডেভিস, লিয়াম ফক্স বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনকে নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। এ তিন জনেরই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার উচ্চাকাঙ্খা রয়েছে।
এরা তিনজনই ইইউ ছাড়ার পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এ তিনজনের পাশেই থাকবেন। এর মাধ্যমে তিনি কনজারভেটিভ দলের ইইউ-বিরোধী কর্মীশিবির ও এমপিদের আশ্বস্ত করতে চান যে, ‘ব্রেক্সিট মানে ব্রেক্সিট’! তবে এরপর থেকে সরকারী অবস্থানই অনুসরণ করে আসছেন ডেভিস ও ফক্স। বরিস জনসন প্রকাশ্যে কথা বলেছেন খুব কম। দুই এমপি জানিয়েছেন তিনি নিজ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বুঝে নেয়ার দিকেই এখন বেশি মনোযোগী।
বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর দিয়েছেন তিনি। এ সপ্তাহে ডেভিস পার্লামেন্টে বলেছেন যে, তার ব্রেক্সিট মন্ত্রণালয় নীতি প্রণয়ন করবে না, বরং বিভিন্ন পলিসির মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বৃটেনের প্রস্থান আলোচনায় নেতৃত্ব দেবেন। তাকে প্রতিদিন সহায়তা দিয়ে যাবে আমার মন্ত্রণালয়।’ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের এক সদস্য বলেন, ৩১শে আগস্ট চেকার্সের ওই সভায় শীর্ষ মন্ত্রীদের করনীয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ক্যামেরায় ধারণ করতে দেয়ার সিদ্ধান্তটি হিসাব কষেই নেয়া হয়েছে।
এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বুঝাতে চাইলেন যে, ইইউ থেকে প্রস্থান প্রক্রিয়ার দায়িত্বে তিনিই রয়েছেন। ওই সূত্র আরও বলেন, এটি এমন একটি দৃশ্য যা বারবার দেখানো হবে।