দক্ষতা ব্যতীত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের শ্রমিকরা বৃটেনে প্রবেশাধিকার পাবে না
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রীরা বৃটেনের বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ও মোট অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা ১,০০,০০০ এর নিচে নামিয়ে আনার ব্যাপারে ঐকমত্য প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের শ্রমিকরা পূর্ণ কর্মসংস্থান বা কাজের অধিকারী না হলে বৃটেনের ভিসা পাবে না।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহের ব্রাসেলসের সাথে বৃটেনের সহজ ব্যবসায়িক চুক্তি অনুসারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভ্রমণকারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রবেশাধিকার থাকবে। কিন্তু প্রতিবছর যে লক্ষাধিক অদক্ষ বা আধাদক্ষ অভিবাসী বৃটেনে প্রবেশ করে থাকে তাদের জন্য দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। হোম সেক্রেটারি আম্বের রুডের বরাতে জানা গেছে, ব্রেক্সিট সংক্রান্ত এক কেবিনেট সাব-কমিটি গত বুধবারের বৈঠকে এ প্রস্তাব উত্থাপন করেছে।
‘একটা শক্ত মতৈক্য হল এই যে, এ ব্যবস্থায়ই চলবে’ জানিয়েছেন সাব-কমিটির অভ্যন্তরীণ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান যে, ‘মন্ত্রীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ সিদ্ধান্তই বলবৎ থাকবে। তবে তারা এর বিকল্পও ভেবে দেখবেন।’
‘বাস্তবতা এই যে, এটা একমাত্র উপায় যা দীর্ঘমেয়াদে চলবে এবং এটা ফলাফল বয়ে আনবে যার জন্য বৃটেনের লোকজন ভোট প্রদান করেছেন। যা হলো সঠিকভাবে আমাদের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করা।’
বৃটেনের সরকারী কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন-এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বৃটেনবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ভিসানীতি প্রবর্তন করবে। এর অর্থ হচ্ছে একজন বৃটিশ নাগরিককে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহে প্রবেশকালে ওয়ার্ক পারমিট বা কার্যানুমতি লাগবে এবং দক্ষ কর্মীর জন্য সীমিত থাকবে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে ভ্রমণেচ্ছুক ও ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাপারে ভিসানীতি শিথিল থাকবে।
বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ পরিকল্পনার নিন্দা জানাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান যুক্তি দেখাচ্ছে যে, কম বা আধা দক্ষ কর্মীদের বৃটেনে প্রবেশাধিকারের প্রয়োজন রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ দালান নির্মাণ ও ফলাহরনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে সূত্রগুলো জানিয়েছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ থেকে বর্তমানে নিযুক্ত লক্ষ লক্ষ মজুদ শ্রমিক কর্মরত থাকবে। আশা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ঘোষণা করবেন যে, ঐ সমস্ত (নিযুক্ত) শ্রমিকদের আবাসনও দেয়া হবে।
কর্মসস্থানের অপ্রতুলতা মেটাতে কৃষিখাতে মৌসুমী কর্মসস্থানের কর্মকান্ড চালু করা যেতে পারে। এতে করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত শ্রমিকদের বৃটেনে সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রবেশাধিকার লাভ করতে পারবে। শ্রমিকদেরকে আন্তঃকোম্পানী বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের স্থানান্তর প্রক্রিয়ামত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহের অন্তর্গত এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ সুবিধা পাবে।
আত্মকর্মসংস্থানকারীদের জন্য বৃটেনে সুবিধা প্রবর্তন করা হবে এ শর্তে যে, তারা দক্ষ এবং স্বনির্ভর। উদাহরণ স্বরূপ পোল্যান্ডের ঢালাই কাজের শ্রমিকদেরকে বৃটেনে প্রবেশাধিকার দেয়া হবে যদি এখানে তাদের কাজের চাহিদা থাকে। কাজের এ চাহিদা ও ভিসা পদ্ধতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবশিষ্ট দেশসমূহের কর্মীরা তাদের আশায় গুড়েবালি হিসেবে দেখবে এবং বৃটেন একমাত্র বাজার মালিক হিসেবে সমর্থ থাকবে।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড টাস্ক বৃহস্পতিবার এক বক্তব্যে বলেছেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহের জনসাধারণের স্বাধীন চলাফেরার নীতির ব্যাপারে কোনো আপস চলবে না। তিনি বলেন, ‘একমাত্র বিকল্প হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে কঠোরভাবে বৃটেনের প্রত্যাহার অথবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বৃটেনের অবস্থান।’
এ সপ্তাহের প্রারম্ভে, প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে পরিষ্কার জানিয়েছেন যে, তার সবচেয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিক বিষয় হল সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ। তিনি বৃটিশ এমপিদের বলেছেন, ‘আমরা যা করতে যাচ্ছি তা হলো বৃটিশ জনসাধারণ যার পক্ষে ভোট দিয়েছেন তা আলোচনা করত: ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিত্যাগ। আর আমরা যা করতে যাচ্ছি তা আমাদের আদান-প্রদান উচ্চাভিলাষ, বৃটিশ জনসাধারণের পক্ষে সর্বোত্তম চুক্তি এবং যা হচ্ছে ইউরোপীয় বাজারে সর্বোচ্চ সম্ভব প্রবেশাধিকার এবং বিভিন্ন সংস্থার সাথে ইউরোপীয়ান বাজার ব্যবসা পরিচালনা করা।
থেরেসা মে আরও বলেন, ‘আমি এও পরিষ্কার করে দিতে চাই যে, বৃটিশবাসীর ভোট বলছে যে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের জনসাধারণের আমাদের বৃটেনে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে চাই এবং বিশ্বাস করি যে বৃটিশ জনসধারণ যা চায়, আমাদের তাই দিতে হবে।’
‘বৃটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করছে। আমরা আমাদেরকে প্রশ্ন করছি না কোন ধরনের সদস্য পদ আমরা চাই। আমরা বলছি বৃটেনের জন্য সঠিক সম্পর্ক যা আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য সর্বোচ্চ উপকারী এবং সাথে সাথে বৃটিশ নগরিকদের জন্যও লাভজনক হবে।’
এ বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক পয়েন্টভিত্তিক ভাগাভাগি যা বরিস জনসন এবং ভোট লীভ উভয়ে গণভোটের প্রচারাভিযানকালে প্রস্তাব করেছিলেন তা প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে প্রত্যাখ্যান করেন।
শতকরা সত্তর ভাগ ইউপরোপীয় ইউনিয়নবাসী বৃটেনে কাজের জন্য আসে। সেখানকার ৮০% কর্মী যারা বিগত দশ বছর যাবৎ বৃটেনে এসেছে তারা নি¤œ বা আধাদক্ষ কর্মসংস্থান পেয়েছে।
বৃটেনের ১২ বিলিয়ন পাউন্ড বিদেশ সহায়ক বাজেট ব্যবসায়িক নীতিতে বৃটেনের রফতানীকারক, আন্তর্জাতিক সাহায্য নীতি যা কিনা বহির্দেশীয় চুক্তির বিরুদ্ধে স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচল রাখতে সক্ষম হবে।
আগামী বছর দু’জন কেবিনেট মন্ত্রী বিদেশ কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আলোচনার জন্য আফ্রিকা সফর করবেন বলে জানা গেছে।