বৃহত্তর সিলেটের প্রথম দৈনিক-সিলেটের ডাক এর ইতিকথা
মুহাম্মদ ফয়জুর রহমান:
একটি দৈনিক কাগজ চাই। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলবাসীর সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, অভাব-অভিযোগ এবং সুদীর্ঘকালের বঞ্চনা-অপ্রাপ্তির কথা জানান দেয়ার জন্য একটি সার্থক দৈনিক পত্রিকা চাই। এ অঞ্চলের গরীয়ান ইতিহাস-ঐতিহ্য, সম্পদ-সম্ভাবনা, সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং মনন-মেধার লালন ও বিকাশে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবে–এমন একটি দায়িত্বশীল মুখপত্র চাই।
দেশের উত্তর-পূর্ব দিগন্তে এক অমেয় আলোর উৎসভূমি সিলেট। একটি দৈনিকের অভাবে এ অঞ্চলের অগণিত সংবাদপত্র পাঠক হৃদয়-মন তখন …অতৃপ্ত। কবে আসবে একটি দৈনিক? অগণিত মানুষের মনে বিরাজ করছে এমন আহাজারি।
সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আড্ডায়, সূধী সভায়, ঘরোয়া বৈঠকে কিংবা চায়ের টেবিলে প্রায়শই আলোচনা হয় বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু কার আছে সে হিম্মত– যিনি এগিয়ে আসবেন দৃপ্ত পদভারে প্রত্যাশা পূরণের অগ্রদূত হয়ে ? সুদীর্ঘকালের লালিত স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নে কোন সাহসী বংশীবাদক বাজাবে প্রথম বাশিঁ ? ১৯৮৩ সালটি কেটে গেল এভাবেই।
আমি তখন ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র ‘দৈনিক দেশ’-এর বৃহত্তর সিলেট প্রতিনিধি। প্রায় প্রতিদিনই এ পত্রিকায় থাকতো সিলেটের একাধিক সংবাদ ও সংবাদচিত্র। ব্যাপক কাভারেজের জন্য সেসময় সিলেটে পাঠক নন্দিত দৈনিক দেশ-এর বাজার ছিল তুঙ্গে । প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, সেসময় জাতীয় দৈনিকের সংখ্যা যেমনি ছিল হাতে গোনা। সার্কুলেশনের দিক থেকে দৈনিক ইত্তেফাক-এর অবস্থান ছিল সিলেট সহ সমগ্র দেশের মধ্যে শীর্ষে। সেসময় সিলেটে ইত্তেফাক আসতো ১৬০০/১৭০০। আর দৈনিক দেশ এর প্রচার সংখ্যা ছিল ১৫০০ থেকে ২০০০-এর মধ্যে। তৃতীয় অবস্থানে ছিল দৈনিক সংবাদ। এরপর সরকারি মালিকানাধীন দৈনিক বাংলা (অধুনালুপ্ত)।
দৈনিক দেশ–এ সিলেটেকে ব্যাপকভাবে কাভারেজ, দায়িত্ব পালনে আমার আন্তরিক প্রচেষ্টা, সাংবাদিকতা পেশার প্রতি গভীর আগ্রহ ও কমিটমেন্ট, সিলেটের দৈনন্দিন ঘটনাবলী, সুখ-দুঃখ,হাসি-কান্না, আশা-আকাঙ্খার কথা সরকার তথা জাতীয়ভাবে উপস্থাপনে নিরন্তর প্রয়াস এবং সিলেটে পত্রিকাটির ইর্ষণীয় পাঠকপ্রিয়তার কারণেই হয়তো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শুভাকাঙ্খি সিলেট থেকে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশে উদ্যোগী হওয়ার জন্য আমাকে অনুরোধ করেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিক ঘরোয়া আসরে শুভানুধ্যায়ীদের সাথে হালকা আলোচনা ও মতবিনিময় হলো। এব্যাপারে কিছুটা উদ্দীপ্ত হলাম।
১৯৮৪ সালের জানুয়ারির প্রারম্ভে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি, প্রবীণ আইনজীবী ও সেনা শাসক লে. জেনারেল এরশাদের নবগঠিত রাজনৈতিক দলের বৃহত্তর সিলেট জেলা আহ্বায়ক দেওয়ান গোলাম জিলানী চৌধুরীর সাথে আলোচনা ও মতবিনিময় করি সিলেটবাসীর প্রত্যাশা এবং আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন করা যায় কিভাবে? আলোচনায় আমরা একমত হলাম যে, সামরিক শাসক এরশাদ সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতার ব্যক্তি তদানীন্তন উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান ও যোগাযোগ মন্ত্রী রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খান (এম.এ খান নামে সমধিক পরিচিত) এর পরবর্তী সিলেট সফরকালীন তার সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশে প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমোদনের ব্যপারে তার সহযোগিতা চাওয়া হবে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এম এ খান বরাবরে একটি আবেদন তৈরী করে রাখা হয়। … চলবে