বিএনপি সেজে অ্যাসাইলাম আবেদন , রিফিউজ হচ্ছেন ৯৪ শতাংশ
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃবাংলাদেশে জীবন হুমকির সম্মুখীন এমন আশঙ্কায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করছেন অবৈধ ইমিগ্রান্টরা । এ সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে ।যুদ্ধ, সংঘাত, ধর্ম, বর্ণ কিংবা রাজনৈতিক কারণে নিজ দেশে জীবন হুমকির সম্মুক্ষিণ- এমন ব্যক্তি ও পরিবার যুক্তরাজ্যে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় চাইতে পারেন। আবার ইউরোপিয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিয়ম অনুযায়ী নির্যাতনের শিকার হতে পারেন এমন কোনো দেশের নাগরিককে সংশ্লিষ্ট দেশে ফেরত পাঠাতে পারে না যুক্তরাজ্য। সাধারণত যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এমন বিদেশিরা নিজ দেশে ফেরত না যেতে আশ্রয়ের আবেদন করেন। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গত বছর ব্রিটেনে আশ্রয় প্রার্থনা (অ্যাসাইলাম অ্যাপ্লিকেশন) করেছেন ২ হাজার ২৩৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক। এর মধ্যে বাংলাদেশিদের মাত্র ৬ শতাংশ আবেদন প্রাথমিক বিবেচনায় সফল হয়েছে। অর্থাৎ এ সময়ে বাংলাদেশিদের ৯৪ শতাংশ আবেদন প্রত্যাখান (রিফিউজ) করে দিয়েছে হোম অফিস। এর কারন হিসেবে জানা গেছে আবেদনকারিদের বেশির ভাগই ছিল ভুয়া । অনেকেই বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেন , কিন্তু ব্রিটেনে আশ্রয় প্রার্থীর আবেদন করেছেন বিএনপি কিংবা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী বা নেতা হয়ে । বাংলাদেশে কিংবা ব্রিটেনে সক্রিয় আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেন তারাও এখানে বিরোধী দল হয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন । সরকারের বিরুদ্ধে নির্যাতনের ভুয়া কাগজ পত্র সাজিয়ে হোম অফিসে জমা করেছেন , এদের অনেকেই সফল হয়েছেন ।আবার সত্যিকারের নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশে বিরোধী রাজনীতি বিএনপি কিংবা জামায়াত শিবির করে নির্যাতিত হচ্ছেন এমন আবেদনকারিদের আবেদন প্রত্যাখ্যান হচ্ছে । সত্যিকারের কাগজ পত্র জমা দিয়েও তারা হোম অফিস কে প্রমান করতে ব্যর্থ হয়েছেন ।
ব্রিটেনের জাতীয় পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষের (অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্স বা ওএনএস) প্রকাশিত অভিবাসন বিষয়ক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ, সংঘাতের কারণে শরণার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদন আগের বছরের তুলনায় ৪ শতাংশ কমে হয়েছে ৩৮ হাজার ৫১৭। এরমধ্যে ৪ হাজার ৭৯২ জনের আবেদন নিয়ে শীর্ষে আছে ইরান। দ্বিতীয় অবস্থানেই আছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের নাগরিকদের আবেদনের সংখ্যা ৩ হাজার ৭১৭। এর পরেই আছে ইরাক ও আফগানিস্তানের নাম। দেশ দুটির নাগরিকদের আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা যাথাক্রমে ৩ হাজার ৬৫১ ও ৩ হাজার ৯৪। আর পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে অস্থিতিশীল সিরিয়ার নাগরিকরা এ তালিকায় আছেন নবম স্থানে। শীর্ষ পাঁচ দেশের নাগরিকদের আশ্রয় আবেদনের হার বাড়লেও সিরিয়ান নাগরিকদের আবেদন আগের বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ কমে হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫৮৮।
এ বছর মোট ৯ হাজার ৯৩৩ জনের আশ্রয় আবেদন প্রাথমিক বিবেচনায় সফল হয়েছে। যা মোট আবেদনের ৩২ শতাংশ। আবেদন সফল হওয়ার ক্ষেত্রেও শীর্ষে রয়েছেন ইরানের নাগরিকরা। দেশটির ৩৯ শতাংশ আশ্রয় আবেদন সফল হয়েছে। পাকিস্তানের নাগরিকদের ১৬ শতাংশ, ইরাকের ১৩ শতাংশ এবং আফগানিস্তানের নাগরিকদের ৩৫ শতাংশ আবেদন সফল হয়েছে।
এছাড়া গত বছর ৬ লাখ ৯২ হাজার লোক জার্মানিতে আশ্রয় আবেদন করে। একই সময়ে ইতালিতে এক লাখ ১৭ হাজার এবং ফ্রান্সে ৮৩ হাজার শরণার্থী আশ্রয় আবেদন করে। ইইউভুক্ত ২৮ দেশের মধ্যে শীর্ষ ওই তিন দেশেই আশ্রয় আবেদন করেছেন ৭৫ শতাংশ শরণার্থী। তবে ইইউতে শরণার্থীদের আশ্রয় আবেদনের হার কিছুটা কমে হয়েছে ১১ লাখ ৮৯ হাজার। যা ২০১৫ সালে ছিল ১৩ লাখ ১৯ হাজার।
গত ২০ ডিসেম্বর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট লাইব্রেরির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে মোট ৫ লাখ ৯৩ হাজার ১৪০টি আশ্রয় আবেদনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এতে বাংলাদেশিদের আবেদন ছিল মোট ১১ হাজার ৯০টি। এর মধ্যে এক হাজার ৭৭৫টি আবেদন সফল হয়, আর প্রত্যাখাত হয় ৯ হাজার ৩১৫টি আবেদন। এ ক্ষেত্রে আশ্রয় আবেদনগুলোর প্রায় ৫২ শতাংশ সফল হলেও বাংলাদেশিদের আবেদন সফল হওয়ার হার মাত্র ১৬ শতাংশ।
ইইউর বিভিন্ন দেশে যেসব বাংলাদেশি অ্যাসাইলাম আবেদন করেছেন তাদের বেশির ভাগই যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া, লিবিয়া কিংবা ইরাক থেকে এসেছেন বলে মনে করা হয়।
বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় বাংলাদেশকে একটি দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। শাসন ব্যবস্থাও মোটামুটি গণতান্ত্রিক বলে ¯^ীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিকরা কেন নিজ দেশে ফেরত না গিয়ে যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে আশ্রয় চাইছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কিংডম সলিসিটর্সের প্রিন্সিপাল তারেক চৌধুরী পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশে নিরাপত্তা একটি বড় সমস্যা। যে কেউ যে কোনো সময়, খুন গুম কিংবা নির্যাতনের শিকার হতে পারেন। এ ধরণের অনেক ঘটনার নজির আছে। এ জন্য যাদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো কারণে বিরোধ আছে তারা বাংলাদেশে নিরাপতবোধ করেন না।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে ব্রিটেনে নেট অভিবাসন (ইমিগ্রেন্ট) হয়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার। যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৪৯ হাজার কম। ওএনএস বলেছে, টানা দুই বছর পর নেট অভিবাসনের হার তিন লাখের নিচে নেমে এল। ২০১০ সালে ক্ষমতায় আসার পর কনজারভেটিভ সরকার নেট অভিবাসন বছরে এক লাখের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। থেরেসা মের নেতৃত্বাধীন সরকারও সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ওএনএস এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে ব্রিটেনে মোট মানুষ প্রবেশ করেছে ৫ লাখ ৯৬ হাজার। এর মধ্যে ইইউভুক্ত দেশগুলো থেকে এসেছে ২ লাখ ৬৮ হাজার। আর ইইউর বাইরের দেশগুলো থেকে এসেছে ২ লাখ ৫৭ হাজার। এবং ৭১ হাজার ব্রিটিশ নাগরিক ফিরে এসেছেন অন্য দেশ থেকে। একই সময়ে মোট ৩ লাখ ২৩ হাজার মানুষ ব্রিটেন ছেড়ে গেছে। যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ হাজার বেশি।