ব্রিটেনে প্রবেশ করেছে চার শতাধিক জঙ্গি ,কড়া সতর্কতা

Spread the love

londonattack-20170323023357-1170x645বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ মসুলসহ ইরাক ও সিরিয়ার বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর হয়ে লড়াই করা ৪ শতাধিক ব্যক্তি যুক্তরাজ্যে ফিরেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে এ খবর দিয়েছে স্কাই নিউজ। কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে সম্প্রতি যে ধরনের বন্দুক ও বোমা হামলা হয়েছে, ঠিক একই ধরনের হামলা যুক্তরাজ্যে ঘটার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ, ফেরত আসা অনেক জঙ্গিরই অস্ত্রচালনা ও বিভিন্ন বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ রয়েছে।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সাবেক আগ্নেয়াস্ত্র বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা টনি লং বলেন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এ ধরনের জঙ্গিদের হামলা মোকাবিলা করাটা বেশ কঠিন হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এরা যুদ্ধফেরত যোদ্ধা। হয়তো ন্যাটো যেভাবে নিজেদের সেনাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, তারা সেভাবে প্রশিক্ষিত নয়। কিন্তু তারা সংঘাত দেখেছে বেশি। পাশাপাশি শহরাঞ্চলে তাদের যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা বৃটিশ সামরিক বাহিনীর বেশিরভাগ সেনার চেয়ে বেশি। আপনাকে বিষয়টি আমলে নিতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘অবশ্যই, তারা তাদের জ্ঞান সঙ্গে নিয়েই যুক্তরাজ্যে ফিরছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশের ওপর যে ধরনের আইনি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা বিবেচনায় নিলে এই সকল লোকের ওপর নজরদারি করাটা ভীষণ কঠিন হবে।’
isis-final-battle-425147খবরে বলা হয়, এখন পর্যন্ত সিরিয়া ও ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বৃটেনে ফেরত আসা জঙ্গিদের খুবই ক্ষুদ্র অংশের বিরুদ্ধে বিচার করা গেছে। কারণ, তাদের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হলে কর্তৃপক্ষের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ থাকতে হয়। আর এই যুদ্ধফেরত জঙ্গিরা বিদেশে তাদের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ লুকাতে যথেষ্ট কাঠখড় পোড়ায়। যেমন, পশ্চিম লন্ডনের ইমরান খাজা (২৯) বর্তমানে ১২ বছরের সাজা ভোগ করছে। এই জঙ্গি সিরিয়ায় নিজের মৃত্যুর ভুয়া কাহিনী বানায়, যাতে কোনো সন্দেহ সৃষ্টি না করেই বৃটেনে ফেরা যায়। বিদেশে আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গিগ্রুপে যোগ দিয়েছিল ইমরান খাজা। তাকে সিরিয়ান সেনাদের খণ্ডিত মস্তকের সঙ্গে ছবি তুলতেও দেখা যায়। ছয় মাস সিরিয়ায় ছিল ইমরান। পরে ডোভার বন্দর দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করার সময় ধরা পড়ে সে। কর্তৃপক্ষের কাছে সে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনার প্রস্তুতি, প্রশিক্ষণ নেয়া ও আগ্নেয়াস্ত্র রাখার কথা স্বীকার করে।
নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলছে, তারা নিশ্চিত হতে পারেননি খাজা দেশে ফিরে হামলা চালাতো কিনা। কিন্তু যুদ্ধফেরত এসব জঙ্গি জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
এক দশকেরও বেশি সময় আগে, আল কায়দার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীদের কয়েকটি গ্রুপ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে গণহারে নৃশংসতা চালানোর জন্য দায়ী। ২০০৫ সালের ৭ই জুলাই লন্ডনে এক ভয়াবহ হামলা চালানো জঙ্গিরা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে আল কায়দা প্রশিক্ষণ শিবিরে ছিল। লন্ডনে একই বছরের ২১ই জুলাই একই ধরনের হামলা চালিয়ে ব্যর্থ হয় কিছু সন্ত্রাসী। তারাও আগ্নেয়াস্ত্র চালনা ও বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ পেয়েছিল। ২০০৬ সালে তরল বোমা দিয়ে বিমান উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা কয়েকজন সন্ত্রাসীও একই ধরনের প্রশিক্ষণ পায়।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তাহির আব্বাস বলেন, ‘পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী নিশ্চিতভাবে সব ধরনের সম্ভাব্য ঘটনার কথা মাথায় রাখছে। কারণ, বৃটেনে আমরা অতীত থেকে শিক্ষা পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধফেরত জঙ্গিরা বহু দিক থেকে নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ। তারা খুবই তিক্ত ও ভয়াবহ এক সংঘাতের ভেতর দিয়ে গেছে। প্রায়ই রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ করতে হয়েছে। তাই বৃটেনে ফেরায় তাদের এই সক্ষমতাই একটি বিশেষ হুমকি। আর সম্ভবত, তাদের ফেরত আসতে নির্দেশনাই দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে হামলা চালানোর নির্দেশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে।’ তাহির আব্বাস আরো বলেন, ‘তারা সম্ভবত মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত (ট্রমাটাইজড)। আবার তাদের প্রত্যেকেই খুবই অভিজ্ঞ ও উচ্চ প্রশিক্ষিত। এদের কাছ থেকে হুমকি বেশ গুরুতর।’
খবরে বলা হয়, যুদ্ধফেরত জঙ্গিদের ক্রমবর্ধমান হুমকির প্রেক্ষিতে জরুরি সেবাদাতা সংস্থাগুলো বন্দুক ও বোমা হামলা মোকাবিলার প্রশিক্ষণ বাড়িয়েছে। ১৯শে মার্চ টেমস নদীতে দুই শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা একটি প্রশিক্ষণ মহড়ায় অংশ নেয়। এতে সশস্ত্র পুলিশের দল একটি প্রশিক্ষণ সেশনে অংশ নেয়, যেখানে কয়েক ডজন মানুষের জিম্মিদশার প্রেক্ষাপটও ছিল। অপরদিকে যুক্তরাজ্য সরকার দেশজুড়ে সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে অতিরিক্ত সহায়তা হিসেবে লাখ লাখ পাউন্ড সরবরাহ করেছে।


Spread the love

Leave a Reply