সারা বিশ্বে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষের মুখের ভাষা সিলেটী

Spread the love

SylhetiBangla_edited-1বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ:সারা বিশ্বে বর্তমানে এক কোটি ষাট লক্ষ মানুষের মুখের ভাষা হচ্ছে সিলেটী। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষীদের সিংহ ভাগই সিলেটী ভাষায় কথা বলেন। লন্ডনের সিলেটী রিসার্চ এন্ড ট্রেন্সলেশন সেন্টারের উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপে বলা হয় বাংলাদেশে মোট ৪২ টি ভাষা প্রচলিত আছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে,  সিলেট অঞ্চল এবং ভারত ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিশ লক্ষেরও বেশী। বৃহত্তর সিলেটের বর্তমান জনসংখ্যা এক কোটি।
সিলেটি ভাষার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এ ভাষার প্রচলন শুধু সিলেটেই সীমাবদ্ধ নয়, ভারতের আসাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ের বহু সংখ্যক লোকের মুখের ভাষা সিলটী। এটি একটি প্রাচীন ভাষা তাতে কোন সন্দেহ নেই। ধারণা করা হয়, বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদ সিলেটের আঞ্চলিক বাংলায় লিখিত। ভাষা গবেষক সৈয়দ মোস্তফা কামাল ও অধ্যাপক মুহম্মদ আসাদ্দর আলীর মতে জটিল সংস্কৃত-প্রধান বাংলা বর্ণমালার বিকল্প লিপি হিসেবে ‘সিলটী নাগরী’ লিপির উদ্ভাবন হয়েছিল খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। গবেষকদের ধারণা, ইসলাম প্রচারক সুফী দরবেশ এবং স্থানীয় অধিবাসীদের মনের ভাব বিনিময়ের সুবিধার জন্যে নাগরী লিপির উদ্ভাবন হয়েছিল। এই নাগরী বা সিলেটী ভাষা শুধু ভারত বা বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, ক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিস্তৃতি লাভ করেছে।
ব্রিটেন প্রবাসী আব্দুস সালাম ওদুদ  বলেন, দূর প্রবাসে নতুন প্রজন্মের কাছে স্বীয় জাতিসত্তার ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখতে মরিয়া সব ভাষাভাষী মানুষ। বাঙালিরাও তার ব্যতিক্রম নয়। বিলেতে আমরা যারা আছি তাদের প্রায় সবার মুখের ভাষা সিলেটী।
আমেরিকা প্রবাসী সারওয়ার চৌধুরী  বলেন, ভিনদেশে সিলেটী ভাষায় ভাব প্রকাশ করে আমরা স্বস্তি পাই, এ ভাষায় কথা বলে আমরা যে তৃপ্তি পাই অন্য ভাষায় তা পাইনা।
800px-Silotiবিশ্বে কথ্য ভাষার সংখ্যা ৭৩৫৮। ২০০৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬৮০৯। ভাষা নিয়ে গবেষণা এবং অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান ইথনোলগ এর সর্বশেষ প্রকাশনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য যে, ২০০০ সালে বিশ্বে কথ্য ভাষার সংখ্যা ছিল ৬৮০৯ । ইথনোলগ ১৯৫০ সালে সর্বপ্রথম চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছিল যে, ৪২১টি কথ্য ভাষা আর বেঁচে নেই। ২০০৮ সালে তারা উল্লেখ করেছিল যে ৪৫৭টি ভাষার প্রতিটিতে ৫০ জনেরও কম লোক কথা বলেন। ১৯৩৪ সালে এই সংস্থাটির রিপোর্টে বলা হয়েছিল বিশ্বে ১০০০ ভাষা রয়েছে-যা লেখার কোন অক্ষর নেই। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইথনোলগের তথ্যকে ইউনেস্কো অপরিসীম গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ধর্মভিত্তিক এই সংস্থাটির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে কম ভাষাভাষী জনগোষ্ঠির কাছে তাদের ভাষায় বাইবেল পৌঁছিয়ে দেওয়া। এর প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম টোনসেড-১৯৩৪ সালে বয়স্কদের অক্ষর জ্ঞান প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু করেন। সে বছর ছাত্রসংখ্যা ছিল মাত্র ২ জন। পরের বছর বেড়ে ৫ জন হয়। ২০০৯ সালে ছিল এই সংস্থার ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। বর্তমানে ৭০ দেশে ২৫৫০ ভাষায় কাজ করছে এ সংস্থা। কর্মীসংখ্যা হচ্ছে ৩৫ হাজার। প্রতিষ্ঠাকালিন এর নাম ছিল সামার ইন্সটিটিউট অব লেঙ্গুয়েস্টিক্স সংক্ষেপে এসআইএল। বর্তমান নাম হচ্ছে ইথনোলগ লীগ অব ওয়ার্ল্ডস।
ইথনোলগ চিহ্নিত বাংলাদেশের ৪২টি ভাষা হচ্ছে ১. বাংলা (২০০১ সালের সেনসাস অনুযায়ী)-১১ কোটি, ২. ডবহারী-২ লাখ ৫০ হাজার, ৩. আসামী-৯ হাজার, ৪. আটং-৫৪০০, ৫. ডবঞ্চুপুরী-৪০ হাজার, ৬. বার্মিজ-৩ লাখ, ৭. চাক-৫৫০০, ৮. চাকমা-১ লাখ ৫০ হাজার, ৯. চীন আসো-২৩৪০, ১০. চীন বাওয়েম-১৩৫০০, ১১. চীন ফালাম-অনুসন্ধান চলছে, ১২. চীন হাকা-১২৬০, ১৩. চীন খুমী-২০৯০, ১৪. চট্টগ্রামের আঞ্চলিক-১ কোটি ৩০ লাখ, ১৫. গাড়ো-১ লাখ ২০ হাজার, ১৬. হাজং-৮ হাজার, ১৭. ইন্ডিয়ান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ-অনুসন্ধান চলছে, ১৮. কোচ-৬ হাজার, ১৯. খোসী-অনুসন্ধান চলছে, ২০. কোদা-১৩০০, ২১. কোক বরক-৫ হাজার, ২২. কুরক্স-৪০ হাজার, ২৩. এার্মা-দেড় লাখ, ২৪. মেগাম-৬৮৭০, ২৫. মিটেই-১৫ হাজার, ২৬. মিজু-২৫০, ২৭. মরো-৩০ হাজার, ২৮. সুন্দারী-২৫০০, ২৯. পাঙ্খুরা-২৫০০,৩০. পিনার-৪ হাজার, ৩১. রাখিনি-৩৫ হাজার, ৩২. রংপুরী-১ কোটি (ভারতসহ দেড় কোটি), ৩৩. রিয়াং-৫০০, ৩৪. রোহিঙ্গা-২ লাখ, ৩৫. সাদরী ওরিয়ান-১ লাখ ৬৬ হাজার, ৩৬. সান্তলা-১ লাখ ৫৭ হাজার, ৩৭. সাওরিয়া-৭ হাজার, ৩৮. সিলেটি-৭০ লাখ (ভারতসহ ১ কোটি ৩ লাখ), ৩৯. টান চইঙ্গা-২১ হাজার ৬০০, ৪০. ত্রিপুরা-৮৫ হাজার, ৪১. ও ছৈ-২২ হাজার ৪০০ এবং ৪২. ওয়ার জৈন্তিয়া-১৬ হাজার।
ইথনোলগ এর সর্বশেষ রিপোর্টে বিশ্বে চীনা ভাষায় সবচেয়ে বেশী লোক কথা বলেন-১৩০ কোটি। এরপর রয়েছে স্প্যানিশ-৭০ কোটি, ইংরেজী-৬০ কোটি, হিন্দি-৪৯ কোটি, আরবী-২৮ কোটি, মালয়-২৬ কোটি, পর্তুগীজ-২৩ কোটি, বাংলা-১৯ কোটি, রাশিয়ান-১৪.৪ কোটি এবং ফ্রান্স-১২.৮ কোটি। অপরদিকে খুব কমসংখ্যক লোকের ভাষা হচ্ছে কুয়েতে লা আইয়োলা-২ জন, রাশিয়ায় টের সমি-২ জন, অস্ট্রেলিয়ায় কেয়ার ডিলড-১০ জন, রাশিয়ায় ভটিগ-২০ জন, নওরয়ে ও সুইডেনে উসি সামি-২০ জন, পিটি সামি-২০ জন, তিব্বতে ডুজিকেন-৩৩ জন, উত্তর চীন ও দক্ষিণ রাশিয়ায় মানছু-৬০ জন


Spread the love

Leave a Reply