মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের প্রতি ইরা্নের আহবান
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ দেরিতে হলেও রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘকে আহ্বান জানিয়েছে ইরান। তেহরানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পার্সটুডের এক খবরে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ‘সংঘবদ্ধ সহিংসতা’র অভিযোগ তুলে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পার্সটুডে জানিয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে লেখা এক চিঠিতে মিয়ানমারের মুসলমানদের ওপর দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘবদ্ধ সহিংসতার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন জারিফ।
জাতিসংঘ মহাসচিবকে লেখা চিঠিতে জাওয়াদ জারিফ বলেন, মিয়ানমারে এখনই রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সহিংসতা বন্ধ করা, দুর্গত মানুষদের জন্য মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং এই সংকটের একটি টেকসই সমাধান করা জরুরি হয়ে পড়েছে এবং এসব কাজে জাতিসংঘকে তড়িৎ পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার চিঠিতে আরও বলেন, “মিয়ানমারের দুর্বিসহ পরিস্থিতির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারে জাতিসংঘ দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নেবে এবং প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করছি। ”
সাম্প্রতিক ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের লক্ষ্যে সেনা অভিযান শুরুর কয়েকদিনের মাথায় ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গা’রা ২৪টি পুলিশ চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের সমন্বিত হামলায় অন্তত ১০৪ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়ে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরদার করে সরকার। এরপর থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশছে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ছেন সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হচ্ছে তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে মানুষকে। আহত শরণার্থী হয়ে তারা ছুটছে বাংলাদেশ সীমান্তে। গত দুই সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের মুখে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
এতো অল্প সময়ে এই বিরাট সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করায় বাংলাদেশে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। প্রয়োজনীয় খাবার আর পানির অভাবে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাদের জীবন। কোনওরকমে নিজেদের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিলেও তারা ক্ষুধা-তৃষ্ণার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাওয়ার পথ পাচ্ছে না। এমন বিপন্নতার মধ্যেই জাতিসংঘ বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৫৭ কোটি ১২ লাখ টাকার সহায়তা ঘোষণা করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। তবে এই সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা স্পষ্ট স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, এই বিপুল পরিমাণ মানুষকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে তারা অক্ষম।