তারেক রহমান লন্ডনের ওভালে গেলেন আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ কেউ গেলেননা? ও একজন নরমান টেবিট!!
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী
গত মঙ্গলবার ৩১শে মে লন্ডনের বাঙালীরা খুবই উত্তেজিত ছিলেন কারন বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম ইংল্যেন্ডের সাথে খেলতে এসেছিল, এ দিন সবাই বাঙালী হয়ে নেচে গেয়ে ওভালে গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ টিমকে সমর্থন করা। আমাকে অনেকেই ফোন করেছিলেন জিজ্ঞাস করেছিলেন যাব কিনা? একে তো রোজা রমজানের দিন। দ্বিতীয়ত ক্রিকেট খেলা আমি খুব একটা বুঝিনা। ফুটবল খেলা বুঝি, বেডমিন্টন ভলিবল খেলা বুঝি। কিন্তু ক্রিকেট মাথায় ঢুকেনা। ফুটবল খেলা দেখার মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করে। যদি ও চামরার বল ২২ জনে লাতি মারে, এর মধ্যে কি এমন কৃতিত্ব আমি বুঝিনা, অথচ আর্জেন্টিনার মেরাডোনা, রিয়েল মাদ্রিদের রোনাল্ড,বার্সিলোনার মেসি এদের পায়ের দাম কোটি কোটি পাউন্ড বা ইউরো যাই বলি, ক্রিকেট প্লেয়ার যারা তাদেরও অনেক নাম দাম।
মাঝে মধ্যে ভাবি এ পৃথিবীতে কারো কোনো কাজে আসলামনা। মানুষ তো ভাবে শোয়েব চৌধুরী অনেক কিছু, চেনা জানা মানুষের কত প্রত্যাশা, কিন্তু অনেকেই জানেনা আমার ভিতরের মানুষটিকে, আমি কত ব্যর্থ কত অসহায়, মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারিনা, বাহিরে যার হাসির ছটা ভিতরে তার চোখের জল, এটাই তো আমার জীবন। অনেকেই আমার কাছে আসে চাকুরীর জন্য, কাজ করিয়ে দেয়ার জন্য, বাংলাদেশের সরকার, মন্ত্রী এমপিদেরকে বলার জন্য, ওরা ভাবে মন্ত্রী এমপিকে বললেই কাজ হবে, ওরা জানেনা বাংলাদেশের অনেক মন্ত্রী এমপিরা যে কত বড় দুর্নিতীবাজ। ওরা টাকা ছাড়া কথা বলেনা। প্রতিটি সরকারের সময় মিঃ টেন পার্সেন্ট মিসেস টেন পার্সেন্ট দাড়িয়ে যায়!! লন্ডনে ও অনেকেই মনে করেন আমি কথা বললে যে কোনো জায়গায় চাকুরী দিয়ে দিবে। মেয়র জন বিগস থেকে শুুরু করে রুশনারা আলী সবাই আমার হাতের মুঠোয়।
সে যাক,এবারের খেলা দেখতে গিয়েছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ও স্ত্রী জোবায়দা রহমান, সাথে ছিলেন বিএনপি নেতা পারভেজ মল্লিকের স্ত্রী জেরিন, জেরিন এক সময় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেত্রী ছিলেন, পরবর্তীতে ছাত্রদলের সভাপতি পারভেজ মল্লিককে বিয়ে করে আওয়ামী রাজনীতির অবসান ঘটান। জেরিনের রাজনীতি ভালোবাসার কাছে অনেকটা হেরে গেছে। সে ভালোবাসা কার প্রতি আমি জানিনা। তবে সময় হয়তো একদিন বলে দিবে সব কিছু, জেরিন এবং পারভেজ ভাইকে দেখলে আমার মনে হয় পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যমলেটসের লেবার পার্টির ডেভিড এডগার ও লিবরেল ডেমক্রেটিক পার্টির ষ্টেপেনি ইটনের কথা, ডেভিড যখন ইটনকে বিয়ে করেন তিনি তখন লিবরেল ডেমোক্রেট পার্টির নেত্রী, কিন্তু তারা কেউ দল ছাড়েননি। যে যার দল করছেন। তাতে কোনো অসুবিধে নেই। যত সমস্যা বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায়।
তারেক রহমান সাহেবের ব্যাপারে কিছু লিখতে গেলে আমার ভয় হয় কারন কখন তিনি বিগড়ে গিয়ে আমার ব্যাপারে কোনো কিছু বলে বসেন কি-না? তা ছাড়া উনার আশে পাশে কিছু তৃতীয় শ্রেনীর রাজনীতিবিদ থাকে যারা আমার লেখার উত্তর দিতে গিয়ে কি থেকে কি লিখে তারা নিজেরাই বুঝে উঠতে পারেনা। ২০১৪ সালে তারেক সাহেবের সাথে আমার যে একুশে টিভি নিয়ে ডিভেইট হয়েছিল এবং পরবর্তীতে তারেক রহমান গোস্তাকী মাফ করবেন নামে একটা লেখা আমি লিখেছিলাম, সেটাকে তারা নোংরাভাবে উপস্থাপন করেছেন। লন্ডনে বাংলা মিডিয়ায় সবার সাথেই একটি সুন্দর এবং শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। একজন সাংবাদিক আরেকজনের সমালোচনা সাধারনত করেনা করলেও রেসপেক্ট রেখে করে। তারেক সাহেবের আশে পাশে থেকে যারা আমার লেখার উত্তর দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন তাদেরকে বলি আমার লেখা পড়ে বুঝে শুনে উত্তর দিলে ভালো হয়। এ সব সস্তা লেখা আমি তারেক সাহেবের চোখে পড়ার জন্য আওয়ামীলীগের চোখে পড়ার জন্য লিখি, এসব কথা লিখলে নিজের কাছে কেমন জানি ছোট মনে হয়। গত তিন বছর আমি লিখিনি, কারন আমার লেখার উত্তর যারা দেন তারা লেভেল বুঝেননা।
সে যাক এ বিষয় নিয়ে আর কথা না বাড়ানোই ভালো। এবারে একটি কাজের কাজ করেছেন তারেক রহমান , আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে। খেলা দেখতে তিনি মাঠে গিয়েছেন। লন্ডনে আসার পর বোধ হয় এটিই তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে প্রশংসা পেতে পারে। সে জায়গায় আওয়ামীলীগের কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা নেত্রীকে মাঠে দেখা যায়নি।
এবারের ওভাল ষ্টেডিয়ামের খেলার মাঠে জেরিন গিয়েছিলেন মুখে বাঘের চিহ্ন একে। দেশ প্রেম ইমানের অঙ্গ ,তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অনেকেই গিয়েছেন কেউ কেউ দেশের পতাকা গায়ে জড়িয়েছেন। যারা গিয়েছেন তাদের বেশীরভাগেরই দ্বৈত্য নাগরিকত্ব। বেশীরভাগেরই বৃটিশ পাসপোর্ট রয়েছে। তারা খেলার মাঠে গিয়ে বাংলাদেশের প্রতি তাদের প্রেম দেখিয়েছেন। কিন্তু যে বৃটেনে তারা বছরের পর বছর বসবাস করছেন যে বৃটেনের আলোবাতাসে তাদের ছেলে মেয়ে বেড়ে উঠছে সে বৃটেনের প্রতি তাদের লয়ালিটি কি?
সে যাক, ওভালে বাঙালীদের যাওয়া দেখে ফেইস বুকে তাদের ছবি দেখে আমার বার বার নরমান টেবিট এর কথা মনে হয়েছিল। নরমান টেবিট ছিলেন কনজারবেটিব সরকারের ওয়ার্ক ও পেনসন মন্ত্রী তিনি বলেছিলেন সাউথ ইষ্ট এশিয়া এবং আফ্রো ক্যরাবিয়ানদের ক্রিকেট গ্রাউন্ডে পাঠিয়ে দিলে বুঝা যাবে কোনে দেশের প্রতি তাদের বেশী লয়ালিটি। ১৯৯০ সালে নরমানের দেয়া বক্তব্যকে অনেকেই বর্নবাদী বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। ২০১৭ সালে বাঙলীদের ওভাল ইষ্টিডিয়ামে খেলা দেখাকে কেন্দ্র করে একজন সাদা বন্ধু প্রশ্ন করেছিল তোমাদের লয়ালিটি কোন দেশের প্রতি বেশী? জবাব আছে? সাদা বন্ধু বলেছিলেন তোমরা এখানে সোসেল সিকিউরিটির পয়সা নেও, সব ধরনের বেনিফিট ক্লেইম করো, সাদা মানুষের মত সর্ব প্রকারের সুযোগ সুবিধে গ্রহন করো অথচ বাংলাদেশ ইংল্যেন্ডের খেলার সময় লন্ডনে বসবাস করে লন্ডনের মাঠিতেই বাংলাদেশকে সমর্থন করো। সাদা বন্ধু বলেছিলেন এটা তো বৃটেনের প্রতি এক ধরনের উপহাস।
প্রিয় পাঠক যারা বৃটিশ পাসপোর্ট নিয়েছেন তারা তো শপথ করে নিয়েছেন , আমার বলার কিছুই নেই। বুদ্ধি বিবেক খাঠিয়ে চলুন।
পাদটিকাঃ যে দেশে জন্ম নিয়েছি যে দেশের আলো বাতাসে বড় হয়েছিলাম, যে দেশের মুক্তিযুদ্ধে আমার বাবা চাচাদের অবদান রয়েছে সে দেশে দৈত্ব নাগরিকত্ব বজায় রাখার জন্য আমাকে আন্দোলন করতে হয় অথচ বৃটেনের খেয়ে বৃটেনের পড়ে বাংলাদেশ টিম কে সাপোর্ট করেন। ব্যাপরটা রাজাকারের পর্যায়ে পড়ে গেলনা।
এ ব্যাপারে টিউলিপ সিদ্দিকী কে ধন্যবাদ জানাতে হয় তিনি সেদিন বাংলাদেশের খেলা দেখতে যাননি, কারন টিউলিপ বৃটিশ এমপি। টিউলিপের বৃটেনের প্রতি লয়ালিটি বেশী। এবং এটাই হওয়া উচিৎ।
লেখক সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব