গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে স্তব্দ করে অবৈধ ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে

Spread the love

unnamedজাহাঙ্গীর আলম মিন্টু:
গত ১৭ এপ্রিল ২০১৭ইং ১৮২৫ দিন (৫ বছর) অতিবাহিত হয়েছে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জনপ্রিয় নেতা ছাত্রদলের সাবেক নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ীর ড্রাইভার আনসার আলীর আজ পর্যন্ত কোন সন্ধান দিতে পারিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার। ইলিয়াস আলী ১৬ এপ্রিল ২০১২ মধ্যরাতে গুম হওয়ার পর হতে বিএনপি ও বিরোধীদল বলে আসছে সরকারের দেশ পরিচালনায় শতভাগ ব্যর্থতা, শেয়ার মার্কেটসহ মন্ত্রীদের দূর্নীতির খবর এবং সর্বশেষ সুরঞ্জিত বাবুর রেলের কালো বিড়ালসহ ধরা পাড়ার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। দেশের সুশিল সমাজ ও রাজনৈতিক নেতারা তা মনে করে। দেশী, বিদেশী মিডিয়ার খবরে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।

ইলিয়াস সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র রক্ষায় আপোষহীন
দেশের জনগণ মনে করে ইলিয়াস আলীর উপর সরকার ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের শকুনের দৃষ্টি পড়েছে। ১৯৯০ সালে এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জেল জুলুম, মামলা হামলায় নির্যাতিত হওয়ার পরও তিনি ছিলেন এরশাদ পতনের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও ছাত্রদলের হিরণময় হাতিয়ার। তার জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালে বিপুল ভোটে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। মূলত তখন থেকেই তিনি সারাদেশের বিএনপি’র নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয আপোষহীন সংগঠক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম সাইফুর রহমানের মত তারকা খচিঁত নেতার পাশাপাশি অনেক বৈরী অবস্থার মধ্য থেকে বৃহত্তর সিলেটে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র পরিণত হন ইলিয়াস আলী। জাতীয় রাজনীতিতে ১/১১ পর আত্মগোপন থেকে বৃহত্তর সিলেটে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও সাবেক মহাসচিব মরহুম খোন্দকার দেলোয়ারের পক্ষে বিএনপিকে পূর্নগঁঠনের লক্ষে নিরলসভাবে কাজ করেন। তার নেতৃত্বের দৃঢ়তা, দেশপ্রেম, অপ্রতিরোধ্য জনপ্রিয়তা, আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও তার নেতৃত্বে সিলেটে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি সরকারি দলের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃহত্তর সিলেটের জনগণকে সুসংগঠিত করে ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ভু-খন্ডকে মরুভুমির হাত থেকে রক্ষার জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছেন সিলেট জৈন্তা ও জাফলং সীমান্তবর্তী বাংলাদেশ অংশে যেখানে মূলবান খনিজ সম্পদ রয়েছে সেখানে ভারত আমাদের সীমানা দখল করার জন্যে প্রতিনিয়ত বিএসএফের মাধ্যমে সন্ত্রাস গোলাগুলি ও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ইলিয়াস ছিলেন প্রতিবাদী। বেগম খালেদা জিয়া গত  ১০ ও ১১ অক্টোবর ২০১১ সিলেট রোড মার্চের কর্মসূচী বাস্তবায়নে নেতৃত্বে সিলেট মহানগর আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে তার সভাপতিত্বে যে মহা-জনসমুগ্র রচিত হয়েছিল তার মূল নায়ক ছিলেন ইলিয়াস। খালেদা জিয়ার রোডমার্চের সফলতা নিয়ে ৩১ অক্টোবর ২০১১ আমার দেশ সম্পাদকীয় পাতায় আমার একটি তথ্যভিত্তিক লেখা ‘‘সময়ের দাবী নিয়ে খালেদা জিয়ার রোডমার্চের বক্তব্যে সরকারি দলে টপ-টুবটমস গাত্রদাহ’’ প্রকাশিত হয়। এতে জনসমুদ্রে খালেদা জিয়ার পাশে ইলিয়াসের ছবি ছাপানো হয়। তিনি আমার লেখা পড়ে এ ধরনের আর্টিক্যাল বেশী বেশী লেখার জন্যে আমাকে উৎসাহিত করেন।

মূলত সেই দিনের জনসভা থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুন: প্রতিষ্ঠার ও সরকার পতনের আন্দোলনের পূণাঁঙ্গরূপ লাভ করে। সিলেটের সেদিনের রোডমার্চের গণজোয়ার সারাদেশের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করেছে।

সাংগঠনিক জনপ্রিয়তাই ইলিয়াস গুমের কারণ :
্ইলিয়াস আলীর স্ত্রী লুনা দাবী করেন তার জানামতে তার শ্বামীর ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক কোন শত্রু নাই। রাজনৈতিক কারণে তার স্বামী গুম হতে পারে বলে তিনিও তার পরিবার বারবার দাবী করে আসছেন। ইলিয়াস আলী বৃহত্তর সিলেটকে সু-সংগঠিত করে বিগত জাতীয় সংসদ হবিগঞ্জে উপ-নির্বাচনে, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে বৃহত্তর সিলেটে বিএনপির পক্ষে বিপুল জয় এনে দিয়েছিলেন। যা আগামী সংসদ নির্বাচনে শতভাগ বিএনপির পক্ষে আসার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় এ জন্যে সরকার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। সরকার নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ইলিয়াসের মত নেতাকে গুম করার হীন পরিকল্পনায় মেতে উঠেছে। ১৮ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদাা জিয়া বলেন,‘সরকারী দল ও এজেন্সীর লোকেরা ইলিয়াস আলীকে ধরে নিয়ে গেছে। তাকে ফিরিয়ে না দিলে চলমান শান্তিপূর্ন আন্দোলন সরকার পতন আন্দোলনে রুপ নিবে’ বলে সরকারকে হুশিয়ার করে দেন। ২১ এপ্রিল’১২ নাগরিক সমাবেশে স্বনামধন্য আইনজীবি ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেন, ‘সুরঞ্জিতের ৭০ লাখ টাকার দুর্নীতির ধামাপাচা দিতেই ইলিয়াস ইস্যু তৈরি করেছে সরকার। সরকার তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে একের পর এক ইস্যু তৈরি করছে’? ইতোমধ্যে এ সরকারের আমলে ১২৭ জনের বেশি বিএনপি ও ভিন্নমতের নেতাকর্মী গুম হয়েছে। আজ পর্যন্ত সরকার তাদের উদ্ধার করে নাই বা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছে। ইলিয়াসকে জীবিত ফেরৎ পাওয়ার জন্যে এ পর্যন্ত দেশে জোরালো আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে। শুধু বিশ্বনাথে তিনজন হত্যা, লক্ষ্মীপুরে একজন ও ঢাকায় বাসচালকসহ মোট ৫ জনের প্রাণ হানি হয়েছে। ইলিয়াস নিঁখোজ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে সিলেটসহ সারা দেশে ৩০ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক ও কাল্পনিক মামলা দিয়েছেন। সরকার সচিবালয়ে বোমা হামলা ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের সামনে গাড়ী ভাংচুর মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ ১৮ দলের শীর্ষ নেতাসহ ৩৪ জনকে জেলে রেখেছে। ইলিয়াস ইস্যু ধাপাচাপা ও আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য ২১ মে গণ-অনশনে সরকারের উদ্দেশে খলেদাা জিয়া বলেন, ‘অবিলম্বে নেতাদের মুক্তি দিন,ইলিয়াস আলীকে ফেরৎ দিন, নইলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে’। সরকার জাতীয় পর্যায়ে নেতৃবৃন্দদের জামিন না দিয়ে জেলে আটকিয়ে রেখেছেন। এতে ফল হবে বিপরীত। ১৮ দলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ আগ্নিগিরির অগ্নি উৎপাতের মত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি বিরোধীদলের চলমান আন্দোলনের ভূকম্পনে সরকারের ক্ষমতা মসনদ চূরমার হয়ে যাবে।maxresdefault

প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে ধম্রজাল সৃষ্টি
ইলিয়াস গুমের পরের দিন ১৯ এপ্রিল তার নিখোঁজে সিলেটসহ সারাদেশ যখন আন্দোলনে উত্তাল তখন মজিবনগর দিবসের সভায় প্রধানমন্ত্রী নিজে বললেন, নেত্রীর নির্দেশে ইলিয়াস লুকিয়ে থাকতে পারেন। আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করতে বিরোধী দলের নেত্রীর নির্দেশে ইলিয়াসকে লুকানো হয়েছে। আন্দোলনের মুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২১ এপ্রিল বললেন অচিরে ইলিয়াস রহস্য উন্মোচিত হবে। যে মুহূর্তে ইলিয়াস আলীর পরিবারকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা আশার বাণী শোনাছিলেন সেই মুহূর্তে চারদিনের কাতার সফর শেষে দেশে ফিরে ২৪ এপ্রিল প্রধামন্ত্রীর বললেন যুদ্ধাপরাধীর বিচার বাধাগ্রস্থ করতেই বিরোধী দল ইলিয়াস আলী ঘটনা ঘটিয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর পরপর দু’টি উক্তিই অত্যন্ত জঘন্য ও নিন্দনীয়। এ গুমের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকারের প্রধান ও তার মন্ত্রীসভঅর সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্য তোতা পাখির মত একেই সুরে বাঁধা যা বলা জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে ইলিয়াস উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট সংস্থা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী ও তার দলের মন্ত্রীদের বক্তব্যের ও মতের বিরুদ্ধে তদন্ত করা তাদের কারো সাধ্য নেই। ২৬ এপ্রিল সকালে ইলিয়াস গুম হওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশারফ বলেছেন, ইলিয়াস আলী উদ্ধারই সরকারের একমাত্র প্রায়োরেটি নাথিং এল্স্। আমরা এ লক্ষ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি, অচিরেই তিনি জীবিত অবস্থায় আমাদের সামনে আনবেন।২৬ এপ্রিল বিকেলে সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের রেশ ধরে ১৮ দলীয় জোট নেতৃবৃন্দ বলেন, ইলিয়াস আলীর খোঁজ সরকার জানে আশরাফের বক্তব্যই প্রমাণ।

যে কারণে জনমনে অনেকগুলি প্রশ্ন:
ইলিয়াস নিখোঁজ হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তার উপজেলা বিশ্বনাথে আওয়ামী লীগ নেতা বশরত আলী ১১ বছর আগের ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী ও ভাংচুরের মামলা করার সঙ্গে নিখোঁজের সূত্র রয়েছে। যেখানে ইলিয়াস নিখোঁজে বিশ্বনাথ সিলেটসহ সারাদেশে উত্তাল সেখানেই হাই কমান্ডের নির্দেশ ব্যাতিত এই ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হতে পারে না। নাগরিক সমাবেশে এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেন গুম হওয়ার পর ১০ বছর আগের ঘটনা নিয়ে মামলায় সরকারের নাটক প্রমাণিত হয়। ২৩ এপ্রিল সমকাল পত্রিকায় লীড নিউজ ‘১০ শর্তমানলে মুক্তি ইলিয়াস আলীর’। ২৪ এপ্রিল আমার দেশ পত্রিকায় ৭ পাতাব্যাপি নাগরিক প্রতিক্রিয়া ‘সরকারের এজেন্টরাই ইলিয়াসকে গুম করেছে’ শিরোনামে এক লেখায় আহম্মদ কালাপাড়া, পটুয়াখালী তারমতে ভারতের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১০০ দুর্ধর্ষ কমান্ডা মাঠে এদের ট্রেনিং দিয়েছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। এরা সবাই আওয়ামী লীগের ক্যাডার।
সম্প্রতি বিভিন্ন ব্লগে ও বিদেশী সংবাদ সংস্থা এ ভয়ংকর চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকার নিশ্চুপ। এর প্রমাণ স্বরূপ উল্লেখ করতে চাই- সম্প্রতি প্রথম আলো লীড নিউজে প্রকাশিত হয় সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই সহকারী পরিচালক পদে চাকুরী নিয়োগে ছাত্রলীগের ক্যাডারদেরকে নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগদান করা হয়। বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসসহ সর্বত্র ছাত্রলীগের ক্যাডার ব্যতিত চাকুরী পাওয়া দূরহ। গুম হওয়ার তিনদিন পর র‌্যাব ইলিয়াস আলীর মামলা তৎপর হতে দেখা যায়। পত্রিকায় দেখলাম ঢাকাসহ সারাদেশে নিষ্ফল অভিযান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের মুখপত্র হানিফ বলেন, ইলিয়াসের খোঁজ করা বিএনপির মূল উদ্দেশ্য নয়, উদ্ধারে বিরোধীদল সরকারকে সহযোগিতা করছে না। হরতালের কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে আরো অনেক সস্তা ও মূখরোচক কথা একের পর এক বলে যাচ্ছেন। আসলে তাদের বক্তব্যে ‘ডালমে কুচ কালা হায়’।

প্রত্যক্ষদর্শী ৪ জনের কোন খোঁজ পাচ্ছেনা পরিবার- দারোগা ছুটিতে কেন?
ইলিয়াস আলী অপহরণের ঘটনার ১ দিন পর হতে প্রত্যক্ষদর্শী সোহের রানাকে নিয়ে পুলিশের কানামাছি খেলা। সাউথ পয়েন্টের স্কুলের সামনে নির্মাণাধীন ভবনের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী লুৎফুর রহমানের সাউথ পয়েন্টের প্রত্যক্ষদর্শী গার্ড রুহুল আমিন, প্রত্যক্ষদর্শী ভাঙ্গারী কুড়ানো রনির হদিস নেই পরদিন থেকেই। রনি গুমের ঘটনা তার মোবাইলে ভিডিও করেছিল বলে একাধিক পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। এদের মধ্যে প্রত্যক্ষদর্শী গার্ড বিভিন্ন মিডিয়ার সাক্ষাতে বলেন, ঘটনার সময় ইলিয়াসের গাড়ীর সামনেও পিছনে পুলিশের গাড়ী দাঁড়ানো ছিল। এ এস আই মাহবুব ঘটনার পর পর কলেরা হাসপাতালে ভর্তি হল। পরে সেখান থেকে ছুটিতে চলে যান। জলখাবার হোটেল ও আশে পাশে প্রত্যক্ষদর্শীরা হয়রানি ও জীবনের ভয়ে মুখ খুলছে না বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।

ক্লু নষ্ট! ঢিলেঢালা উদ্ধার অভিযান:
ঘটনার রাতে ইলিয়াস আলী রূপসী বাংলা হোটেল হতে মহাখালী আমতলী পর্যন্ত কাদের গাড়ী ফলো করেছে রাস্তায় সিসি ক্যামরা তা ধরা পড়ার কথা। এ ব্যাপারে পরিবার থেকে তদন্ত করার কথা বলা হলেও তা করা হয় নাই কেন? বনানী ২নং রোডে যেখান থেকে ইলিয়াস আলীকে অপহরণ হয়েছে ঐ সময়ে এলাকায় কারা কোন মোবাইল ব্যবহার করেছেন তা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্রেকিং করে গুমের সাথে কারা জড়িত চিহ্নিত করা অবশ্যই সহজ।তার প্রচেষ্টা কেন করা হয় নাই তা জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অপহরনের স্থানের আলামত তাৎক্ষনিক রক্ষানাবেক্ষনের কোন ব্যবস্থা নেইনি তদন্তকারী দল। দিন পর তাদেরকে ঢিলেঢালা তৎপর হতে দেখা যায়।
ইলিয়াসকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের-প্রধানমন্ত্রী
নিখোঁজ হওয়ার ১৫ দিনেও স্বামীর সন্ধান না পেয়ে গত ২ মে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহশিনা বুশদির লুনা, দুই ছেলে আব্বার ইলিয়াস (১৮) লাবিব সারা (১৬) মেয়ে সাইয়ানা নাওয়াল (৮) ইলিয়াসের ভাই আজগীর আলী বোন দিনারা শারমীন, পরিবারের কনিষ্ঠ মোঃ রফিক হেলালী। সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী ইলিয়াস আলীকে খুঁজে করার সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে লুনাকে আশ্বস্ত করেছেন এবং বলেছেন তাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের। এ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে জানান প্রধানমন্ত্রী। বাস্তবে ফল দেখা যায় উল্টো। ইলিয়াস আলী গুমের ঘটনায় আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্যে সে সময়ে ২৯ ও ৩০ এপ্রিলে হরতালে সচিবালয়ে বোমা হামলা ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ী পোড়ানো ও ভাংচুরের মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বিএনপির মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও ১৮ দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শাহবাগ ও তেজগাঁও থানায় পৃথক দুটি মামলা যথাক্রমে ২৮ জন ও ৪৪ জন অজ্ঞাতনামা আরো অনেক আসামীকে জন নিরাপত্তা দ্রুতবিচার আইনে মামলা রুজু করে সরকার বিরোধী আন্দোলন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের এবং ইলিয়াসের সন্ধানসহ সকল আন্দোলনকে স্তব্দ করার এবং আজীবন ক্ষমতায় থাকার কুট-কৌশল হিসাবে প্রায় অর্ধশত নেতাদের জেলে আটক রেখেছেন। তাতে সরকার ৫ জানুয়ারীর ভোটার বিহীন নির্বাচন করে একদলীয় কায়দায় দেশ পরিচালনা করে গণতন্ত্রকে সমাধি করেছেন। বর্তমানে সরকারের জনপ্রিয়তা শূন্যের কৌঠায়। জনগন মনে করে, নিরোপেক্ষ নির্বাচনের মাধমে সম্ভব জনগনের অধিকার, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা সম্ভব, দেশে বন্ধ হবে হত্যা -গুম-খুন-অত্যাচার নির্মম নির্যাতন। বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বেলায় এমন অত্যাচার ও নির্যাতন যা এরশাদের সামরিক শাসনে করা হয় নাই।

ফুটনোট:
৫ বছরে দিন পার হলো ইলিয়াছ নিখোঁজের জট খুলছে না।
৫ বছরের অধিক সময় সাগর রুনি হত্যার কুল কিনারা নাই।
সৌদি কুটনৈতিক খালাক হত্যার কারণ অস্পষ্টই থাকলো।

ঐ সময় জাতীয় নির্বাচনের সময় বাকি ছিল দেড় বছর। দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী দিন দিন প্রবল হচ্ছে। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের আতংকিত করে আন্দোলন থেকে সরাতে ইলিয়াস গুম শুরু হওয়ার আরেকটি কারণ বলে অনেকে মনে করেন। ৩ এপ্রিল ঢাকা উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সিলেট জেলা ছাত্রদলের দিনার ও জুমায়েন। তারা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ইলিয়াস আলী দাবী করে আসছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী তাদের গুম করেছে। তাদের সন্ধানে সিলেট সভা বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন ইলিয়াস। ধারণা করা হচ্ছে এতে কোন মহল তার উপর অখুশি হন।ilias-ali
১১ এপ্রিল ২০০২ সাগর রুনি হত্যার রহস্য উৎঘাটনে পরদিন পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ বলতে থাকে হত্যা রহস্য বেরিয়ে আসবে অল্প সময়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারী গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে, হায় কপাল শেষ পর্যন্ত ডিবি পুলিশ সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়ে হাইকোর্টে ক্ষমা প্রার্থনা করলো। খুনের রহস্য অজানা থেকে গেল। কেউ কেউ মনে করে উচ্চ মহলের দুর্নীতির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সাগর-রুনির ল্যাপটপে বিদ্যামান থাকায় তাদেরকে পৃথিবী হতে সরিয়ে দেয়া হয়। কারো মতে সরকার ও তার প্রভূদদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বার্থবিরোধী লেখা কোন সাংবাদিক প্রকাশ করলে তাদের পরিণতি হবে সাগর রুনির মতো। সাংবাদিকদের উপর এটি একরকম থ্রেট বলা যেতে পারে।
কূটনৈতিক খালাফ গুমে এখনো হত্যার রহস্য উৎঘাটিত হয়নি। সষ্যের মধ্যে ভূত, ফলে যা হওয়ার তা হচ্ছে। মধ্যে প্রাচ্যে আমাদের শ্রমবাজার, ধ্বংস করার জন্য প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্র দীর্ঘ একযুগ থেকে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তার ধারাবাহিকতায় খালাফ খুন হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
১৭ মে মধ্য রাতে ইলিয়াসের বাসভবনে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে জোর করে ‘সিলেট হাউজে’ ঢুকার চেষ্টার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অবিশ্বাস ও নতুন ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। সর্বশেষ ইলিয়াস ইস্যুতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লেজে গোবরে অবস্থা তৈরি করেছে। যার সমাধান জীবিত ইলিয়াসকে ফেরত পাওয়া। তা এখনো সকলের কাম্য।
বর্তমান সরকারের দেশ পরিচালনা সবদিকে মাথা ব্যাথা। তারা মাথা ব্যাথার ঔষধ না দিয়ে মাথা কেটে ফেলার সর্বনাশা খেলায় মত্ত। যা গণতন্ত্র, দেশের স্বার্বভৌমত্ব জন্য বিপদজনক। জনগণ মনে করে সরকার যদি একনায়কতন্ত্র, পেশীবাদী চরিত্র (যা- ৭২-৭৫ পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল) তা পরিহার করে যেখানে সমস্যা সেখানে সমাধান করে নাক কেটে ফেলার ভয়ঙ্কর কর্ম থেকে বিরত থাকবে। বিরোধীদলের যৌক্তিক দাবী ইলিয়াস আলীকে জীবিত উদ্ধার করে ফেরত দিবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবী মেনে নিবে। ১৮ দলেরসিনিয়র নেতাকর্মীদেরকে মিথ্যা মামলা হতে মুক্তি দিবে। এতে গণতন্ত্র রক্ষা পাবে এবং মানুষ শান্তিতে থাকবে দেশ এগিয়ে যাবে। নচেৎ ১/১১র চাইতেও সর্বনাশা দিন অপেক্ষা করছে। ১৯ মে’১২ হতে ইলিয়াসের বাসায় সিসি ক্যামেরা বসিয়েছে। জনগণ মনে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরকার হাতিয়ার হিসাবে বিরোধী দলকে দমনে ব্যবহার না করে, তাদেরকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়ে তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে দিলে গুম ও খুন ঠেকাতে ঘরে ঘরে সিসি ক্যামেরার প্রয়োজন হবে না। দেশের মানুষ এখন খুন আর গুমের রাজ্যে বসবাস করছে। দেশর জনগন ৫ বছরে প্রতিদিনেই ইলিয়াছ আলীসহ সকল গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের সন্ধান চায়। সন্ধানের সকল ব্যর্থতার দায় সরকাকে বড় ধরনের খেশারত দিতে হবে।

লেখক-কলাম লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী

Mintubalshid66@gmail.com

 


Spread the love

Leave a Reply